Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
    • ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২২
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Monday
December 04, 2023

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
    • ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২২
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
MONDAY, DECEMBER 04, 2023
জেমস বন্ড নাম চুরি করেছি: ইয়ান ফ্লেমিং 

ইজেল

সৈয়দ মূসা রেজা
25 September, 2023, 01:05 pm
Last modified: 25 September, 2023, 01:34 pm

Related News

  • ২০২৪-এ দর্শকের তুমুল আগ্রহে রয়েছে যেসব হলিউড সিনেমা
  • আইএমডিবি’র জরিপে এ বছরের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভারতীয় সিনেমা-সিরিজ যেগুলো
  • জেমস বন্ডের পরবর্তী সিনেমা পরিচালনার গুঞ্জনে মুখ খুললেন ক্রিস্টোফার নোলান
  • গদার, তারকোভস্কি, তোরনাতোরে যখন ধানমন্ডির আড্ডার মধ্যমণি ছিলেন
  • অবশেষে আজ সন্ধ্যায় বাংলাদেশে মুক্তি পাচ্ছে ‘জওয়ান’

জেমস বন্ড নাম চুরি করেছি: ইয়ান ফ্লেমিং 

জেমস বন্ডের নাম অজানা মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। পড়াশোনা করে, সিনেমা দেখে, খাইদাই ঘুরে বেড়ায় গোত্রের সাধারণ মানুষের কথাই বলছি।  কিন্তু এ কথা কয়জনে জানেন যে জিরো জিরো সেভেন চরিত্রের জন্য নামটি চুরি করা হয়েছিল! চুরিটি করেছিলেন খোদ ইয়ান ফ্লেমিং! নামে নামে যমে টানাটানির মতো বিপদে পড়তে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলা প্রবাদে। কিন্তু নামে নামে খ্যাতিতেও ভাসিয়ে দিতে পারে। সে কথা প্রবাদ সৃষ্টিকারীরা হয়তো ভাবতেও পারেননি।
সৈয়দ মূসা রেজা
25 September, 2023, 01:05 pm
Last modified: 25 September, 2023, 01:34 pm

ড. নো ছবির পোস্টার/ ছবি- সংগৃহীত

১.

জেমস বন্ডের নাম অজানা মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। পড়াশোনা করে, সিনেমা দেখে, খাইদাই ঘুরে বেড়ায় গোত্রের সাধারণ মানুষের কথাই বলছি।  কিন্তু এ কথা কয়জনে জানেন যে জিরো জিরো সেভেন চরিত্রের জন্য নামটি চুরি করা হয়েছিল! চুরিটি করেছিলেন খোদ ইয়ান ফ্লেমিং! নামে নামে যমে টানাটানির মতো বিপদে পড়তে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলা প্রবাদে। কিন্তু নামে নামে খ্যাতিতেও ভাসিয়ে দিতে পারে। সে কথা প্রবাদ সৃষ্টিকারীরা হয়তো ভাবতেও পারেননি। এমন খ্যাতি মানেই সুখ কি না, সে প্রশ্নও স্বাভাবিক সূত্রেই উঠবে।  

২.

ফোনের শব্দে ঘুম ভাঙল জেমস বন্ডের। গভীর রাতের ফোনটি সন্দেহজনক। বুঝতে এক মুহূর্তও লাগল না। তারপরও ফোনটি ধরল। ওপাশ থেকে ভেসে এল নারী কণ্ঠ। জেমস বন্ড বলছেন- প্রশ্ন। তারপরই তরল দুষ্ট-হাসি। লাইন কেটে দেওয়ার শব্দও পাওয়া গেল। 

