‘বিমানের যন্ত্রাংশের ওপর কর মওকুফে উপকৃত হবে সবাই’

বাজেটে প্রস্তাবিত অগ্রিম কর ছাড়ের কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিমান আমদানি সস্তা হতে চলেছে। তবে এভিয়েশন অপারেটররা বলছেন, বিমানের যন্ত্রাংশের উপর বিস্তৃত পরিসরে ছাড় দিলে তা এই খাতের জন্য আরো কার্যকর হবে।
বিমানের দুটি অত্যাবশ্যকীয় অংশ নিউম্যাটিক প্লাগ এবং স্পার্কিং প্লাগের উপর শুল্ক কমানোর প্রস্তাব রেখেছে সরকার। কিন্তু এভিয়েশন অপারেটররা বিমানের অন্যান্য অংশের উপরও শুল্ক মওকুফের দাবি করেন।
এভিয়েশন অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (এওএবি) মহাসচিব এবং নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এয়ারক্রাফটের উপরে যে অ্যাডভান্স ট্যাক্স রহিত করার প্রস্তাব আসছে, আমরা অবশ্যই এটাকে স্বাগত জানাই। কিন্তু আমরা এয়াক্রাফট হরদম আমদানি করি না।"
"আমি তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে একটা এয়ারক্রাফট নিয়ে আসব, কিন্তু আমাকে যন্ত্রাংশ নিয়ে আসতে হয় রেগুলার ভিত্তিতে। কিন্তু এয়ারক্রাফটের যন্ত্রাংশ বেশ দামি। আমরা চাই এয়ারক্রাফটের সাথে যন্ত্রাংশের উপরেও যেন অ্যাডভান্সড ট্যাক্স মওকুফ করা হয়," যোগ করেন তিনি।
তারা যা চেয়েছেন তার খুব অল্প পরিমাণই প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিফলিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "একটা এয়ারক্রাফটের মধ্যে লাখ লাখ পার্টস থাকে। সবগুলো তো আর ট্যাক্স গাইডের মধ্যে উল্লেখ করা সম্ভব না। কয়েকটা আইটেম যেটা উল্লখ করা আটটা সাব-ক্লাসের মধ্যে, সেটা আমরা ট্যাক্স ছাড়া আনতে পারি। আর যেগুলো উল্লেখিত নাই, সেগুলোর উপর ট্যাক্স আরোপ করা হয়।"
মফিজুর রহমান বলেন, "আমরা চাচ্ছিলাম পাশ্ববর্তী দেশ এবং বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এয়ারক্রাফটের এই যন্ত্রাংশের উপরে ট্যাক্সটা রহিত করার জন্য। কিন্তু সেটার ব্যাপারে কোনো কিছু বাজেট প্রস্তাবে আসেনি।"
আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিমান আমদানির জন্য অগ্রিম কর ছাড়ের প্রস্তাব করেছেন।
ফলে আসন্ন অর্থবছরে এয়ারক্রাফট আমদানি আরো সস্তা হতে চলেছে।
একইসাথে, বিমানের নিউম্যাটিক টায়ারের গ্রাহক শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
এয়ারক্রাফট এবং হেলিকপ্টারের ইঞ্জিনে ব্যবহৃত স্পার্কিং প্লাগের গ্রাহক শুল্কও ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
অগ্রিম কর অব্যাহতি থেকে অপারেটররা কতটা লাভবান হবেন?
