লেফটেন্যান্ট গভর্নর টেম্পলের ভাগ্য খুলে যায় পূর্ব বাংলার সাইক্লোনে!
১
বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নরের কলকাতার বাসভবনে খুব বেশি সময় কাটান, এই অভিযোগ স্যার রিচার্ড টেম্পলের ওপর করা যাবে না। তিনি সবসময় চান নিজ চোখে সবকিছু দেখতে, এ কারণে বর্ষা আর শরৎকালে তার সময় কাটে নৌকার ওপর, বাংলার নদী-নালায়। তার জাঁকজমকপূর্ণ লঞ্চ আসলেই দেখার বিষয়, রাতের অন্ধকারে জাঁকালো আলোয় লঞ্চ আর তার চারপাশ আলোকজ্জ্বল হয়ে ওঠে, তার লঞ্চ দেখা যায় কয়েক মাইল দূর থেকে।
কাকতালীয়ভাবে তিনি নোয়াখালীর দিকেই আসছিলেন যখন সাইক্লোন আঘাত হেনেছিল, নভেম্বরের ৯ তারিখ বিকালে তিনি নোয়াখালীতে পা রাখলেন। তাকে স্বাগত জানানোর জন্য স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা জড়ো হয়েছিল। নামার সাথে সাথেই পোর্চকে জানালেন, সরকারের পক্ষে ত্রাণবাহী স্টিমার পাঠানো সম্ভব নয়, এবং তার বদলে ঢাকা থেকে ৫টি ত্রাণবাহী নৌকা পাঠানোর আদেশ দিলেন। পোর্চ তাকে প্রত্যুত্তরে জানালেন মেঘনার স্রোতের জন্য ঢাকার নৌকা উপযোগী নয়। তারপরেও টেম্পল তার সিদ্ধান্তেই অনড় রইলেন, কোনো স্টিমার আসবে না।
পরদিন সকালের মধ্যে টেম্পল আসার খবর ছড়িয়ে পড়েছে, স্থানীয়রা সাইক্লোনের ক্ষয়ক্ষতির টুকরো টুকরো কথা জানানোর চেষ্টা করছে, তারা সাইক্লোনের ভয়াবহতা বুঝলেও তা টেম্পলকে বোঝাতে পারছিলেন না কোনোভাবেই। সাইক্লোনের আগেই টেম্পলের জন্য সুধারাম সার্কিট হাউজে থাকার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল, সেখানে গিয়ে টেম্পল আরেকবার ঘোষণা দিলেন, তিনি স্বশরীরে সাইক্লোনের এলাকা ঘুরে দেখতে যাবেন।
স্থানীয় অফিসাররা জানতেন টেম্পলের সশরীরে ঘুরতে যাওয়া ভালোর বদলে আর খারাপ বয়ে আনবে। কারণ টেম্পল মনে করতেন স্থানীয় অফিসাররা 'বেশি' বোঝে, এ কারণে তারা যা বলতেন বাংলার দায়িত্বশীল লেফটেন্যান্ট গভর্নর ঠিক তার উল্টো করতেন। ১৮৭৬-এও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
হাতিয়া, দক্ষিণ শাহবাজপুর (ভোলা) এবং বাকেরগঞ্জের (বরিশাল) বেশ কিছু গ্রাম ঘুরে দেখার পর টেম্পল সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন লোকজন নিজেরাই সবকিছু ঠিক করে ফেলেছে। কারণ তিনি যখন গ্রামগুলোতে গিয়েছেন, তখন স্থানীয়দেরকে দেখেছেন ধান শুকাতে। তাছাড়া গাছের ডালপালা আর কাপড়-চোপড় দিয়ে বানানো 'তাঁবুর মতো' আশ্রয় দেখে তাদের আশ্রয়ের জন্য সাহায্যও প্রয়োজন হবে না বলে ঘোষণা করলেন তিনি। টেম্পলের সফর ছিল মূলত তার আগে থেকেই ঠিক করে রাখা সিদ্ধান্তকে ন্যায্যতা দেওয়ার ফল। "যারা খাবারের জন্য সাহায্য চাইছিলো, তারাই মূলত সাইক্লোনে সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত, এবং তাদের কোনোরকম ত্রাণের প্রয়োজন নেই।"