মধ্যরাতের এমন ফোন ফিলাডেলফিয়ার পক্ষীবিদের জন্য মোটেও কোনো আটপৌরে ঘটনা নয়। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দের কথা। বন্ড এবং তার স্ত্রী মেরির অবাক হওয়ার পালা। কেন এমন হচ্ছে, বুঝতে পারছেন না। বিষয়টা খোলাসা করল তাদের এক বন্ধু। ভোগ সাময়িকীকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ গুপ্তচর ঔপন্যাসিক ইয়ান ফ্লেমিং স্বীকার করেন, তার সৃষ্ট জিরো জিরো সেভেন দুর্ধর্ষ গুপ্তচর প্রবরের নামটি পাখিসংক্রান্ত বইয়ের লেখকের নাম থেকে চুরি করা হয়েছে। সাক্ষাৎকারে ঘটনার বিবরণে ফ্লেমিং বলেন, সত্যি জেমস নামের মানুষ আছে। তবে তিনি ব্রিটিশ নন, গুপ্তচরও নন, বরং মার্কিন অরনিথোলজিস্ট বা পক্ষীবিদ। তিনি আরও বলেন, তার লেখা একটি বই আমি পড়েছি। আমার উপন্যাসের নায়কের জন্য সুন্দর নাম খুঁজছিলাম। সে সময় বইটির কথা মনে পড়ে। আর সেখান থেকেই নামটি বেছে নিই।   

আয়ান ফ্লেমিং (ডানে) এবং জেমস বন্ডের (বাঁয়ে) একবারই দেখা হয়েছিল জামাইকার গোল্ডেনআইয়ে, ১৯৬৪

ক্যারিবীয় সাগরাঞ্চলে এক দশক অভিযান চালিয়েছেন, তারই ফসল হিসেবে ১৯৩৬-এ প্রকাশিত হলো 'বার্ডস অব দ্য ওয়েস্ট ইন্ডিস'। ৪৬০ পাতার ফিল্ড গাইডে পাখির ১৫৯টি সাদা-কালো চিত্র রয়েছে। পাখি বিশেষ করে ক্যারিবীয় অঞ্চলের পাখি নিয়ে যাদের আগ্রহ আছে, তাদের কাছে এ বই তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ফ্লেমিংয়ের কাছেও ভালো লেগেছিল বইটি। সে সময় তিনি জ্যামাইকাতে বসবাস করতেন। 

জেমস বন্ডের পরবর্তী ছবি হয়তো ২০২৫-এর আগে আসবে না। নতুন ০০৭ কে হবেন? কোনো নারী নাকি পুরুষ? এ নিয়ে বেশ খানিকটা বিতর্ক চলছে। কেউ কেউ ভাবছেন নো টাইম টু ডাইয়েরে নোমি চরিত্রাভিনেত্রী লাশানা লিঞ্চকে হয়তো ০০৭ হিসেবে দেখা যাবে। জেমস বন্ড চলচ্চিত্রের দীর্ঘদিনের প্রযোজক বারবারা ব্রোককলি বলেছেন, বন্ডকে পুরুষ চরিত্র হিসেবেই তৈরি করা হয়েছে। এ চরিত্র বদলের কোনো কারণ আপাতত নেই। তারপরও নটে গাছ মুড়াইনি। এই তর্ক-বিতর্কেরে সময়েই বরং আসল জেমস বন্ডের দিকে নজর ফেরানো যাক। বা নজর দেওয়ার লাগসই সময়। স্মিথসোনিয়ান সাময়িকীতে বন্ডকে নিয়ে হু ওয়াজ দ্য রিয়েল জেমস বন্ড নামের নিবন্ধ লেখেন রিয়েল জেমস বন্ডের লেখক জিম রাইট।

তিনি জানান, কয়েক বছর আগে ওই পক্ষীবিদকে নিয়ে প্রকাশিত খবরের কাগজের কলাম নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছিলাম। সে সময় তার কাহিনি পড়ে গভীরভাবে আপ্লুত হই। জেমস বন্ড ফ্র্যাঞ্চাইজিতে তার নাম প্রসঙ্গক্রমে বলা হলে এই বিচক্ষণ এবং অধ্যবসায়ী পক্ষীবিদের প্রতি অবিচার করা হবে। লেখক এবং পাখি নিয়ে আমার আগ্রহের ভিত্তিতেই রচনা হলো দ্য রিয়েল জেমস বন্ড। 

