১৫০টি কাস্টমস স্টেশন বন্ধ করার কথা ভাবছে এনবিআর
আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চলে না, কিংবা অবকাঠামো দুর্বল– এমন প্রায় ১৫০টি ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন (এলসি স্টেশন) বন্ধ করে দিতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বাদবাকী যে ৩০টির মত স্টেশন চলমান রয়েছে, সেগুলোর অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়িয়ে সেগুলোকে আরো কার্যকর করতে চায় সংস্থাটি।
এ লক্ষ্যে বুধবার সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে সভা করেছে এনবিআর, যাতে সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
সভা সূত্র জানিয়েছে, এটি এখনো চূড়ান্ত করেনি এনবিআর। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্যদের সঙ্গে আলোচনার পর তা চূড়ান্ত করা হবে।
সূত্র জানিয়েছে, সভায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) ছাড়াও বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ)সহ আমদানি-রপ্তানিকারক অন্যান্য সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে এফবিসিসিআিই'র সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "যেসব এলসি স্টেশন কার্যকর নয়, সেগুলো বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে আমাদের কোন আপত্তি নেই। আমরা এনবিআরকে তা জানিয়েছি"।
তবে সভায় যেসব স্টেশন রাখা হবে, সেগুলোর আবকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা যাতে নিশ্চিত করা হয়, সে অনুরোধ জানানো হয়েছে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে। সূত্র জানায়, এ বিষয়ে এনবিআরও ইতিবাচক মতামত দিয়েছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন এলাকার ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন হিসেবে স্বীকৃতি পায় সরকারের কাছ থেকে। স্বাধীনতার আগে এমনকি কিছু কিছু স্টেশন ব্রিটিশ আমল থেকেও চালু হয়ে আসছে। বর্তমানে কাগজে কলমে এমন এলসি স্টেশনের সংখ্যা ১৮৪টি।
কিন্তু এসব স্টেশন দিয়ে তেমন আমদানি-রপ্তানি হতো না। এর মধ্যে কোন কোন স্টেশনে আমদানি-রপ্তানি তো নেই ই, এমনকি কোন রাস্তাঘাট কিংবা অবকাঠামোও নেই। বর্তমানে দেশে ৩০টির মতো এলসি স্টেশনে মোটামুটি আমদানি-রপ্তানি হয়। এর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি বাদে বাকী এলসি স্টেশনগুলোর অবকাঠামোসহ আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য সুবিধায় যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।
আর বাকী বিপুল সংখ্যক স্টেশনে গত কয়েক দশক ধরেই কোন কার্যক্রম নেই।
এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বর্তমানে ৩০টির মতো এলসি স্টেশন ফাংশনাল। বাকীগুলোর মধ্যে অনেকগুলোতে গত ৩০-৪০ বছর ধরে কোন কার্যক্রম নেই"।
"তবে এ বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে"।
সভায় উপস্থিত বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ) এর নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলে শামীম এহসান বলেন, "যেসব এলসি স্টেশন ফাংশনাল নয়, সেগুলো বন্ধ করা নিয়ে আমাদের কোন আপত্তি নেই। তবে বর্তমানে যেসব স্টেশন চালু রয়েছে, সেগুলোর সুবিধা বাড়ানো এবং প্রয়োজন অনুযায়ী যাতে পণ্য ও কাঁচামাল আমদানি করা যায়, তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছি"।
তিনি বলেন, "বর্তমানে এলসি স্টেশনের মধ্যে কেবল বেনাপোল বন্দর দিয়ে ইয়ার্ন আমদানি করা যায়। এর ফলে ওই এলসি স্টেশনের উপর অনেক চাপ পড়ে যায়। এর বাইরে ভোমরা, দর্শনা দিয়ে ইয়ার্ন আমদানির সুযোগ দেওয়া ও এসব স্টেশনের অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়ানো দরকার"।
বর্তমানে দেশে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয় যশোরের বেনাপোল বন্দর। এর বাইরে দর্শনা, তামাবিল, সোনা মসজিদ, হিলি, বুড়িমারি, জকিগঞ্জ, আখাউড়াসহ আরো কিছু স্টেশন রয়েছে।