টেম্পল যাওয়ার আগে স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদেরকে কিছু নির্দেশনা দিয়ে গেলেন। 'প্রথমত, একেবারে প্রাণে মারা না গেলে খাবার বিতরণের দরকার নেই, পারলে সেটাও করার দরকার নেই। দ্বিতীয়ত, ত্রাণের খাবার বিক্রি করতে হবে, টাকার বিনিময়ে, এগুলো দানের জন্য নয়। স্থানীয় বাজারকে আবার চাঙা করতে হবে, বাজার থেকে যেন চাল লুট না হয় সেজন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে হবে, এবং স্থানীয় জমিদাররাই তাদের প্রজাদের দেখভাল করবে। খাজনা মওকুফের আবেদনে কান দেওয়া যাবে না।' মূলত ত্রাণ কার্যক্রম মানুষের উপকারের জন্য ছিল না, টেম্পলের কাছে এটি ছিল একপ্রকার ব্যবসা।
২
খাজনা মওকুফের কোনো অনুরোধই টেম্পল শুনলেন না, তার একটিই জবাব: ১৮৭৪-এর দুর্ভিক্ষের সময়েও কোনো খাজনা মওকুফ করা হয়নি, তখন যদি খাজনা দেয়া সম্ভব হয়, তবে এখন দিতে কী সমস্যা? দুর্ভিক্ষের উৎস মূলত বিহার আর উত্তর-পশ্চিম বাংলায়। তবে দুর্ভিক্ষের দগদগে ঘা সেই সময়ের প্রজন্মের কাছে তখনো পুরনো হয়নি, ১৮৬৬ সালে উড়িষ্যার ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে প্রায় ১০ লক্ষ লোক মারা যায়। এবার অবশ্য জনগণ আর স্থানীয় কর্মকর্তারা দুর্ভিক্ষ হওয়ার পর দ্রুত ব্যবস্থা নেয়, তার অন্যতম কারণ ছিল লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার জর্জ ক্যাম্পবেল।
বাংলার গভর্নর তার দুই লেফটেন্যান্ট গভর্নত ক্যাম্পবেল আর টেম্পলকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ভাইসরয় লর্ড নর্থব্রুকের সাথে আলোচনা করে ত্রাণের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে। ক্যাম্পবেল চেয়েছিলেন বাংলা অঞ্চল থেকে ধানের রপ্তানি বন্ধ করতে, কিন্তু ব্যবসায়িক স্বার্থে জোর দেওয়া 'মুক্ত অর্থনীতির' ধারক-বাহক নর্থব্রুক সে কথা আমলেই নেননি। বরং দুর্ভিক্ষ থামাতে তিনি বার্মা থেকে ধান আমদানির আদেশ দিলেন। ক্যাম্পবেল বুঝতে পারলেন নর্থব্রুকের এই কাজ একেবারে অযৌক্তিক। যেখানে বাংলা থেকে ধান রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলেই দুর্ভিক্ষের অনেকখানি সমাধান হয়ে যায়, সেখানে কেন আবার বার্মা থেকে কয়েক লক্ষ পাউন্ড খরচ করে ধান আমদানি করতে হবে?
যা-ই হোক, টেম্পল ১৮৭৪-এর শুরু থেকেই দুর্ভিক্ষপীড়িত এলাকায় ত্রাণ বিতরণের দায়িত্বে ছিলেন, আর এবারেও তিনি তার দায়িত্বের চেয়েও বেশি আগ্রহ দেখাতে শুরু করেন, কারণ ঊর্ধ্বতনদের দৃষ্টি আকর্ষণ। ক্যাম্পবেলের পর যে তাকেই মূল লেফটেন্যান্ট গভর্নরের দায়িত্ব দেওয়া হবে তা প্রায় অনুমিতই ছিল, তারপরেও কোনোরকম খুঁত রাখতে চাননি টেম্পল। নিয়মিত ৫০-৬০ মাইল ঘোড়ায় চড়ে ঘুরতেন টেম্পল, স্থানীয় মানুষদের সাথে কথা বলতেন আর নোট নিতেন। তবে স্থানীয়দের যে চাহিদা ছিল, তারচেয়েও ৩-৪ গুণ বেশি লিখে রাখতেন টেম্পল। এই বিশাল পরিমাণ ধান আমদানির ফলে ব্রিটিশ সরকারকে বেশ আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল, যদিও মানুষের জীবনের কথা চিন্তা করলে একে সাফল্যই বলা চলে। অফিশিয়াল রিপোর্ট অনুযায়ী মাত্র ২৩ জন দুর্ভিক্ষে মারা যায়, ইংরেজরা ভারতের রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর এই প্রথম কোনো দুর্ভিক্ষকে সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
