ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে ভালো মানের সুরক্ষা দেয় অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও ফাইজারের টিকা: ল্যানসেট
ভারতে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট হয়ে উঠেছে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। ইতঃপূর্বে, সংক্রামক ক্ষমতা বেশি থাকা যুক্তরাজ্যে শনাক্ত আলফা ভ্যারিয়েন্টের চাইতেও ডেল্টায় আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি দ্বিগুণ বেড়ে যায়। তবে আশার কথা হলো, ফাইজার ইঙ্ক ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা পিএলসি'র তৈরি কোভিড টিকা দুটি ভাইরাসের এ স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে ভালো মানের সুরক্ষা দেয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের শীর্ষ সাময়িকী ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত এক বৈজ্ঞানিক গবেষণা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গবেষণাটি করেছেন পাবলিক হেলথ স্কটল্যান্ড ও এডিনবরো ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা। তবে গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ডেল্টা ধরনের বিরুদ্ধে ফাইজার- বায়োএনটেকের কোভিড প্রতিষেধক অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের চাইতে বেশি কার্যকর সুরক্ষা দিতে পারে।
চলতি ২০২১ সালের ১ এপ্রিল থেকে গত ৬ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সী টিকাপ্রাপ্ত জনসংখ্যার মধ্যে সংক্রমণের তথ্য বিশ্লেষণ করেই তারা এমন প্রমাণ পান।
বিজ্ঞানীদের টিমটি আলোচিত সময়ে মোট ১৯,৫৪৩টি নিশ্চিত সার্স কোভ-২ সংক্রমণের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। এদের মধ্যে ৩৭৭ জনকে কোভিড-১৯ জনিত অসুস্থতায় স্কটল্যান্ডের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
পরীক্ষাধীন কেসের মধ্যে স্কটল্যান্ডে ৭,৭২৩টি সামাজিক সংক্রমণ এবং ১৩৪ জনের হাসপাতালে ভর্তির জন্য ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টই দায়ী ছিল।
বিশ্লেষণে আরও উঠে আসে, ফাইজার টিকার দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণকারীর শরীরের টিকা নেওয়া দুই সপ্তাহ পর 'আলফা' ধরনটির বিরুদ্ধে ৯২ শতাংশ এবং ডেল্টা ধরনের বিরুদ্ধে ৭৯ শতাংশ প্রতিরোধ গড়ে ওঠে।
একইভাবে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজের পর 'আলফা' ধরনের বিরুদ্ধে ৭৩ শতাংশ এবং 'ডেল্টা'র বিরুদ্ধে ৬০ শতাংশ প্রতিরোধ গড়ে ওঠে, বলে গবেষকরা জানান।
এছাড়া, দুই ডোজের ভ্যাকসিন ডেল্টা ধরনের বিরুদ্ধে সিঙ্গেল ডোজের চাইতে অনেক ভালো মানের সুরক্ষা দিতে পারে বলেও তারা প্রমাণ পেয়েছেন।
ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধের লেখকরা বলেছেন, "কোভিডের আলফা ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট-ই সবচেয়ে মারাত্মক। আলফার তুলনায় ডেল্টায় আক্রান্তদের হাসপাতালের ভর্তির সম্ভাব্যতা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। তবে যারা নানা প্রকার দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছেন; তাদের গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি আলফার তুলনায় পাঁচগুণ বাড়ে।"
তবে বিজ্ঞানীরা টিকার প্রাণরক্ষাকারী ভূমিকাও তুলে ধরে বলেন, "অক্সফোর্ড- অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং ফাইজার- বায়োএনটেক উভয় পক্ষের আবিষ্কৃত টিকাই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়। আর যারা এরমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন তাদের হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও কমায়।"
বিজ্ঞানীর অবশ্য আলফা ধরনের তুলনায় ডেল্টার বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন দুটির কম কার্যকারিতার দিকটিও উল্লেখ করেন। একইসঙ্গে, বিভিন্ন সংস্থার তৈরি টিকার মধ্যে তুলনামূলক বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনার ফলাফল টিকাপ্রাপ্ত বয়স শ্রেণির ভিন্নতা দ্বারাও প্রভাবিত হয়ে থাকতে পারে বলে তারা সতর্ক করেছেন। যেমন ইতঃপূর্বে, স্কটল্যান্ডসহ সমগ্র যুক্তরাজ্য ৩০ বছর বা তদূর্ধদের অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
- সূত্র: দ্য প্রিন্ট