শাসকদের মৌন সম্মতিতে গুম, পারভেজ থেকে শাহবাজের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না: নোটিশ পাকিস্তান হাইকোর্টের
পাকিস্তানের 'গুমের শিকার' ব্যক্তিদের অধিকার রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন আদালত। গত বছরের ১ ডিসেম্বর ইসলামাবাদ হাই কোর্ট (আইএইচসি) প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ও ফেডারেল মন্ত্রিসভা যেন নিখোঁজ ব্যক্তিদের বৈধ উত্তরাধিকারীদের ক্ষতিপূরণ দেয়, যেহেতু নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা ও তদন্ত সংস্থাগুলোর তদারকি করা তাদেরই দায়িত্ব।
নিখোঁজ সাংবাদিক মুদাসসর নারুকে খুঁজে বের করার জন্য দায়ের করা পিটিশনের শুনানির সময় আইএইচসির প্রধান বিচারপতি আতহার মিনাল্লাহ ফেডারেল মানবাধিকার মন্ত্রী শিরিন মাজরাইকে বলেন তিনি যেন মন্ত্রিসভাকে এ পরামর্শ দেন।
তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল রোববার আইএইচসি ফেডারেল সরকারকে সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল (অব.) পারভেজ মোশাররফ ও তার পরবর্তী শাসকদের—তাদের মধ্যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও আছেন—বলপূর্বক গুমের ব্যাপারে নোটিশ জারি করেছেন।
গুম-সংক্রান্ত নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ইসলামাবাদের হাই কোর্ট। এছাড়া গত কয়েক বছরে অনেকগুলো নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার উদাহরণও আদালত টেনেছেন।
আইএইচসির প্রধান বিচারপতি আতহার মিনাল্লাহ রোববার সাংবাদিক মুদাসসর নারুসহ আরও পাঁচ ব্যক্তির গুম হওয়া নিয়ে দায়ের করা পিটিশনের চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মামলায় ১৫ পৃষ্ঠার একটি আদেশ জারি করেন।
এ আদেশে মিনাল্লাহ বলেন, বলপূর্বক গুমের নীতিকে নীরব অনুমোদন দিয়ে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে বিশেষ করে সামরিক বাহিনীকে এর সঙ্গে জড়িয়ে জাতীয় নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগের জন্য পারভেজ মোশাররফ ও তার পরবর্তী সব শাসকের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, এর ব্যাখ্যা দিতে হবে তাদের।
মিনাল্লাহ বলেন, 'পারভেজ মোশাররফ তার আত্মজীবনী "ইন দ্য লাইন অভ ফায়ার"-এ অকপটে স্বীকার করেছেন যে "বলপূর্বক গুম" রাষ্ট্রের একটি অঘোষিত নীতি ছিল।'
ফেডারেশনের প্রধান নির্বাহীদের (শাসকদের) বিরুদ্ধে কেন গুমের মামলার দায়ের করা হচ্ছে না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আদালত।
ইসলামাবাদ হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি আদেশে বলেন, চরম রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধের কেন তাদের বিচার করা হবে না, তার ব্যাখ্যা দেওয়া সব শাসকের দায়িত্ব।
আদেশে আরও বলা হয়, মানবাধিকার ও নাগরিকদের স্বাধীনতা লঙ্ঘন করার মতো কর্মকাণ্ডে সশস্ত্র বাহিনীর জড়িত থাকলে—এমনকি তারা জড়িত আছে, এমন সন্দেহ উদ্রেক হলেও—আইনের শাসনকে দুর্বল হয়ে পড়ে।
বিচারপতি মিনাল্লাহ বলেন, নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধার করা না হলে বা ফেডারেল সরকার যদি কার্যকর ও দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ/সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে কেন পিটিশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না এবং তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে না, তা ব্যাখ্যা করার জন্য বর্তমান ও প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হবেন।
ভবিষ্যতে কথিত নিখোঁজের ঘটনায় ফেডারেশন ও সংশ্লিষ্ট প্রদেশগুলোর প্রধান নির্বাহীদের বিরুদ্ধে কেন ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হবে না, অ্যাটর্নি জেনারেলদের তার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে আদেশে।
নিখোঁজ ব্যক্তিদের খবর কার্যকরভাবে তুলে ধরতে মিডিয়ার ভূমিকার ব্যর্থতার জন্যও দুঃখ প্রকাশ করেছেন আদালত। পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের অকল্পনীয় অগ্নিপরীক্ষা ও যন্ত্রণাকে তুলে ধরার জন্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অগ্রণী ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে তারা হয় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার ও মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে খারাপ রূপকে উপেক্ষা করে যায় অথবা একে গুরুত্ব দেয় না।
গুমের বিষয়ে সংসদের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন আইএইচসিও। বলে, মজলিস-ই-শূরা (সংসদ) এবং সংশ্লিষ্ট প্রদেশের আইনসভাগুলো রাজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হলেও নিজেদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা পালনের জন্য সক্রিয় ভূমিকা রাখার কোনো লক্ষণ তারা দেখায়নি।
আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, বলপূর্বক অন্তর্ধানের শিকারের ফলে যারা ভুক্তভোগী হয়েছেন, তাদেরকে অকল্পনীয় যন্ত্রণায় ভুগতে হয়েছে। এবং রাষ্ট্র তার নাগরিকদের রক্ষা করার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে পাকিস্তানে সবচেয়ে বেশি মানুষ (১ হাজার ১০৮ জন) নিখোঁজ হয়েছেন বেলুচিস্তানে।
- সূত্র: ডন