তবে কিছুদিন পরেই টেম্পলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসা শুরু করে। এই দুর্ভিক্ষ ছিল আসলে টেম্পলের মস্তিষ্কপ্রসূত, বাস্তবে বড় ধরনের কোনো দুর্ভিক্ষই হয়নি। বরং টেম্পল এই অপরিমেয় পরিমাণ ধান অন্যত্র বিক্রি করে ব্যাপক টাকা-পয়সা আয় করেছে। খুব সহজেই সরকারের এই পয়সা নোষ্ট থামানো যেত, নর্থব্রুক কিছুটা দায়ী হলেও এর পেছনে কাজ করেছে টেম্পলের অজ্ঞতা আর সীমাহীন লোভ।
যা-ই হোক, এই অভিযোগগুলো তেমন আমলে নেওয়া হয়নি, এবং টেম্পলও খুব দ্রুত ক্যারিয়ারে এগোতে থাকে। বলা চলে, প্রায় সব সমস্যা সমাধান করতে টেম্পল নিজে যেচে এগিয়ে যেতেন। আর এর কারণ আগেই বলা হয়েছে। ১৮৭৬ সালের সাইক্লোনের পর টেম্পল নিজের ডায়েরিতে লিখেছিলেন, 'এটা সৌভাগ্য যে আমি নিজে সবার আগে দেখতে এসেছি।' কিন্তু কার জন্য সৌভাগ্য?
টেম্পল দক্ষিণ বাংলাকে উল্লেখ করেছেন বাংলার সবচেয়ে ধনী অঞ্চল হিসেবে (যদিও এর বিপরীতটাই ছিল সত্য)। 'দ্রুতই সমৃদ্ধ পূর্ব বাংলার অন্যান্য অঞ্চল থেকে গবাদি পশু চলে যাবে, নৌকা ভরে ভরে অন্যান্য জায়গার ফসল চলে আসবে।' টেম্পল ভেবেছিলেন সাইক্লোনে সবকিছু হারানো ব্যক্তিদের অর্থ দিয়ে কেনার মতো সামর্থ্য আছে!
ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র স্থাপন করার উদ্দেশ্য মূলত ত্রাণ বিতরণ ছিল না, বরং তা ছিল ত্রাণসামগ্রী রক্ষা করা। টেম্পলের উদ্দেশ্য ছিল এগুলো দেখিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। ১৮৭৪-এর দুর্ভিক্ষের পর তার ওপর অর্থ অপচয়ের যে অভিযোগ আনা হয়েছিল, এবার একেবারে কম টাকা খরচ করে সেই অভিযোগগুলো ঘাড় থেকে নামাতে চাইছিলেন তিনি। 'দুর্ভিক্ষ'-এর সময় মূল লক্ষ্য ছিল জীবন বাঁচানো, এবার সেদিকে তাকানোর প্রয়োজনই মনে করলেন না তিনি। বাজার ব্যবস্থার অর্থনীতি নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যাবে বলে ভেবেছিলেন টেম্পল, যদিও সাইক্লোনে বেঁচে যাওয়ারা নিজেরা ঠিক হতে পারেনি।
৩
টেম্পল সাইক্লোনে সবকিছু হারানো মানুষদের ব্যাপারে ভুল আন্দাজ করেছিলেন, তিনি মনে করেছিলেন পূর্ব বাংলার সম্পদের জোরে সবকিছু নিজের মতোই ঠিক হয়ে যাবে, অবশ্য মুক্তবাজার অর্থনীতিতে দৃঢ় বিশ্বাস রাখা টেম্পলের এরকম বিষয় ভাবা অবান্তর কিছু ছিল না। তবে যে জিনিসটি তিনি ভুলে গিয়েছিলেন সেটি হলো, সাইক্লোনে কেবল আশ্রয় আর খাবার নষ্ট হয়নি, লাঙল, পশুসম্পদ, সারসহ অন্যান্য কৃষি যন্ত্রপাতিও হারিয়ে গিয়েছিল। ফলে তারা যে আবার সবকিছু নতুন করে শুরু করবে, সে সুযোগও ছিল না।