জেমস বন্ড সিরিজের প্রথম বই ক্যাসিনো রয়্যাল প্রকাশিত হয় ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে। জ্যামাইকার শীতনিবাস থেকে বইটা লেখেন ইয়ান ফ্লেমিং। সত্যিকার একজন পক্ষীবিদের নামের ভিত্তিতে তার রচিত চরিত্রের নাম দেন জেমস বন্ড। গুপ্তচরের এ নাম আমেরিকার ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়তে প্রায় এক দশক লেগেছিল। ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে অধুনালুপ্ত লাইফ সাময়িকীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, 'ফ্রম রাশিয়া উইথ লাভ' তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির অন্যতম প্রিয় বই। এ প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর জেমস বন্ড সিরিজের জনপ্রিয়তা বাড়ে। এদিকে পক্ষীবিদ জেমস বন্ড এবং তার স্ত্রী রাত-বিরাতে গুপ্তচর কাহিনির ভক্তদের ফোনের উৎপাতে পড়তে শুরু করেন।

পক্ষীবিদ জেমস বন্ড জিম নামেই ঘনিষ্ঠ মহলে পরিচিত ছিলেন। তিনি বন্ড সিরিজের বই পড়ার ধারও ধারতেন না। কিন্তু স্ত্রী মেরি এ সিরিজের বই পড়তে পছন্দ করতেন। ফ্লেমিংয়ের কাছে লেখা চিঠিতে রসিকতা করে অভিযোগ করেন যে তার ০০৭ সিরিজের নায়কের নাম রাখতে গিয়ে তার স্বামীর নামটি চুরি করা হয়েছে। 

দি রিয়েল জেমস বন্ড, জিম রাইটের বই

নাম চুরির অপরাধ থেকে মুক্তি পাওয়ার অভিলাষে ফ্লেমিং রক্ত-মাংসের জেমস বন্ডের কাছে একটি চিঠি লিখেন। তাতে তিনটি প্রস্তাব দেন। ০০৭-এর এজেন্টের নাম জেমস বন্ড রাখার প্রতিশোধ হিসেবে পক্ষীবিদ ইচ্ছে করলে ইয়ান ফ্লেমিংয়ের নামটি যেকোনো কিছুর নাম রাখার বেলায় ব্যবহার করতে পারেন। এমনকি কোনো ভয়ংকর প্রজাতির পাখির নামও ইয়ান ফ্লেমিং রাখতে পারেন। এ ছাড়া বন্ড দম্পতিকে জ্যামাইকায় নিজ আবাসে বেড়িয়ে যাওয়ার আমন্ত্রণও জানান।      

জিম (পক্ষীবিদ জেমস বন্ড) এবং মেরি বন্ড আমন্ত্রণ কবুল করেন। ১৯৬৪-এর ৫ ফেব্রুয়ারি জ্যামাইকায় ফ্লেমিংয়ের বাসভবনে হঠাৎ করেই হাজির হলেন বন্ড দম্পতি। প্রথমে ফ্লেমিং বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। নাম চুরির অপরাধে তাকে আদালতে নিয়ে তোলে কি না, তা নিয়ে বেশ চিন্তায় ছিলেন। না বন্ড অমন কর্ম করলেন না। নিজ নাম ০০৭ এজেন্টের নাম হিসেবে ব্যবহার করায় ফ্লেমিংয়ের বিরুদ্ধে পুঞ্জিভূত অভিযোগ ছিল জেমস বন্ডের। এ সত্ত্বেও দুই লেখকের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হলো। তারা দুজনে চমৎকার সময় কাটালেন। 

পরবর্তীকালে এক সাক্ষাৎকারে পক্ষীবিদ জেমস বন্ড স্বীকার করেন, আমি ইয়ান ফ্লেমিংকে বলেছি যে আপনার লেখা বইগুলোর একটাও আমি পড়িনি। আমার গিন্নি আপনার সব বইই পড়ে। আমি মোটেও আপনার ভক্ত হওয়ার ভণিতা করতে পারব না। ফ্লেমিং এ কথার জবাব বেশ গুরুত্বের সাথেই দেন। তিনি বলেন, না না। আমার বই না পড়াটা দোষের কিছু নয়। বন্ড দম্পতি কয়েক ঘণ্টা পরে ফিরে আসেন। বিদায়কালে তাদের সদ্য প্রকাশিত 'ইউ অনলি লিভ টোয়াইস' বইটার ঝকঝকে একটি কপি উপহার দেন। বইটার ভেতরের মলাটে বড় বড় করে লেখেন, 'সত্যিকার জেমস বন্ডকে উপহার দিচ্ছে তার নাম চোর ইয়ান ফ্লেমিং, ফেব্রুয়ারি ৫, ১৯৬৫ (আনন্দময় মহান একটি  দিন)।'

