চট্টগ্রাম বন্দরে ইলেকট্রনিক ডেলিভারি অর্ডারে কমছে সময় ও হয়রানি
চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি পণ্য ডেলিভারি নিতে ইলকট্রনিক ডেলিভারি অর্ডার (ইডিও) সিস্টেম চালু করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ)। ডিজিটাল এই পদ্ধতির মাধ্যমে পণ্যের শুল্কায়ন শেষে শিপিং এজেন্ট, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার থেকে দ্রুত ডেলিভারি অর্ডার নিয়ে বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি নিতে পারবে আমদানিকারকরা। গত ১ এপ্রিল থেকে এই সিস্টেম চালু করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এই ব্যবস্থার ফলে ভুয়া ডেলিভারি অর্ডারের মাধ্যমে শুল্ক কর পরিশোধ ছাড়া, পণ্য ডেলিভারি নেওয়ার অপচেষ্টা কমবে। শুল্কায়নের পর ডেলিভারি অর্ডার নেওয়ার প্রক্রিয়ায়, একদিনের কাজ ৫ থেকে ১০ মিনিটে করা সম্ভব হবে। এতে অর্থ, সময় এবং শ্রম অপচয় কমবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো: ওমর ফারুক বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালন কার্যক্রমকে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনার অংশ হিসেবে এপ্রিল থেকে ইডিও চালু হলো। শিপিং লাইনগুলো শতভাগ ইডিও ইস্যু করলেও ফ্রেইট ফারোয়ার্ডারদের ক্ষেত্রে এই হার কিছুটা কম। তবে ধীরে ধীরে শতভাগ ইডিও এর আওতায় চলে আসবে।
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ট্রায়াল ভিত্তিতে ইডিও জারির জন্য ৬টি শিপিং কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো। শিপিং কোম্পানিগুলো হলো- এমএসসি মেডিটেরনিয়ান শিপিং কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড, এপিএল বাংলাদেশ (প্রাইভেট) লিমিটেড, মায়েরস্ক বাংলাদেশ লিমিটেড, কন্টিনেন্টাল ট্রেডার্স বিডি লিমিটেড, কন্টিনেন্টাল ট্রেডার্স এবং ওশেন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। এরপর ১ এপ্রিল থেকে সব শিপিং কোম্পানির জন্য বাধ্যতামূলক করা হয় এই ইলেকট্রনিক ডেলিভারি সিস্টেম।
ইডিও সিস্টেমের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কতৃৃপক্ষ পোর্ট কমিউনিটি সিস্টেম নামে একটি পৃথক পোর্টাল তৈরি করেছে। টার্মিনাল অপারেটিং সিস্টেমে (টস) এটি পরিচালিত হয়। পোর্টালে পণ্য ডেলিভারির সাথে যুক্ত সিএন্ডএফ এজেন্ট, শিপিং এজেন্টস, ফ্রেইট ফারোয়ার্ডারের লগ ইন করার সুযোগ আছে।
জাহাজ থেকে পণ্য বন্দর ইয়ার্ডে নামার পর, আমদানিকারকের পক্ষে সিএন্ডএফ এজেন্ট এই পোর্টালে লগ ইন করে ইডিও পেতে আবেদন করবে। এই তথ্য একইসাথে শিপিং লাইন এবং ফ্রেইট ফারোয়ার্ডারকেও অবহিত করবে সিএন্ডএফ এজেন্ট। পোর্টালে লগ ইন করে শিপিং এজেন্ট মাসুল আদায় করে, সিএন্ডএফ এজেন্ট ও ফ্রেইট ফারোয়ার্ডারকে পাঠাবে। একইভাবে ফ্রেইট ফারোয়ার্ডার তাদের মাসুল আদায় করে, সেটি পোর্টালে আপলোড করবে।
আগের নিয়মে বন্দরের কাস্টমস থেকে শুল্কায়ন শেষে, শিপিং লাইন অফিসে সশরীরে এসে ডেলিভারি অর্ডার নিয়ে যেতে হতো সিএন্ডএফ এজেন্টদের। শিপিং লাইনের অফিস থেকে ইডিও নিয়ে এ সংক্রান্ত নথি নিয়ে আর বন্দরে যাওয়ার দরকার নেই এখন। যখনই শিপিং লাইন অফিস থেকে ডিও ইস্যু করা হবে বন্দর, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার, সিএন্ডএফ এজেন্ট সবার কাছে চলে যাবে। শিপিং লাইনের কাজ শেষ করে সিএন্ডএফ এজেন্ট বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি নিতে পারবে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস ক্লিয়ারিং এন্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবেদিন রানা বলেন, আমরা নতুন এই ডেলিভারি সিস্টেমকে স্বাগত জানাই। এতে ডেলিভারি অর্ডার প্রক্রিয়ায় ঝামেলা এবং সময় দুই-ই কমবে।
মেডিটেরনিয়ান শিপিং কোম্পানির হেড অব অপারেশন এন্ড লজিস্টিকস আজমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, ডেলিভারি অর্ডার নিতে এখনো দুটো অপশন রাখা হয়েছে। এই নিয়মটি খুবই সহজ। আশা করছি, সবাই দ্রুত এই সিস্টেমের সাথে মানিয়ে নিতে পারবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের এখন দুটো সিস্টেমে আপেডেট করতে হবে। একবার বন্দরের সিস্টেমে, আবার শিপিং লাইনের সিস্টেমে। টস এর ইন্টারকানেকটিভিটি নেই আমাদের সিস্টেমে। যার কারণে পোর্ট এর সিস্টেমেও কাজ করতে হবে, আমাদের সিস্টেমেও কাজ করতে হবে। আমরা এ ব্যবস্থাকে সাধুবাদ জানাই। আশা করি, অল্প সময়ের মধ্যে সবাই এতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, বন্দর থেকে প্রতিদিন পণ্যবাহী চার থেকে সাড়ে চার হাজার টিইইউএস কন্টেইনার ডেলিভারি হয়। ১ এপ্রিল ডেলিভারি হয়েছিলো ৪,৫৭৩ কন্টেইনার। গত ১০ এপ্রিল ডেলিভারি হয় ৩,০২৫ কন্টেইনার।
বন্দর সূত্র জানায়, পরীক্ষামূলক চালু হওয়ার পর ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে গত ৫ এপ্রিল পর্যন্ত অনলাইনে জমা পড়ে প্রায় ৪৮ হাজার ডেলিভারি অর্ডারের আবেদন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১,৩৩৩টি আবেদন জমা পড়ে।
চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার রাখার সক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউএস। ১০ এপ্রিল সকাল ৮টা পর্যন্ত বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেইনার ছিল ৩৬ হাজার ৯৫১ টিইইউএস।
প্রসঙ্গত, বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি নিতে প্রতিদিন প্রায় আট হাজার ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরি প্রবেশ করে। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে বন্দরে গাড়ি প্রবেশের ফি আদায় প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে গত বছরের ১৫ আগষ্ট দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে 'Entry fee collection at Ctg port going digital' শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান টিবিএসকে বলেন, ইডিও সিস্টেমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকায় বন্দরের ডেলিভারি কার্যক্রম বাড়বে।
"সশরীরে অফিসে না এসে সংশ্লিষ্টরা দরকারি কাজ অনলাইনেই সারতে পারবেন। কাজের সময় কমবে আর এই সিস্টেম অবৈধ লেনদেন ও ভুয়া ডেলিভারিও বন্ধ হবে"- যোগ করেন তিনি।