চট্টগ্রামের এক কর্মকর্তা তখনকার সাইক্লোন পরবর্তী দুরবস্থার কথা উল্লেখ করেছিলেন এভাবে: 'যখনই কোথাও চাল পাওয়া যেত, একেবারে খুঁটে খুঁটে প্রতিটি দানা উঠিয়ে সেটি পরিষ্কার করে রোদে শুকানো হতো। মানুষজনের হাতে চাল ছিল না বললেই চলে, সাথে কিছু মরিচ, পান আর শুকনো মাছ ছিল, বাকি সবকিছু পানিতে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।'
কিছু কিছু পরিবার বন্যা বা খরার ভয়ে মাটির নিচে গর্ত করে সেখানে কিছু খাবার মজুদ করে রাখতো। তবে বেশিরভাগই ঘরের বাইরের গোলাঘরে রাখতো। মাটির নিচের খাবার মজুদের ব্যবস্থা সম্পর্কে জেনেই টেম্পল ভেবেছিলেন সবার ঘরেই এরকম খাবার মজুদ করা আছে। বাজারের কিছু দোকানেও এরকম ব্যবস্থা দেখে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়েছিল তার।
টেম্পল যখন গিয়েছিলেন তখনো ফসল পুরোপুরি নষ্ট হয়নি। সাধারণ সময়ে স্থানীয় অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়েও বাকি অংশ বাংলার অন্যান্য অঞ্চলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। টেম্পল ভেবেছিলেন, যদি এর এক-তৃতীয়াংশও ঠিক থাকে তবে আর দুর্ভিক্ষ হবে না। পটুয়াখালীর উপজেলা কর্মকর্তা কৃষ্ণ গুপ্তও একই কথা ভেবেছিলেন। কেউই ভাবেননি যে সাইক্লোনের পর দুর্ভিক্ষ হতে পারে। তবে স্বাভাবিক সময় আর সাইক্লোনের সময় এক জিনিস নয়। ফসল ওঠানোর সময় হয়ে গেলেও সে সময় কাজ করার মতো লোক পাওয়া যাচ্ছিলো না, ফলে মাঠেই পানির মধ্যে ডুবে ফসল নষ্ট হচ্ছিলো।
সাইক্লোনের ভয়াবহতা বুঝতে টেম্পল আরও একজায়গায় ভুল করেছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন সাইক্লোনে ফসলের ক্ষতি হওয়ার অবস্থা সবজায়গায় একইরকম, কিন্তু বাস্তবে উপকূলজুড়ে বহু জায়গায় লবণাক্ত পানি ঢুকে গিয়েছিল। উপরন্তু তিনি যেখানে গিয়েছিলেন সেখানে এই সমস্যা দেখা যায়নি। বরিশাল এর পূর্ব-অংশে পানি মিষ্টি থাকলেও চিটাগাং ট্রাঙ্ক রোডের দক্ষিণে থাকা প্রায় পুরো অংশই ছিল সাগরের লবণাক্ত পানিতে ডোবা। কৃষকরা ভেবেছিল বৃষ্টি হলে লবণাক্ত পানি মিষ্টি হয়ে যাবে, কিন্তু দুই সপ্তাহ চলে যাওয়ার পরও কোনো বৃষ্টি না হওয়ায় ফসল সেখানেই নষ্ট হয়ে গেল। কেবল ফসলই নষ্ট হয়নি, বন্যার ফলে মাটির ভেতরেও লবণ ঢুকে গিয়েছিল, এবং পরবর্তী ২-৩ বছরের ক্রমাগত বৃষ্টি হওয়ার পর স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছিল, ফলে ফসল উৎপাদনও কমে গিয়েছিল অনেকখানি।
চট্টগ্রামে ফসল নষ্ট হওয়ার পর প্রচুর ফসল নষ্ট হয়ে গেলে কালেক্টর জন ভিসির কাছে দলে দলে ত্রাণের জন্য আবেদন করতে থাকলো লোকজন। এদিকে ভিসির সহকারি জার্বো ত্রাণের জন্য কোনো বড় ব্যবস্থা না নিয়ে এবং একইসাথে সবাইকে ফিরিয়ে না দিয়ে মজুদ থেকে অল্প অল্প করে বিতরণ করে পরিস্থিতির সামাল দিলো, সাময়িকভাবে সন্তুষ্ট করতে পারলেও জনগণের পেটে টান পড়তে বেশি সময় লাগলো না।