আয়ান ফ্লেমিং ইউ অনলি লিভ টুয়াইস বই জেমস বন্ডকে উপহার পাঠান

ফ্রি লাইব্রেরি অব ফিলাডেলফিয়াতে জুমের মাধ্যমে একটি আলোচনার প্রস্তুতি হিসেবে কিছু গবেষণা ও ঘাঁটাঘাঁটি করেন জিম রাইট। সে সময় মেরি বন্ডের লেখা একটি চিঠির কার্বন কপি তার নজরে আসে। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে চিঠিটি গ্রন্থাগারটির বিরল পুস্তক বিভাগের প্রধানকে লিখেছিলেন মেরি। মেরি চিঠিতে বলেন, যে সত্যি কথাটি কখনোই প্রকাশ করেনি- তা হলো মার্কিন জে বি-এর (মার্কিন নাগরিক পক্ষীবিদ জেমস বন্ড, সংক্ষেপে জে বি) নাম চুরি করায় ফ্লেমিংয়ের ওপর ভীষণ চটে ছিলাম। এদিকে জেমস বন্ড চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়েই জেমস বন্ড শব্দটি নোংরা শব্দের সমার্থক হয়ে উঠতে থাকল। নিজের মনে শান্তির জন্য ফ্লেমিং এবং জে বি-এর মধ্যে সাক্ষাৎ হোক তা চাচ্ছিলাম। একজন ভালো মানুষের নামের কী দশা করেছে, ফ্লেমিং যেন সেটা বুঝতে পারেন, তাই এ সাক্ষাতের দরকার ছিল। ঠিকই জানতাম যে জিম নিজে থেকে এর বিরুদ্ধে কিছুই করতে যাবে না। এ রকম অবস্থায় পড়ার জন্য অস্বস্তিতে ভুগবে আর ফ্লেমিংকে অপছন্দ করবে মন থেকে। জ্যামাইকায় ফ্লেমিংয়ের সাথে খাবার খেতে পেরে মনে মনে শান্তি পেয়েছিলাম। 

এই সাক্ষাতের ছয় মাস পরে ফ্লেমিং মারা যান। ০০৭ সিরিজের তিন নম্বর ছবি 'গোল্ডফিঙ্গার' মুক্তি পাওয়ার কয়েক মাস পরই পরপারে চলে যান তিনি। অনেকেই মনে করেন, ০০৭ সিরিজের সেরা ছবি এটি। অড জব নামের এক ভিলেনের দেখা পাই। সিন কোনারি জেমস বন্ডের ভূমিকায় অভিনয় করেন। ছবিতে তার ব্যবহৃত অস্টিন মার্টিন ডিবি-৫ গাড়িতে তাক লাগানো অস্ত্রশস্ত্র, সাজ-সরঞ্জাম এবং যন্ত্রপাতি দেখানো হয়েছে। এ ছবিতেই শেকেন, নট স্টিয়ারড বা ঝাঁকিয়ো কিন্তু নাড়িয়ো না বলে প্রথম মার্টিনি পরিবেশন করার নির্দেশ দেয় বন্ড। এ ছাড়া শার্লি বাসির ব্রাসির টাইটেল সং-সহ সবকিছু মিলিয়ে ০০৭কে ঘিরে উন্মাদনাকে নতুন উচ্চতায় ঠেলে দেয় 'গোল্ডফিঙ্গার'। 

১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি পপ সংস্কৃতির জগতে সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থানটি দখল করে নেয় জেমস বন্ড। সবাই যেন বন্ড হতে চাইছে। বন্ড সিরিজের অনুকরণে তৈরি হয় টিভি শো এবং চলচ্চিত্র। ম্যাট হেলম থেকে স্টেফানি পাওয়াস পর্যন্ত সবাই মেতে ওঠে। দ্য গার্ল ফর্ম  ইউ.এন.সি.এল.ই শুরু হয় মার্কিন টিভি পর্দায়। ব্যবসায়ীরাও এ সুযোগকে ব্যবহার করেন দেদারছে। বাবলগাম কার্ড, ভদকা, আফটারশেভ এমনকি 'সোনার' অন্তর্বাস পর্যন্ত সব পণ্যের গায়ে সেঁটে দেওয়া হয় ০০৭!

