পর্যটন ধসে ৪ লাখ কোটি ডলার ক্ষতির মুখে বৈশ্বিক অর্থনীতি
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ২০২০ ও ২০২১ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে ৪ লাখ কোটি ডলারের বেশি লোকসান যোগ করতে পারে। ইতঃপূর্বে যা অনুমান করা হয়েছিল এ ক্ষতি তার চাইতেও ভয়াবহ। সবচেয়ে ক্ষতির শিকার হবে আন্তর্জাতিক পর্যটক আসার ওপর নির্ভরশীল উন্নয়নশীল দেশগুলো। উন্নত দেশের তুলনায় এসব দেশে অসম টিকাকরণের অবস্থাই এজন্য দায়ী।
জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা- আঙ্কটাডের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, টিকাদানে এগিয়ে থাকা উন্নত দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে আন্তর্জাতিক পর্যটন জোরদার হলেও, শুধুমাত্র চলতি বছরের ক্ষতি এক লাখ ৭০ হাজার কোটি থেকে দুই লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত হতে পারে।
অসম টিকাদানকেই পর্যটন শিল্পের এ দুরাবস্থার জন্য দায়ী করা হয় আঙ্কটাডের প্রাক্কালন গবেষণায়। এতে করে মোট বৈশ্বিক জিডিপির ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতির মুখ দেখবে উন্নয়নশীল দেশগুলো।
অধিকাংশ অঞ্চলে টিকাদানের হার নিম্নমুখী হওয়ায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও চলাচলে বিধি-নিষেধ কার্যকর রয়েছে, এতে পর্যটন অর্থনীতির সংকট দূর হতে যে আরও অনেক সময় লাগবে- সে বিষয়টিও প্রতিবেদনে উঠে আসে।
এ বাস্তবতায় ২০২৩ সালের আগে বৈশ্বিক ভ্রমণকারীদের সংখ্যা মহামারি পূর্ব সময়ের অবস্থানে ফিরবে না বলেই আশংকা করছে আঙ্কটাড। সাম্প্রতিক গবেষণাটি জাতিসংঘের পর্যটন সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে করা হয়।
সেখানে সবচেয়ে ক্ষতির শিকার হিসেবে থাইল্যান্ড ও তুরস্ককে উল্লেখ করা হয়। এ দুটি দেশই বৈদেশিক মুদ্রার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যটনের অনেকাংশে ওপর নির্ভরশীল। তাছাড়া, পর্যটনের ধস বিশ্বব্যাপী খাদ্য, পানীয়, খুচরা পণ্য বিক্রি, যোগাযোগ ও পরিবহনের মতো খাতকেও নেতিবাচক চাপে ফেলার ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।
পর্যটনে ধস অদক্ষ জনশক্তির সার্বিক বেকারত্বের পরিমাণ গড়ে ৫.৫ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য দায়ী। অথচ, এতে নারী ও তরুণ জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। অর্থাৎ, তাদের জীবিকা অনিশ্চিয়তার কালো মেঘে ঢাকা পড়েছে।
এব্যাপারে জাতিসংঘের পর্যটন সংস্থার মহাসচিব জুরাব পলোলিকাশভিলি বলেন, "লাখ লাখ মানুষের জীবনধারণের অবলম্বন হলো পর্যটন। তাই কর্মসংস্থানের পুনরুদ্ধার এবং অতি-দরকারি রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে সামাজিক সুরক্ষা ও সমর্থনে টিকাকরণ জোরদার করার কোনো বিকল্প নেই, এক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশের টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।"
মুদ্রার ওপর পিঠের মতোই পর্যটনে ধনী দেশের চিত্র আশাব্যঞ্জক। জুন নাগাদ আঙ্কটাডের কনুজ্যমার কনফিডেন্স ইনডেক্স সূত্রে জানা যায়, টিকা পাওয়া মার্কিন নাগরিকদের অনেকেই এখন বিদেশ ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন।
সূত্র: ব্লুমবার্গ