রেকর্ডে রেকর্ডে এগোচ্ছে সাকিবের বিশ্বকাপ মিশন
অসাধারণ, অনবদ্য, অবিশ্বাস্য কিংবা অতিমানবীয়; কোনো বিশেষণই এখন আর যথেষ্ট নয় তার জন্য। ব্যাটে-বলে রেকর্ড ভাঙা গড়ার খেলায় তিনি জাদুকর, এসব তার বাঁহাতের খেল। নামটি যে সাকিব আল হাসান, সেটা হয়তো না বলে দিলেও চলে। এমন বর্ণনার সঙ্গে কেবল বাংলাদেশ প্রাণ ভোমরার নামটিই যে যতার্থ, তা এতোদিনে প্রমাণ হয়ে গেছে।
বিশ্ব ক্রিকেটে নিজের বড় নামের মাহাত্ম্য বজায় রেখেই এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু করেছেন সাকিব। প্রতি ম্যাচেই একটা না একটা রেকর্ডে তুলে যাচ্ছেন নিজের নাম। তাতে আরও বাড়ছে আশা। অনেকেই হিসাব মেলাচ্ছেন, ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেই সাকিবেরই কি দেখা মিলতে যাচ্ছে?
ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সেই বিশ্বকাপে সাকিব ছিলেন স্বপ্নের মতো ছন্দে। বেশ কটি রেকর্ড গড়েন, যা বিশ্বকাপে তাকে অবিসংবাদিত অলরাউন্ডারে পরিণত করে। ইতিহাসের একমাত্র অলরাউন্ডার হিসেবে একই আসরে ৫০০ রান ও ১০ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েন তিনি।
একই ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেট; সাকিবের কল্যাণে দ্বিতীয়বার দেখে বিশ্বকাপ। ৮ ম্যাচে ২টি সেঞ্চুরি ও ৫টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৮৬.৫৭ গড়ে ৬০৬ রান করেন সাকিব, যা ছিল আসরের তৃতীয় সর্বোচ্চ। বল হাতে নিয়েছিলেন ১১ উইকেট।
এবারও যেন সেই পথে হাঁটছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার। তিন ম্যাচে ইতোমধ্যে সাকিবের শিকার ৯ উইকেট। ব্যাট হাতে করেছেন ১০৮ রান। পাশাপাশি প্রায় প্রতি ম্যাচে গড়ছেন রেকর্ড। এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ২ উইকেট নিয়ে এই ফরম্যাটের সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক হয়ে যান বাঁহাতি এ স্পিনার। ৮৯ টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের উইকেট এখন ১১৫টি। এ পথে তিনি পেছনে ফেলেছেন লাসিথ মালিঙ্গাকে। ৮৪ টি-টোয়েন্টিতে ১০৭ উইকেট নিয়ে এতোদিন শীর্ষে ছিলেন শ্রীলঙ্কার সাবেক তারকা এই পেসার।
সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হওয়ার পথে স্পিনার হিসেবে রঙিন সব গল্প এঁকে রেখে এসেছেন সাকিব। টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের একমাত্র স্পিনার হিসেবে ১০০ টির বেশি উইকেটের মালিক তিনি। ৯৮ উইকেট নিয়ে স্পিনারদের মধ্যে দুই নম্বরে পাকিস্তানের সাবেক লেগ স্পিনার শহীদ আফ্রিদি।
স্কটিশদের বিপক্ষে দুই উইকেট শিকারে আরও একটি অনন্য রেকর্ডে নাম লেখান সাকিব, ক্রিকেট ইতিহাসে যোগ করেন নতুন পাতা। ওই ম্যাচে ৬০০ আন্তর্জাতিক উইকেট (তিন ফরম্যাট মিলিয়ে) পূর্ণ হয় তার। ১০ হাজার রানের কোটা পূর্ণ হয়েছে বেশ আগেই (সাকিবের রান ১২ হাজার ২৮৮)। দুইয়ে মিলিয়ে ক্রিকেট ইতিহাসের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ১০ হাজার রান ও ৬০০ উইকেটের ডাবল পূর্ণ করেন সাকিব। এই ডাবলে তার ধারে কাছেও কেউ নেই।
বৃহস্পতিবার পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে আরেকটি মাইলফলক স্পর্শ করেছেন সাকিব। বাঁহাতি এই স্পিনার একাই পিএনজির ইনিংস ধসিয়ে দেন। ৪ ওভারে মাত্র ৯ রান খরচায় ৪টি উইকেট নেন তিনি, যা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তার সেরা বোলিং ফিগার। এই ৪ উইকেটে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি পাকিস্তানের সাবেক লেগ স্পিনার শহীদ আফ্রিদিকে ছুঁয়ে ফেলেছেন সাকিব। দুজনের উইকেটই এখন ৩৯টি, আরেকটি উইকেটে রেকর্ডটি নিজের করে নেবেন তিনি।
ব্যাট হাতে ৪৬ রান ও পরে ৪ উইকেট; স্বভাবতই আবারও ম্যাচসেরা সাকিব। এখানেও তিনি অনবদ্য। আইসিসির ইভেন্টে বাংলাদেশের জয় মানেই সেখানে কাণ্ডারি সাকিব। এর আগে আইসিসির ইভেন্টে পাওয়া বাংলাদেশের সর্বশেষ পাঁচটি জয়ের সবকটিতেই ম্যাচসেরা হয়েছেন তিনি। সংখ্যাটাকে ছয়ে নিয়ে গেলেন সাদা বলের ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার।
শুরুটা ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ঐতিহাসিক জয়ে ব্যাট হাতে ১১৪ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংস খেলেন সাকিব। বল হাতে উইকেট না পেলেও ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছিল তার ঝুলিতেই।
এর পরের তিনটি ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে। নিজেদের প্রথম ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ে ব্যাটে-বলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন সাকিব। ৭৫ রান ও ১ উইকেট নিয়ে হন ম্যাচসেরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১২৪ রানের অপরাজিত ইনিংস ও ২ উইকেট নিয়ে আবারও সাকিব ম্যাচসেরা।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে আরও দোর্দন্ড প্রতাপে হাজির হন সাকিব। ৫১ রান ও ২৯ রানে ৫ উইকেট নিয়ে তৃতীয় ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন তিনি। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও একই গল্প লেখা হয়। ওমানের বিপক্ষে ম্যাচ জেতে বাংলাদেশ, ম্যাচেসরা হন সাকিব। পিএনজির বিপক্ষেও ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠলো তার ঝুলিতে।