জুলাইয়ের জন্য বাজারভিত্তিক সুদহারের রেফারেন্স রেট ৭.১৩% ঘোষণা
জুলাইয়ের জন্য নতুন বাজারভিত্তিক সুদহারের রেফারেন্স রেট ৭.১৩ শতাংশ ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন এ নিয়মে সব ধরনের ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়বে।
এই রেফারেন্স রেট অনুযায়ী, ব্যাংক ঋণের সুদহার হবে ১০.১৩ শতাংশ। এছাড়া, সিএমএসএমই (অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি) ও ভোক্তা ঋণের আওতাধীন ব্যক্তিগত ঋণ এবং গাড়ি ক্রয়ের ঋণে আরও ১ শতাংশ তদারকি মাশুল যুক্ত করে হার দাঁড়াবে ১১.১৩ শতাংশ।
রেফারেন্স ইন্টারেস্ট রেট (সুদহার) হলো আর্থিক চুক্তির ভিত্তি। কখনও কখনও একে বেঞ্চমার্ক ইন্টারেস্ট রেটও বলা হয়ে থাকে।
'সিক্স মান্থ মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল' (ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের চলমান গড়) বা 'স্মার্ট' নামে পরিচিত এই রেফারেন্স লেন্ডিং রেট (ঋণের সুদহার) ব্যাংক এবং নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) উভয়ের জন্যই মার্জিন প্রদান করে।
এক্ষেত্রে স্মার্ট রেটের ওপর ব্যাংক ৩ শতাংশ পর্যন্ত এবং নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৫ শতাংশ পর্যন্ত মার্জিন প্রয়োগ করতে পারে৷
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ছয় মাসের ট্রেজারি বিলের গড় হার হিসাব করে নতুন এই রেফারেন্স রেট প্রকাশ করেছেন।
তবে কৃষি ও পল্লী ঋণের সুদহার হবে ৯.১৩ শতাংশ। যদিও বর্তমানে কৃষিঋণে সুদহার ৮ শতাংশ এবং অন্য ঋণে সুদহার ৯ শতাংশ।
আর ক্রেডিট কার্ডে সুদহার আগের মতোই ২০ শতাংশ বহাল থাকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কোনো সুদ আরোপ করার পর ছয় মাসের মধ্যে তা পরিবর্তন করা যাবে না। এরমধ্যে সুদহার বাড়লেও ব্যাংক গ্রাহকের সুদ বাড়াতে পারবে না। আবার সুদহার কমলেও গ্রাহকের সুদ কমবে না।
কোনো ঋণ মেয়াদের আগে সমন্বয় করতে চাইলে সিএমএসএমই ও ভোক্তা ঋণের আওতাধীন ব্যক্তিগত ঋণ ও গাড়ি ক্রয় ঋণের ক্ষেত্রে ১ শতাংশ তদারকি মাশুল আনুপাতিক হারে আদায় করতে হবে। ফলে বছরের মাঝখানে কেউ ঋণ শোধ করে দিতে চাইলে তার ঋণের ওপর ০.৫০ শতাংশ হারে তদারকি মাশুল নিতে পারবে ব্যাংক।
প্রচলিত ব্যাংকের পাশাপাশি ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোকেও একই নিয়মে মুনাফা হিসাব করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, সুদহারের সীমা বেঁধে দেওয়া থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরে আসায় এতে কিছুটা সুদহার বাড়ল। তবে তাদের মতে, এখনো এটি নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার মধ্যেই রয়ে গেছে, পুরোপুরি বাজারভিত্তিক হয়নি।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতি মোকাবেলায় সুদহারের সীমা তুলে নিয়েছে, তবে এই পদক্ষেপ এখনও সম্পূর্ণভাবে বাজারভিত্তিক হয়নি, কারণ হার নির্ধারণের এই ফর্মুলা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।
গত ২০২০ সালের এপ্রিলে ব্যাংক উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে ৯ শতাংশ সুদহার কার্যকরের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক ৯ শতাংশ সুদহার বেঁধে দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার রোববার (১৮ জুন) মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে বলেন, "যখন সুদহার ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ ছিল, তখন ব্যবসার খরচ কমাতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুদহার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল। তখন বিদেশি ঋণ ২ শতাংশ সুদে পাওয়া যেত। আবার বর্তমান প্রেক্ষাপটে সুদহার বাড়ানো প্রয়োজন। আমরা সরকারকে এটা বোঝাতে সক্ষম হওয়ায় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেই আবার ঋণের সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা তুলে দেওয়া হচ্ছে।"