এদিকে বরিশাল ও ভোলায় লবণাক্ত পানির সমস্যা হলেও আরেকটা সমস্যা দেখা গেল। ওই অঞ্চলে ধানের পরেই সুপারি অর্থকরী ফসল হিসেবে সুপারির চাষ হতো, এবং প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি করা হতো। সাইক্লোনের পর সুপারি গাছ একেবারে তছনছ হয়ে যায়। কোনো বছরে ধানের ফলন ভালো না হলে সুপারি বিক্রি করে সেই ঘাটতি মেটানো হতো, সাইক্লোনের পর সেই অবস্থাও ছিল না বরিশাল-ভোলাবাসীর হাতে। এই অবস্থার পর অনেকেই এই অঞ্চল থেকে চলে যেতে চাইছিল, কারণ অন্যবার তাদের হাতে তাও সঞ্চয় থাকে, সাইক্লোন সেটুকুও কেড়ে নিয়ে তাদের পিঠ একেবারে দেয়ালে ঠেকিয়ে দিয়েছিল।
সাইক্লোনের পর কোনো কোনো অঞ্চলে আশি থেকে নব্বই ভাগ গবাদি পশু বন্যায় ডুবে মারা গিয়েছিল, যার বেশিরভাগই ছিল গরু আর চাষের বলদ। ষাঁড় গরুর তুলনায় শক্তসামর্থ্য হওয়ায় বেশিরভাগই বেঁচে গিয়েছিল, এবং সেগুলোকেই পরের বছর চাষের কাজে লাগানো হয়েছিল। ভেসে যাওয়া বীজ আর সারও ছিল আরেক সমস্যা।
তবে এগুলোর চেয়েও সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল সুপেয় পানির সংকট। লবণাক্ততা তো ছিলই, গ্রামের কুয়াগুলো ছিল পশুর মৃতদেহতে ভরা। পানিতে এতটাই দুর্গন্ধ ছিল সেদিকে যাওয়াই যেত না। টেম্পল এসব জিনিস দেখলেও সে ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থাই নেননি। তার একটাই চিন্তা: প্রমোশন পাওয়া।
৪
টেম্পলের ত্রাণ কার্যক্রম খুব দ্রুতই শেষ হয়ে গেল। তার আদেশে কোনো স্টিমার পাঠানো না হলেও ঢাকার নওয়াবরা তাদের নিজস্ব 'স্টার অফ ঢাকা' স্টিমার আর বড় দুটো নৌকা পাঠালেন চাল ভর্তি করে। কিন্তু সেটাই শেষ, কয়েকদিনের মধ্যেই ত্রাণ কার্যক্রম সম্পুর্ণ বন্ধ হয়ে গেল। ফেনীর এক সরকারি কর্মকর্তা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে কম দামে চাল কেনার ব্যবস্থা করছিলেন, কিন্তু ইংরেজ সরকারি কর্মকর্তা তা জেনে বাধা দেন। সরকারের ঠিক করে দেওয়া নির্ধারিত দামেই বিক্রি করার শক্ত আদেশ দেন।
নভেম্বরের ১৯ তারিখ টেম্পলের বিশেষ নির্দেশে ফ্লিটউড পেলিউ নামে একজনকে সন্দ্বীপ আর হাতিয়ায় পাঠানো হলো, উদ্দেশ্য যেকোনো মূল্যে সেখানে নিয়ম-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। ফ্লিটউডের 'নেটিভ'দের প্রতি কোনোরকম দয়া-মায়া না দেখানোর ব্যাপারে কুখ্যাতি ছিল, এবং টেম্পল এ ধরনের মানুষই চেয়েছিলেন। রিপোর্টে যেন সবকিছু স্বাভাবিক থাকা সে ব্যাপারে ফ্লিটউডকে বিশেষভাবে বলা হলো। খাবার লুটপাট যতে না হয়, এবং একেবারে খেতে না পেয়ে মারাই যাচ্ছে এরকম অবস্থা দেখা গেলেই কেবল কাউকে খাবার দান করার আদেশ দেওয়া হলো তাকে।