জেমস বন্ডের লেখা বার্ডস অফ দি ওয়েস্ট ইন্ডিজ বইয়ের প্রথম সংস্করণ

এদিকে বাংলা ভাষায়ও বন্ডের ছায়ায় বিকশিত হলো গোয়েন্দা সাহিত্য। বাংলা ভাষা নতুন প্রাণ পায়। সাহিত্যের এই ধারাকে বাংলা ভাষায় প্রমত্তা নদীর মতোই প্রবাহিত করেন কাজী আনোয়ার হোসেন। 

ফ্লেমিংয়ের সৃষ্ট কাল্পনিক চরিত্র বিশ্ব তারকায় পরিণত হয়। অন্যদিকে রক্ত-মাংসের জেমস বন্ডকে অনাকাক্সিক্ষত রসিকতার কিংবা মশকরার মুখে পড়তে হয়। কিংবা ফ্লেমিংয়ের জেমস বন্ডের প্রতি ইঙ্গিত করে তাকে নিয়ে মজা লোটা হয়। হোটেলের কর্মীরা তার নাম শুনে আড় চোখে তাকায়। শুল্ক কর্মকর্তারা জানতে চান, পিস্তলটা কোথায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে। 

এরই মধ্যে মিসেস জেমস বন্ডের নামে হাউ জিরো জিরো সেভেন গট হিজ নেইম বইটি লিখলেন মেরি বন্ড। রক্ত-মাংসের জেমস বন্ড এবং ফ্লেমিংয়ের জেমস বন্ডের মধ্যে যোগসূত্র নিয়ে আরও মজা সৃষ্টি হলো এতে। ফ্লেমিংয়ের সৃষ্ট চরিত্রের সাথে নিজ স্বামী জেমস বন্ডের সম্পর্কের বিষয়কে দক্ষতার সাথেই ব্যবহার করেন মেরি বন্ড। এ নিয়ে নিজের লেখা বই ভালোই বিক্রি হতে থাকে। এ বাবদ প্রথম বইটি হলো 'হাউ জিরো জিরো সেভেন গট হিজ নেইম'।
'টু জেমস বন্ড উইথ লাভ' নামের বইতে মেরি বন্ড বলেন, সমস্যা হলো ফ্লেমিং দৃশ্যপট থেকে সরে গেছেন। তার সুনামের থলি গছিয়ে গেছেন জিমের হাতে। অথচ এভাবে খ্যাতির বোঝা বইতে মোটেও রাজি নন জিম। বরং আমার মানুষটা আড়ালে থাকাকেই পছন্দ করেন। 

১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ভালোবাসা দিবসে পরপারে পাড়ি জমালেন বন্ড। তার মৃত্যুর খবর দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ল। ফ্লেমিংয়ের কাল্পনিক ০০৭-এর চরিত্রের নামটি যে তার নামই চুরি করিয়ে বসিয়ে দেওয়া, সেটাও এভাবে প্রচার পাওয়ার অন্যতম কারণ। নিউ ইয়র্ক টাইমসের শিরোনামটি ছিল: ৮৯ বছরে মারা গেলেন পক্ষীবিদ জেমস বন্ড: ফ্লেমিং ০০৭-এর জন্য এ নামটিই বেছে নিয়েছিলেন।

পক্ষীবিদ জেমস বন্ডের সাথে ফ্লেমিংয়ের সৃষ্ট জেমস বন্ডের সংযোগের ঐতিহাসিক তথ্য ভিন্নভাবে তুলে ধরা হয় ২০০২ সালে মুক্তি প্রাপ্ত বন্ড-চলচ্চিত্র 'ডাই আদার ডে'তে। বন্ডের ভূমিকায় ছিলেন পিয়ার্স ব্রনসান। হাভানার একটি হোটেলে তাঁকে দেখা যায়, হাতে রয়েছে 'বার্ডস অব দ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ'-এর সর্বশেষ সংস্করণ। তিনি ছবির আরেক চরিত্র জিন্সকের ভূমিকায় অভিনয়কারী হ্যাল বেরিকে বলেন, তিনি একজন পক্ষীবিদ। পাখিবিষয়ক বিজ্ঞানী। জেমস বন্ড ফ্র্যাঞ্চাইজির মজা এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে ইতিহাসের একটা অধ্যায়কে তুলে ধরে।     

