আদুরে টম অ্যান্ড জেরি’র বয়স এখন ৮০
এক ইঁদুর আর এক বিড়াল- চির বৈরী কিন্তু তবুও পরস্পরের সহচর তারা। এক জনকে ছেড়ে আরেকজনের কথা চিন্তাই করা যায় না। নিশ্চয়ই বুঝে ফেলেছেন কাদের কথা বলছি। হ্যাঁ, বলছি টেলিভিশন জগতের জনপ্রিয় দুই অ্যানিমেটেড চরিত্র টম অ্যান্ড জেরির কথা। আজ এই কার্টুনের ৮০ বছর পূর্ণ হলো।
এই কার্টুনের নির্মাতা বিল হ্যানা ও জো বারবারা কাজ করতেন প্রযোজক সংস্থা মেট্রো গোল্ডেন মায়ের (এমজিএম) এর অ্যানিমেশন বিভাগে। অন্যান্য অ্যানিমেশন স্টুডিও পর্কি পিগ ও মিকি মাউসের মত সফল কার্টুন তৈরি করতে পারলেও এমজিএম তখনও সাফল্যের মুখ দেখেনি।
অনেকটা বিরক্ত হয়েই এই দুই নির্মাতা, ভিন্ন কিছু করার চিন্তা করতে থাকেন। তাদের দু'জনের বয়সই তখন ত্রিশের নিচে ছিল। বারবারা প্রস্তাব করেন ইঁদুর ও বিড়ালের প্রতিদিনের খুনসুটির কাহিনী নিয়ে অ্যানিমেশন তৈরি করার। এর আগে যদিও অসংখ্যবার এই পটভূমিতে কার্টুন তৈরি করা হয়েছে, তবু তারা ভাবলেন নতুন কিছু করার কথা।
১৯৪০ সালে তারা প্রথমবার প্রকাশ করেন স্বল্পদৈর্ঘ্য অ্যানিমেটেড ছবি 'পুস গেটস দ্য বুটস’। প্রথম ছবিটি সফলতা পায় এবং সেরা অ্যানিমেটেড শর্টফিল্ম বিভাগে অস্কার মনোনয়ন পায় নির্মাতা স্টুডিও। শুরুতে টমের নাম ছিল জাসপার আর জেরির জিঙ্কস।
প্রথম পর্বের শুরুতে টম জেরির লেজ নিয়ে খেলা করত, জেরিকে বল বানিয়ে ক্যাচ ক্যাচ খেলত। প্রথম পর্বটিই জিতে নেয় অস্কার এবং কোটি কোটি মানুষের হৃদয়। অসংখ্য মানুষ চিঠি লিখে জানায়, তারা টম ও জেরিকে আরও চায়।
১৯৫৮ সাল পর্যন্ত তারা নির্মাণ করেছিলেন কার্টুনটির ১১৪টি পর্ব। আর এই ১৮ বছরে একাডেমি পুরস্কারে স্বল্পদৈর্ঘ্য অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র বিভাগে সাতবার জিতে নিয়েছিল সেরা পুরস্কার।
এরপর নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়েছে টম আর জেরির জুটি। কখনো নির্মাতাদের টিম বদলে গেছে, সিনেমা থেকে বদলে এসেছে টিভি সিরিজ আকারে। কিন্তু যত দিন গেছে, তত মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে কার্টুনটি।
১৯৭৫ সালে ‘টম অ্যান্ড জেরি’ শুরু হয় টেলিভিশন সিরিজ আকারে। ১৯৮০ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত চলেছে টম অ্যান্ড জেরি কমেডি শো। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত চলেছে আরেকটি সিরিজ, নাম টম অ্যান্ড জেরি কিডস। ২০০৬ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত চলেছে টম অ্যান্ড জেরি টেলস। ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত চলছে দ্য টম অ্যান্ড জেরি শো।
জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত টম অ্যান্ড জেরি: দ্য মুভি মুক্তি পায় ১৯৯২ সালে। তাদের নিয়ে আরও একটি চলচ্চিত্র মুক্তি পাবে এ বছর।
আপাতদৃষ্টিতে সহিংস কিছু কাহিনীর চিত্রায়ন ও ইঙ্গিতপূর্ণ হাস্যরসাত্মক দৃশ্যপট থাকলেও বিশ্বজুড়ে এখনও দারুণ জনপ্রিয় টম অ্যান্ড জেরি। জাপান থেকে পাকিস্তান পর্যন্ত পৃথিবীর সবখানেই শিশুদের টেলিভিশনে এই কার্টুন দেখতে পাওয়া যায়। চীনে টম অ্যান্ড জেরির একটি নতুন মোবাইল ফোন গেম ১০ কোটির বেশি মানুষ ব্যবহার করে।
এখন আশিতে এসেও কোনো ক্লান্তি নেই টম আর জেরির। শিশুদের হাসিয়ে যাচ্ছে, বড়দের স্মৃতিকাতর করে তুলছে।
উইলিয়াম হানা চলে গেছেন ২০০১ সালে, ৯০ বছর বয়সে। এর পাঁচ বছর পর ২০০৬ সালে ৯৫ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়েছেন এই কার্টুনের আরেক জনক জোসেফ বারবেরা। তবে এখনও দৌড়ে চলেছে নেই দুই ইঁদুর আর বিড়াল।
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কার্টুন বিশেষজ্ঞ জেরি বেক বলেন, বিশ্বব্যাপী মানুষ নিজেদের জীবনের সাথে মিল খুঁজে পান বলেই এতটা জনপ্রিয়তা লাভ করেছে টম অ্যান্ড জেরি।
তিনি বলেন, "জেরি'র সাথে মানুষ সহজে নিজেদের মিল খুঁজে পায় কারণ আমাদের প্রায় সবার জীবনেই অত্যাচারী চরিত্র রয়েছে।"
"অফিসের বস, বাড়ির মালিক বা রাজনীতির ক্ষেত্রে সবসময়ই অত্যাচারী চরিত্র খুঁজে পাই আমরা। আর আমরা সাধারণত নিজেদের মত করে জীবন চালাতে চাই, যেখানে কেউ না কেউ বিরক্ত করে।"