টেম্পলের নির্দেশের পর ঢাকার কমিশনার ফ্রেডেরিক পিকককেও বাকেরগঞ্জে পাঠানো হলো ত্রাণ কার্যক্রম দেখাশোনার জন্য। গলাচিপায় কিছুদিন ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর পর বন্ধ করে দেওয়া হলো। রাবনাবাদের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ সাইক্লোনের সরাসরি ঝাপটায় মারা গিয়েছিল, কিন্তু যারা বেঁচে গিয়েছে তারা 'ভালো'ই আছে বলে সেখানেও খুব দ্রুত থামিয়ে দেওয়া হলো। পুলিশ সুপারিন্ডেন্টেন্ড এইচ এন হ্যারিসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল দৌলতখানে, তাকে ত্রাণের বাকি থাকা চাল-ডাল-লবণ বিক্রি করে দ্রুত ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হলো। পিককের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এমন: 'ওখানের লোকজনের কোনো লজ্জাই নেই, যা-ই দেওয়া হয়, যত পরিমাণে দেওয়া হয়, তা-ই হাত পেতে নেয়।'
তবে নিম্নতর সরকারি কর্মকর্তারা আসল অবস্থা বুঝতে পেরেছিলেন এবং কোনোভাবেই ত্রাণ কার্যক্রম থামিয়ে দিতে চাচ্ছিলেন না। পিককের আদেশের পরেও অনেক স্থানীয় কর্মকর্তারা টাকা আর শস্য ত্রাণ হিসেবে পাঠাচ্ছিলেন। তবে এর পুরোটাই হয়েছিল ঊর্ধ্বতনদের চোখ এড়িয়ে। বার্টন নামের একজন কর্মকর্তা ২০ রুপি থেকে ৪ আনা পর্যন্ত বিভিন্ন অঙ্কের টাকা সাহায্য করেছিলেন, যার মোট অঙ্ক দাড়িয়েছিল প্রায় ৪৫০ রূপি। টেম্পল এই ঘটনা জানার পর বার্টনকে 'সরকারি টাকা' অপচয় করার দোষে অভিযুক্ত করেন এবং বাকিদের কাছে এ ধরনের কোনো ঘটনা যেন পুনরায় না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বলেন।
বার্টনের জন্য এই ঘটনা বেশ অপমানজনক ছিল, কারণ কেবল ঊর্ধ্বতনই নয়, বরং তার চেয়েও কম দক্ষ লোকদের সামনে তাকে জবাবদিহিতার জন্য ডাকা হয়েছিল। বার্টন তার কাজের জন্য অনুতপ্ত ছিলেন না মোটেই, কারণ তিনি দেখেছেন কীভাবে মানুষেরা প্রায় অর্ধ-নগ্ন অবস্থায়, আহত অবস্থায়, পচা ভাত খেয়ে তার কাছে দৌড়ে এসেছে। আর যাদেরকে বেশি সাহায্য দেওয়া হয়েছে তারা তাঁতি বা কামারের মতো পেশায় জড়িত, তাদের হাতে ফসলও নেই যে তা থেকে পেট ভরাবে।
বার্টন তার রিপোর্ট জমা দিলেন। তাতে দেখা গেল মাত্র ২২ হাজার রূপি ত্রাণ হিসেবে খরচ হয়েছে। বার্টনের ভাষায়, 'আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ দুর্যোগ, যেখানে প্রায় ৭ লক্ষ মানুষের জীবন জড়িত, সেখানে এই পরিমাণ খরচ 'যুক্তিসঙ্গত' বলে মনে হয়।' বাস্তবে বার্টনও জানতেন এটি মোটেই 'যুক্তিসঙ্গত' নয়। কলকাতার সংবাদপত্র 'দ্য বাঙালি' রায় দেয় এই অঙ্কের ৫ গুণ খরচ করলেও তা অযৌক্তিকই থেকে যেত।
বাকেরগঞ্জের হিসাবে ব্যক্তিপ্রতি মাত্র আধা আনা খরচ হয়েছিল, যখন এক মণ চালের দামই ৫ রূপি, অর্থাৎ একজন ব্যক্তি গড়ে দেড় কাপের মতো চাল পেয়েছিল ত্রাণ হিসেবে! নোয়াখালী এবং চট্টগ্রামে পরিমাণ ছিল আরও কম। টেম্পলের শৃঙ্খলা ফেরানো নিয়ে যতটা না চিন্তা ছিল, ত্রাণ নিয়ে ততটা ছিল না। এ কারণে নোয়াখালীতে ৩২৫৩ রূপি খরচ হয়েছিল পুলিশের পেছনে, ত্রাণের পেছনে হয়েছিল তারচেয়েও কম!