এখনো আদি ও অকৃত্রিম জেমস বন্ডের নাম শব্দ ধাঁধার মতো বিষয়ে তুলে ধরা হয়। ট্রিভিয়া জিনিয়াসের এক ধাঁধায় প্রশ্ন করা হয়, কার নাম থেকে জেমস বন্ডের নাম নেওয়া হয়েছিল? (ভবিষ্যতে বিসিএসেও এমন প্রশ্ন দেওয়া হলে অবাক হবে না অনেকেই।) তা যাক, তবে ওই ধাঁধার সঠিক জবাব দিতে পেরেছে অংশগ্রহণকারীদের মাত্র ২২ শতাংশ। সঠিক জবাবটি ছিল সি. পক্ষীবিদ।

৩.

কেবল ধাঁধার বেলায় আদি জেমসের নাম নেওয়া হবে, তা নয়। তার আরও বেশি কিছু পাওয়া উচিত। ফিলাডেলফিয়ার বিত্তশালী পরিবারে জেমস বন্ডের জন্ম ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে। ১৪ বছর বয়সে মা মারা যায়। বাবা আবার বিয়ে করেন। এরপর ইংল্যান্ডে চলে যায় কিশোর বন্ড। সেখানে হ্যারো এবং কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে ফেরেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। কিছুদিন ব্যাংকার হিসেবে চাকরিও করেন। পরে ফিলাডেলফিয়ার একাডেমি অব ন্যাচারাল সায়েন্সেসে যোগ দেন পক্ষীবিদ পদে। ১৯২০-এর দশক থেকে ১৯৬০-এর দশক পর্যন্ত এই পক্ষীমানব ওয়েস্ট ইন্ডিজে শতাধিক বৈজ্ঞানিক অভিযান পরিচালনা করেন। সমুদ্র-পীড়ার ধাত ছিল বন্ডের। জেট বিমানসেবা চালু হওয়ারও অনেক আগের কথা। ডাকবাহী স্টিমারে ক্যারিবীয় অঞ্চলে ঘুরেছেন। এক নাগাড়ে মাসের পর মাস ধরে চলেছে এ অভিযাত্রা। এখানেই শেষ নয়। 

ম্যারি বন্ডের লেখা বই

এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে যাতায়াতে মালবাহী জাহাজ, আমেরিকায় রাম পাচারকারী জাহাজ বা ক্যারিবীয় অঞ্চল থেকে আমেরিকায় যাতায়াতকারী কলাবাহী জাহাজ চড়তে হয়েছে তাকে। ক্যারিবীয় অঞ্চলে সে সময় এ ছাড়া আর কোনো জলযানের দেখা পাওয়া যেত না। যোগাযোগব্যবস্থা এতই করুণ ছিল যে স্থলপথে কখনো পায়ে হেঁটে কিংবা ঘোড়ার পিঠে করে পাড়ি জমাতে হতো। বরাতে যা জুটত, তা-ই খেতেন। খাদ্যের জন্য কখনো শিকারের ভরসা করতে হতো। অস্ত্রপাতি বলতে তার সম্বল ছিল: সেঁকোবিষ বা আর্সেনিক- সংগ্রহ করা পাখির মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার হতো। একটি চাকু। এবং একটি দোনলা বন্দুক। 

পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম পাখির নাম মৌমাছি বা বি হামিংবার্ড; হামিংবার্ড পরিবারের সদস্য জ্যামাইকার জাতীয় পাখি রেড-বিলড স্ট্রিমারটেইল বার্ডের পরিচয়সহ বার্ডস অব ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাধ্যমে নানা পাখির বয়ান বিশ্বের পাখিপ্রেমীদের কাছে তুলে ধরেন তিনি। গত সাত দশক ধরে তার এ বইয়ের নানা সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। বন্ড জীবিত থাকাকালীনই বইটির ১১টি সংস্করণ প্রকাশিত হয়। স্মিথসোনিয়ান লাইব্রেরিজের সংগ্রহে আছে বইটির প্রথম সংস্করণ। ইন্টারনেটে বইটির একটি সংস্করণ পাওয়া যায়। এ ছাড়া ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে কলিন্স ফিল্ড গাইডস বইটির সর্বশেষ সংস্করণ প্রকাশ করে বলে ইন্টারনেট সূত্র থেকে জানা যায়। এতে নতুন তথ্য যোগ করার দায়িত্ব নেন দুই পক্ষীবিদ ডন ই একেলবেরি এবং আর্ল এলো পুল। ২৫০ পাতার বইতে ১০০টি রঙিন ছবি রয়েছে। 

১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের বন্ডের উল্লেখযোগ্য গবেষণার মধ্য দিয়ে উল্লেখযোগ্য প্রাণিভৌগোলিক বা জুজিওগ্রাফিক্যাল তত্ত্বের উদ্ভব ঘটে। আগে মনে করা হতো ক্যারিবীয় অঞ্চলের পাখিদের সাথে দক্ষিণ আমেরিকার পাখিদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তা রয়েছে। কিন্তু বন্ডের গবেষণায় মাধ্যমে এ ভাবনা ভুল প্রমাণিত হয়। তিনিই জানালেন, এ অঞ্চলের পাখিদের নিকট কুটুম হলো উত্তর আমেরিকার পক্ষীকুল।

নামকরা বিবর্তনবিষয়ক জীববিজ্ঞানী ডেভিড ল্যাক প্রস্তাব করেন পাখিদের এই সীমান্ত চিহ্নিত করতে 'বন্ড রেখা' বা 'বন্ড লাইন' ব্যবহার করা হোক।  

সংরক্ষণের কাজেও অগ্রদূতের ভূমিকায় ছিলেন জেমস বন্ড। সব প্রজাতির পাখিকে সুরক্ষা দেওয়া হোক। এ কামনা ব্যক্ত করেন 'বার্ডস অব দ্য ওয়েস্ট ইন্ডিস'-এর ভূমিকায়। পৃথিবীর আর কোথাও এভাবে পাখিরা নির্মূল হওয়ার মুখে পড়েনি, সে কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাখির অভয়ারণ্য তৈরি করতে হবে। এসব অভয়ারণ্যে কোনো প্রকারের শিকারের অনুমতি দেওয়া হবে না। 

চার দশকের বেশি সময়ের মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জানা ৩০০ পাখি প্রজাতির মধ্যে ২৯০টির বেশি নমুনা তিনি সংগ্রহ করেন। অন্তহীন শ্রম এবং সময় ব্যয় করে সংগ্রহ করা জেমস বন্ডের পাখি, মাছ, ব্যাঙ এবং কীটপতঙ্গকুলের নমুনা এখন স্মিথসোনিয়ানস ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব  ন্যাচারাল হিস্টরিসহ দুনিয়ার খ্যাতনামা জাদুঘরে দেখতে পাওয়া যাবে। ডিরেক্সেল ইউনিভার্সিটির অধিভুক্ত একাডেমি অব ন্যাচারাল সায়েন্সের অরনিথোলজিস্ট বা পক্ষীবিদ জেসন ওয়েকস্টেইন বলেন, ৯ দশক আগে নুথ্যাচ প্রজাতির দুটি পাখির নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন বন্ড। এ দুটি খুবই মূল্যবান। বিলুপ্তপ্রায় বা বিপন্ন প্রজাতি সম্পর্কে আমাদের ভুল থেকে এভাবেই একমাত্র শিক্ষা নিতে পারি। 

এই জাতীয় সফলতা বা তৎপরতা দেখে আসল জেমস বন্ড খুশি হতেন। গৌরব বোধ করতেন। এই সফলতা পেতে যে বিপুল তৎপরতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, তা দেখে পাশাপাশি বিষণ্ণতাও ভর করত তার ওপর।

৪.