গত সপ্তাহে ঢাকায় 'প্রসপেক্ট অব বাংলাদেশ অ্যাজ রিজিওনাল এভিয়েশন হাব' শীর্ষক সেমিনারে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, "স্বাধীনতার পর গত দুই বছর এয়ারক্রাফট আমদানির জন্য এই অ্যাডভান্স ট্যাক্স যুক্ত করা হয়েছে ৫ শতাংশ। ভারতকে যদি একটা এয়ারক্রাফট ডেমেস্টিকে কিনতে হয় ২০ মিলিয়ন ডলারে, আমাকে কিনতে হবে ২২ মিলিয়ন ডলারে। আর যদি লিজে এয়ারক্রাফট আনা হয়, তাহলে সেটা আরো কঠিন। কারণ ভ্যাট ১৫ শতাংশ এবং ট্যাক্স অন্যান্য খাতে ১৩ শতাংশ।"
তবে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এটিএম নজরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "বাজেট প্রস্তাব পাসের পর অপারেটররা এ ধরনের অগ্রিম কর দিতে স্বস্তি পাবে। ২ মিলিয়ন ডলার কর্তন এই সেক্টরের জন্য একটি বড় সুবিধা।"
"আমরা নতুন এয়ারক্রাফট কেনার পাশাপাশি লিজ করেও অনেকগুলো নিয়ে আসি। অ্যাডভান্স ট্যাক্সের কারণে লিজ করার জন্য অনেকটা ডাবল পে-ম্যান্ট করতে হতো।
একইসাথে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের জেনারেল ম্যানেজার মো. কামরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "এই অগ্রিম কর অব্যাহতির কারণে আমরা এখন স্বস্তি পাব।"
এওএবি এনবিআরের কাছে আসলে কী প্রস্তাব করেছে
এনবিআর এর সঙ্গে প্রি-বাজেট বৈঠকে এওএবি এর পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়, বর্তমানে অ্যারোনেটিক্যাল ও নন-অ্যারোনেটিক্যাল চার্জের উপর আরোপিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং নিরাপত্তা ও উন্নয়ন ফি এর উপর আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহার, এয়ারলাইন্স/এভিয়েশন খাতের বিদ্যমান কর্পোরেট কর ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নিয়ে আসা, দেশি-বিদেশি ট্রেনিং ব্যয়ের উপর অগ্রিম আয়কর ১০ শতাংশ এবং ভ্যাট ১৫ শতাংশ প্রত্যাহার করা।
এছাড়া বিগত বাজেট থেকে চার্টার্ড বিমান ও হেলিকপ্টারের পরিবহনের উপর ২৫ শতাংশ এসডি এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য আছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে ২৫ শতাংশ এসডির জায়গায় ১৫ শতাংশ এবং ভ্যাট সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার প্রস্তাব জানানো হয়।
তবে এসব দাবি পূরণ করা হয়নি।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, "পাশ্ববর্তী যে কোনো দেশে এভিয়েশনে স্ট্রেইট ওয়েতে লো-কাস্টম ডিউটি। আমাদের এখানে কাস্টম ডিউটি শুধু বেশিই না, এটা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি।"
তিনি বলেন, "ভারতে ৮০ সিট পর্যন্ত ল্যান্ডিং পার্কিং এর জন্য কোনো ফি দিতে হয় না। এয়ার কানেক্টিভিটি সৃষ্টি করে রাস্তার উপরে চাপ কমানোর জন্য তারা এইটা ওয়েভ করে দিয়েছে। অথচ আমাদের এখানে প্রতিবছরই এটা বাড়ছে।"
বেসামরিক বিমান চলাচল, পর্যটন খাতের সুবিধার্থে বাজেট বাড়ানো হয়েছে
২০২২-২৩ অর্থবছরে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট বরাদ্দ হলো ৭,০০৪ কোটি টাকা; যা বর্তমান অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ২৬১৯ কোটি টাকা বেশি।
গত অর্থবছরের মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ৩২ কোটি টাকা।
মূলত এভিয়েশন ও পর্যটন খাতের অবকাঠােমা উন্নয়নের জন্য এই বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অংশীজনরা বলছেন, প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে এভিয়েশন খাত এসব উন্নয়নের ফলে লাভবান হবেন।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, "পর্যটনের বিকাশ ও প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে পর্যটন সম্ভাবনাময় ৩৬টি জেলার ব্র্যান্ডিং করে বিভিন্ন পর্যটন এলাকার ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সৌন্দর্যায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।