৫
১৮৭০ সালের মধ্যে বাংলায় বাঙালিদের দ্বারা প্রচুর সংবাদপত্র চালু হয়, কেবল ইংরেজি ভাষাতেই নয়, বরং বাংলা ভাষাতেও। এগুলোর বেশিরভাগই ছিল ইংরেজদের চাটুকারি, তবে কিছু কিছু সময় সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে সমালোচনাও হতো। সাইক্লোন-পরবর্তী সময়ে ত্রাণ কার্যক্রমে সরকারের বক্তব্যের বিপরীতে সরকারের গাফিলতি তুলে ধরে ভারসাম্য বজায় রাখে সংবাদপত্রগুলো।
সাইক্লোনের খবর কলকাতায় প্রথম পৌঁছায় নভেম্বরের ৬ তারিখ সকালবেলায়, পিককের টেলিগ্রামের মাধ্যমে। সংবাদপত্রগুলোর মধ্যে প্রথম 'দ্য বাঙালি' সাইক্লোন নিয়ে রিপোর্ট করে: 'বাকেরগঞ্জ কলকাতার গোলাঘর, আর বাকেরগঞ্জে যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানা মানে আমাদের ক্ষতি করা। ১৭৭০ সালের পর বাংলায় এত বড় দুর্যোগ আর ঘটেনি। তাই সরকার, জমিদার আর সর্বস্তরের মানুষকে এখন এই দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠার জন্য কাজ করতে হবে।'
কলকাতার বাংলা সংবাদপত্রগুলো তখন দুটো বিষয় নিয়ে চিন্তিত: প্রথমটি, ভারতের সম্রাজ্ঞী হিসেবে রানী ভিক্টোরিয়ার নাম ঘোষণা; এবং দ্বিতীয়টি ভারতের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলে চলমান দুর্ভিক্ষ। দ্য বাঙালির ভাষায়: 'ইতোমধ্যেই সাইক্লোনে কয়েক লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছে, ডেকান অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে, যার পূর্ণমাত্রা এখনো শুরু হয়নি। এমন এক সময়ে আমাদের শাসকরা ট্রাম্পেটের বাজনার তালে তালে নিজেদের রাজকীয় পদবী শুনতে চাচ্ছে, যার কোনো প্রয়োজনই নেউ। এরকম অর্থনৈতিক দুরবস্থার সময়, যখন পুরো দেশজুড়ে সাহায্য প্রয়োজন, তখন এক রাষ্ট্রীয় আয়োজন করে আধা মিলিয়ন পাউন্ড খরচ স্রেফ অপচয়।'
সোমপ্রকাশ তাদের প্রতিবেদনে লিখলো, 'যখন হাজার হাজার পাউন্ড খরচ করা হচ্ছে শুধু আতসবাজির পেছনে, তখন হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে খাবার না পেয়ে, যথাযথ ত্রাণ ও তদারকির অভাবে।' ময়মনসিংহের সাপ্তাহিক ভারত মিহির বললো, 'ভাইসরয় লর্ড লিটন নিশ্চয় অনুষ্ঠানের আনন্দে পাগল হয়ে গিয়েছেন, নাহলে কেন পূর্ব বাংলার চলমান দুর্যোগের জন্য কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না?' ময়মনসিংহের আরেক সংবাদপত্র লিখলো, 'ভারতের সাথে ইংরেজদের সংযোগের সবকিছুই ইংরেজদের পক্ষে। খরা, দুর্ভিক্ষ, সাইক্লোন, প্লেগ, সবকিছুই কেবল নেটিভদের জন্য। সরকারের কার্যক্রম এখনো প্যারেড আর আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ, যার ফলাফল অগণিত মানুষের মৃত্যু।'
ইংরেজ-মালিকানাধীন সংবাদপত্রগুলোও সরকারের এই অবহেলা নিয়ে সমালোচনা করেছিল। এরমধ্যে সবচেয়ে উদারপন্থী 'দ্য ফ্রেন্ড অফ অফ ইন্ডিয়া' তাদের প্রতিবেদনে ব্যাঙ্গাত্মকভাবে লিখলো: 'ভারতের ভবিষ্যৎ ইতিহাসবিদদের জন্য ভারতে ইংরেজ শাসনের যৌক্তিকতা খুঁজে বের করতে কোনোরকম অসুবিধাই হবে না, যখন তিনি দেখবেন এক রাতেই দুই লক্ষাধিক মানুষ মারা গিয়েছে, এবং দুর্ভিক্ষ দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চল ছেয়ে ফেলেছে, তখন সরকার শান্তভাবে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে জমকালো রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করতে যাচ্ছে।'
৬