রোমহর্ষক গুপ্তচর কাহিনির কথা উঠলেই অনিবার্যভাবে আসবে কাজী আনোয়ার হোসেন ও তার সৃষ্ট চির তরুণ মাসুদ রানার কথাও। ইয়ান ফ্লেমিংয়ের 'ডক্টর নো' পড়ে মাসুদ রানার মতো গোয়েন্দা চরিত্র সৃষ্টির উৎসাহ পান কাজী আনোয়ার হোসেন। অনেকেরই আরও জানা আছে, বাস্তব দুজন মানুষের নাম মিলিয়ে বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের এই দুর্দান্ত দুঃসাহসী স্পাই পুরুষের নামকরণ করা হয়। নাম নির্বাচনের জন্য লেখক পরামর্শ  করেন স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিনের সাথে। কাজী দম্পতির ঘনিষ্ঠ বন্ধু স্বনামখ্যাত গীতিকার মাসুদ করিমের নামের প্রথমাংশ এবং ছেলেবেলায় ইতিহাসে পড়া মেবারের রাজপুত্র রাজা রানা প্রতাপ সিংহের নামের শেষাংশ মিলিয়ে সৃষ্টি হলো মাসুদ রানা। ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে মাসুদ রানার যাত্রা শুরু। একবিংশ শতকে এসেও মাসুদ রানার জনপ্রিয়তা কমেনি। দারুণ!

লেখার মধ্য দিয়ে সৃষ্ট নায়কের নামকরণের ক্ষেত্রে ইয়ান ফ্লেমিং এবং কাজী আনোয়ার হোসেনের মধ্যে অদ্ভুত মিল রয়েছে। এ মিল হয়তো কারও চোখই এড়াবে না। মাসুদ রানার বসের নামকরণ কাজী আনোয়ার হোসেন করেছিলেন নিজ বন্ধু, সাংবাদিক এবং লেখক রাহাত খানের নামে। সে কথাও আমরা জানি। কিন্তু এবারের প্রশ্ন, কাজী আনোয়ার হোসেন কি জানতেন- জেমস বন্ড নামটি একজন রক্ত-মাংসের মানুষের?
 

Related Topics

টপ নিউজ

জেমস বন্ড / সিনেমা

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ৪ কারণে হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল
  • ডলি সায়ন্তনীর মনোনয়নপত্র বাতিল
  • বিএনপি থেকে নৌকায় যাওয়া শাহজাহান ওমরেরর মনোনয়নপত্র বৈধ, বাতিল বর্তমান এমপি হারুনের
  • নভেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছে ১.৯৩ বিলিয়ন ডলার, ২১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি
  • ২০২৪-এ দর্শকের তুমুল আগ্রহে রয়েছে যেসব হলিউড সিনেমা
  • টি-টেন লিগে অদ্ভূতুরে নো বল

Related News

  • ২০২৪-এ দর্শকের তুমুল আগ্রহে রয়েছে যেসব হলিউড সিনেমা
  • আইএমডিবি’র জরিপে এ বছরের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভারতীয় সিনেমা-সিরিজ যেগুলো
  • জেমস বন্ডের পরবর্তী সিনেমা পরিচালনার গুঞ্জনে মুখ খুললেন ক্রিস্টোফার নোলান
  • গদার, তারকোভস্কি, তোরনাতোরে যখন ধানমন্ডির আড্ডার মধ্যমণি ছিলেন
  • অবশেষে আজ সন্ধ্যায় বাংলাদেশে মুক্তি পাচ্ছে ‘জওয়ান’

Most Read

1
বাংলাদেশ

৪ কারণে হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল

2
বাংলাদেশ

ডলি সায়ন্তনীর মনোনয়নপত্র বাতিল

3
বাংলাদেশ

বিএনপি থেকে নৌকায় যাওয়া শাহজাহান ওমরেরর মনোনয়নপত্র বৈধ, বাতিল বর্তমান এমপি হারুনের

4
অর্থনীতি

নভেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছে ১.৯৩ বিলিয়ন ডলার, ২১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

5
বিনোদন

২০২৪-এ দর্শকের তুমুল আগ্রহে রয়েছে যেসব হলিউড সিনেমা

6
খেলা

টি-টেন লিগে অদ্ভূতুরে নো বল

EMAIL US
[email protected]
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2023
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - [email protected]

For advertisement- [email protected]