সরকারি হাসপাতালগুলোতে চাহিদার ১০ শতাংশের কম শয্যা: বিবিএসের জরিপ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পক্ষ থেকে প্রতি হাজার মানুষের জন্য হাসপাতালে ৩.৫টি শয্যার ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দিলেও দেশের সরকারি হাসপাতালে হাজার মানুষের জন্য শয্যা আছে মাত্র ০.৩২টি। সরকারের পক্ষ থেকে চাহিদার ১০ শতাংশের কম শয্যার ব্যবস্থা করার সুযোগ নিয়ে ফুলেফেঁপে উঠছে স্বাস্থ্য খাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো।
দেশের বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়, মূল্য সংযোজন, উদ্বৃত্ত অস্বাভাবিকহারে বাড়ছে। এ সব প্রতিষ্ঠানের সঞ্চয় বাড়ছে বছরে ২১ শতাংশের বেশি হারে। স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে আয় থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি বছর অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করছে ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ।
সোমবার প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান জরিপের ফলাফলে এসব তথ্য উঠে এসেছে। জিডিপির ভিত্তিবছর ২০০৫-০৬ অর্থবছর থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে হালনাগাদ করার লক্ষ্যে চলমান একটি প্রকল্পের আওতায় এ জরিপ করা হয়।
পরিসংখ্যান ভবনে বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে প্রতিবেদন তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক আব্দুল খালেক।
অনুষ্ঠানে তিনি জানান, প্রতিবেদনটি তৈরি করতে ২০১৭ ও ২০১৮ সালের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে।
এ হিসাবে জরিপের তথ্য অন্তত তিন বছরের পুরাতন। করোনার কারণে স্বাস্থ্য সেবায় বড় ধরনের চাপ আসলেও এ সংক্রান্ত কোন তথ্য প্রকাশ করা হয়নি প্রতিবেদনটিতে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে সরকারি হাসপাতালে প্রতি হাজার মানুষের জন্য ০.৩২টি শয্যা রয়েছে। আর বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা আছে ০.৬৪টি। সরকারি-বেসরকারি মিলে হাসপাতালে হাজার মানুষের জন্য শয্যা আছে ০.৯৬টি, যা চাহিদার মাত্র ২৭ শতাংশ।
জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বেসরকারি খাতে রোগ নির্ণয় কেন্দ্র, হাসপাতাল, মেডিকেল ক্লিনিক ও ডেন্টাল ক্লিনিক মিলে দেশে নিবন্ধিত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ছিল প্রায় ১৭ হাজার।
এসব প্রতিষ্ঠানে ৩.৬৯ লাখ মানুষের কাজের ব্যবস্থা হয়েছে। এদের মধ্যে ৩.১৬ লাখ পূর্ণকালীন।
তবে বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক হিসাব ক্রমেই স্ফীত হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রতিবেদনটি। এতে বলা হয়েছে, বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবায় স্থুল উৎপাদনের পরিমাণ ২০১৭ সালের ২৩,০৬৭ কোটি টাকা থেকে ১৬ শতাংশ বেড়ে পরের বছর দাঁড়িয়েছে ২৬,৭৩৭ কোটি টাকায়। এর মধ্যে ২০১৭ সালে মূল্য সংযোজন হয়েছে ১৯,২২৯ কোটি টাকা যা মোট উৎপাদনের ৭২ শতাংশ।
এসব প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের বেতন ভাতা বাবদ ২০১৮ সালে ৯৭০৩ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। বেতন পরিশোধ বাদে বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে ওই বছর পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৯৫২৬ কোটি টাকা।
২০১৬ সালের তুলনায় পরের বছর মুনাফার পরিমাণ ২২ শতাংশের বেশি বেড়েছে বলে প্রতিবেদনটিতে উঠে এসেছে।
দেশের হাসপাতালগুলো ২০১৮ সালে ৮৯০৪ কোটি টাকা সঞ্চয় করেছে বলে জানিয়েছে বিবিএস। এক বছরে সঞ্চয় বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ। একই হারে বেড়েছে ব্যয়যোগ্য আয়ও।
স্বাস্থ্য খাতের আয় অন্য খাতে বিনিয়োগের প্রবণতাও বাড়ছে বলে জানিয়েছে বিবিএস। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠান ২০১৭ সালে ৬৯৬২ কোটি টাকা অন্য খাতে বিনিয়োগ করেছে। যা ১৮ শতাংশ বেড়ে পরের বছর দাঁড়িয়েছে ৮২৩৫ কোটি টাকায়।
মোট ধানের ৩৫.৪২ শতাংশ ব্যবহার করেন কৃষক
কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য নিজেদের ভোগের চেয়ে বাজারেই বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে পৃথক অনুষ্ঠানে প্রকাশিত কৃষি পণ্যের স্থুল বাজারজাতকৃত উদ্বৃত্ত জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রতিবেদন উপস্থাপন করে প্রকল্প পরিচালক জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের বড় অংশ চলে যাচ্ছে বাজারে। এর ফলে ট্র্রেডিংয়ের মাধ্যমে অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজনও হচ্ছে বেশি।
অনুষ্ঠানে সচিব মোহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, প্রথমবারের মতো এই জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রবৃদ্ধির হিসাব করার ক্ষেত্রে হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যাবে। কোভিডের মধ্যেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বিবিএস'র কাজ থেমে নেই। হালনাগাদ তথ্য দেয়ার মাধ্যমে বিবিএস জাতীয় নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ধানের ক্ষেত্রে কৃষকরা যে পরিমাণ উৎপাদন করে তার ৩৫ দশমিক ৪২ শতাংশ তারা নিজেরাই ভোগ করে থাকে। বাকি ৬৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ চলে যায় বাজারে বিক্রির জন্য। এছাড়া দানাদার শস্যের ক্ষেত্রে কৃষকরা ভোগ করে ১৮ দশমিক ৯০ শতাংশ, আর বাজারে বিক্রির জন্য যায় ৮১ দশমিক ১০ শতাংশ।