স্যার রিচার্ড টেম্পল সরাসরি সাইক্লোন দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের দেখতে যাচ্ছেন, এই খবর শুনে প্রায় সবাই-ই খুশি হয়েছিল, বাংলার সমস্ত সংবাদপত্রে টেম্পলের এই আগমন বেশ আশা দেখাচ্ছিলো, অন্তত তখনো ১৮৭৪-এর দুর্ভিক্ষের সময় টেম্পলের জনদরদী রূপ তখনো সবার মুখে মুখে ফিরছিলো। তবে খুব দ্রুতই দেখা গেল টেম্পলের চরিত্র আমূল পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে, কোথায় সেই দানশীল টেম্পল? দ্য বাঙালি ঘোষণা করলো: উচ্চতর পদ একজন মানুষকে কত নিচে নামাতে পারে তার আদর্শ উদাহরণ টেম্পল। অমৃত বাজার টেম্পলের ত্রাণ কার্যক্রমকে স্বার্থপর এবং নিজের কাজ উদ্ধারের পথ হিসেবে মতামত দিলো। ইতোমধ্যেই টেম্পলের 'মুক্তবাজার অর্থনীতি' ভারতকে ইংরেজদের কৃষি-উপনিবেশে পরিণত করেছে। টেম্পলের এই নিয়ম সেই আগুনে আরও ঘি ঢেলে দিল, দু মুঠো ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য ত্রাণের চালও বিক্রি করার আদেশ দিয়ে।
জানুয়ারির ১ তারিখ দিল্লী দরবারের দিন চলে আসলো, উদযাপনের দিন, আনন্দের দিন, মহারানী ভিক্টোরিয়াকে ভারতেরও সম্রাজ্ঞী হিসেবে ঘোষণা করার দিন। দ্য বাঙালি বরাবরের মতোই ব্যাঙ্গাত্মকভাবে লিখলো: 'এটা আসলেই উতসবের দিন, যেখানে পুর্ব বাংলায় হাজার হাজার লাশ উন্মুক্ত হয়ে পড়ে আছে, দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে আরও কয়েক লক্ষাধিক মানুষ খাবারের অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মারা যেতে চলেছে।' টেম্পলের অনুপস্থিতিতে কলকাতায় অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে থাকলেন তার সেক্রেটারি চার্লস বাকল্যান্ড, যিনি বাঙালিদেরকে 'নিগার' হিসেবে ডাকতে দ্বিধাবোধ করেন না।
টেম্পল তখন দিল্লীতে অনুষ্ঠান উপভোগ করছেন, সুস্বাদু খাবার চেখে দেখছেন। তবে তারচেয়েও বড় ব্যাপার, তিনি তখন ব্রিটেনের সবচেয়ে উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সাথে সময় কাটাচ্ছেন, যারা সাইক্লোন সফলভাবে 'সামলানো'র জন্য টেম্পলের প্রশংসা করছেন। তারমধ্যে ছিলেন স্যার জন স্ট্র্যাচি, যিনি ১৮৭৪-এ টেম্পলের কাজের সবচেয়ে বড় সমালোচনাকারী ছিলেন। স্ট্র্যাচি টেম্পলকে জানালেন দক্ষিণ আর পশ্চিম ভারতের দুর্ভিক্ষ সামলানোর জন্য কাকে দায়িত্ব দেওয়া যায়। টেম্পল এই সুযোগই খুঁজছিলেন, জানালেন তিনিই এই কাজের সবচেয়ে উপযুক্ত। স্ট্র্যাচিও টেম্পলের নাম অনুমোদন করলেন।
ঢাকার হিন্দু হিতৈষিণী পত্রিকায় লেখা হলো: 'যখন পূর্ব বাংলায় হাজার হাজার লোক মারা গেছে, এবং তার চেয়েও বেশি সম্পদ ধ্বংস হয়েছে, তখন বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে তার কাজের জন্য আরও উচ্চপদ দেওয়া হলো।' সাইক্লোনের ফলে যে কয়জন ব্যক্তি লাভ করেছিল, তার সবচেয়ে উপরের নামটি স্যার রিচার্ড টেম্পলেরই হবে। তার নির্দয় নিয়ম-কানুনের ফলে তার প্রমোশন হয়েছিল ঠিকই, তবে তারচেয়েও ভয়াবহ সমস্যার দরজা খুলে দিয়েছিল পূর্ব বাংলার মানুষের জন্য।
সরকারের নিয়মের ফলে বেশিরভাগের মানুষের কাছেই খাবার, পানি কিংবা আশ্রয় ছিল না। কুয়া আর মাঠগুলো ভরা ছিল পচা-গলা লাশে। সাইক্লোনের বেঁচে যাওয়া ক্ষুধার্ত আর দুর্বলরা দিন কাটাচ্ছে নোংরা জায়গায়। রোগ-ব্যাধি-মড়ক ছড়ানোর জন্য একেবারে নিখুঁত পরিবেশ। ইংরেজদের গাফিলতির জন্য বাংলায় শুরু হলো আরেক মহামারী, কলেরা।