বিশ্বকাপ শেষেই ভেঙে ফেলা হবে কাতারের এই স্টেডিয়াম!
কাতার ফুটবল বিশ্বকাপের মোট আটটি স্টেডিয়ামের প্রতিটি স্টেডিয়ামই স্থাপত্যশৈলীর দিক থেকে সারা বিশ্বের নজর কেড়েছে। তবে সকল স্টেডিয়ামকে ছাপিয়ে দর্শকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে 'স্টেডিয়াম ৯৭৪'। কেননা এই স্টেডিয়ামটি তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছে ৯৭৪টি কন্টেইনার। সম্প্রতি কাতার সরকার জানিয়েছে, বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হওয়ার পর খুব দ্রুতই কন্টেইনারগুলো সরিয়ে নিয়ে এ স্টেডিয়াম ভেঙে ফেলা হবে।
স্টেডিয়াম ৯৭৪ ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে সম্পূর্ণরূপে অপসারণযোগ্য প্রথম স্টেডিয়াম। এ স্টেডিয়ামটি অপসারণের পর কাতার সরকার কন্টেইনারগুলো উন্নয়নশীল দেশে অনুদান হিসেবে দেবে। উন্নয়নশীল দেশগুলো খেলাধুলার উন্নয়নে সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহার করবে এই কন্টেনারগুলো। আর এ সুযোগটি লুফে নিতে বাংলাদেশও চেষ্টা চালাচ্ছে। কাতার দূতাবাসের মাধ্যমে দেশটির সরকারি পর্যায়ে স্টেডিয়াম ৯৭৪-এর কন্টেইনারগুলো অনুদান পেতে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন।
বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ বলেন, "সম্প্রতি আমরা বাফুফের পক্ষ থেকে অফিসিয়ালি কাতারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। স্টেডিয়াম ৯৭৪ এর পুরোটা অবশ্য পাওয়া যাবে না। যদি সেটার কিছু অংশ আমরা পাই তাহলে আমাদের জন্য ভালো হবে। যেহেতু আমাদের দেশে প্রপার ফিফা কমপ্ল্যান্ট স্টেডিয়ামের অভাব রয়েছে।"
মেসি-এমবাপ্পে-নেইমার-রোনালদো-লেভানদোফস্কির স্মৃতি বিজরিত এ স্টেডিয়ামটির নামকরণ ৯৭৪ কেন সেটা নিয়েও দর্শকদের মধ্যে ছিল নানা কৌতূহল। ৯৭৪ হলো কাতারের ফোন কলের ডায়ালিং কোড নম্বর। আর তাই কাতার সরকার খুবই বিচক্ষণতার সাথে এই স্টেডিয়ামটির নামের সাথে ৯৭৪ জুড়ে দিয়ে নিজেদের ডায়ালিং কোডকে পুরো বিশ্ববাসীর কাছে সফলভাবে তুলে ধরতে পেরেছে।
এছাড়াও দেশটির রাজধানী দোহার কেন্দ্র থেকে ১০ কিলোমিটার পূর্বে আবস্থিত চেক পারস্য সাগরের তীর ঘেঁষে এ স্টেডিয়ামটি তৈরি করা হয়েছে। যার ফলে কাতার যে সমুদ্রপথে বাণিজ্যর ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও আফ্রিকার মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ হাব হিসেবে কাজ করে সেটিও স্টেডিয়ামটির তৈরির মাধ্যমে সফলভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব ও শেষ ষোলো মিলিয়ে মোট সাতটি ম্যাচ স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গ্রুপ পর্বের মেক্সিকো বনাম পোল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে এই স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের খেলা গড়ায়। এরপর বিশ্ব ফুটবলের তিন মহাতারকা লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও নেইমারের ঝলক দেখেছে স্টেডিয়াম ৯৭৪। এমনকি অন্য দুটি পৃথক ম্যাচে কিলিয়ান এমবাপ্পে ও রবার্ট লেভানদোফস্কি মতো তারকাও এই মাঠে খেলে গিয়েছেন। সর্বশেষ ৫ ডিসেম্বর ব্রাজিল বনাম দক্ষিণ কোরিয়ার শেষ ষোলোর রোমাঞ্চকর ম্যাচটি দিয়ে শেষ হয়েছে এই মাঠের বিশ্বকাপ যাত্রা।
বহু আলোচনা-সমালোচনার পর ২০১০ সালে বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পায় কাতার। এরপর ২০১৮ সালে এ স্টেডিয়ামটি তৈরির কাজ শুরু হয়। প্রথমে রাশ আবু আবুদ স্টেডিয়াম নামে নির্মাণ শুরু হলেও পরবর্তীতে বিশ্বকাপ ভেন্যুর তালিকায় এটি 'স্টেডিয়াম ৯৭৪' নামেই যুক্ত হয়। প্রায় ৪০ হাজার আসন বিশিষ্ট এই স্টেডিয়াম তৈরি করতে কাতার সরকারের লেগেছিল প্রায় তিন বছর।
চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর এই স্টেডিয়াম জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। কাতার বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে আরব কাপের ৬টি ম্যাচ আয়োজিত হয়েছিল স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ । এছাড়াও বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে সৌদি আরব, কাতার, জর্ডান, সুদানের মতো দেশ এখানে খেলেছে।
সূত্র: মার্কা