১১৩ দিন সমুদ্রে ভাসার পর ইন্দোনেশিয়ায় ঠাঁই পেল রোহিঙ্গা শরণার্থীবাহী নৌকা
গত ফেব্রুয়ারি মাসে কয়েক ডজন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে নিয়ে সমুদ্রে যাত্রা শুরু করে ছোট একটি নৌকা। ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ভাসতে ভাসতে এটি আন্দামান সমুদ্রে পৌঁছোয় এবং অবশেষে ১০০ দিনেরও বেশি সময় পর তা ইন্দোনেশিয়ার একটি দ্বীপে গিয়ে থামে।
শুক্রবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।
নৌকাটি গত ১১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে ৯০ রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে। যাত্রীদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। জানা যায়, তারা মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন। কিন্তু কক্সবাজার ছেড়ে যাওয়ার চার দিন পরেই নৌকার ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায়।
প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে নিপীড়নের ভয়ে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম এখন শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশের কক্সবাজারে বাস করছেন।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কাজ করা আরাকান প্রজেক্টের পরিচালক ক্রিস লেওয়া বলেন, 'আমরা জেনেছি, তাদের মধ্যে ৮১ জন এখনো সুস্থ আছেন এবং নৌকাটি ইন্দোনেশিয়ার আচেহের ইদামান দ্বীপে গিয়ে পৌঁছেছে। কিন্তু তারা সেখানে শতভাগ নিরাপদ নন। আমরা আশা করি, তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে না।'
এর আগে, সমুদ্রে যাত্রা করা ৯০ জনের মধ্যে আটজনের মৃতদেহ উদ্ধার করে ভারতীয় কোস্টগার্ড। তারাই প্রথমে নৌকাটিকে চিহ্নিত করে এবং ফেব্রুয়ারিতেই মেরামত করে দেয়।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে দিলেও নিজেদের দেশে জায়গা দিতে রাজি হয়নি। অন্যদিকে, বাংলাদেশও এই ৮১ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ফিরিয়ে নেবে না বলে জানায়।
গত তিন মাস ধরে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ও বেঁচে ফেরা শরণার্থীদের পরিবারবর্গ মিলে ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কাছে বারবার আবেদন করেছে তাদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়ার জন্য।
এদিকে, ইন্দোনেশিয়া শুক্রবার এই বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
রোহিঙ্গা এমন একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যাদের বেশিরভাগকেই বৌদ্ধ ধর্মপ্রধান মিয়ানমার নাগরিকত্ব দিতে রাজি হয়নি। তারা রোহিঙ্গাদের অবৈধ বাংলাদেশি হিসেবে গণ্য করে।
বর্তমানে এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্যাম্পে বাস করছেন। ২০১৭ সালে মিয়ানমারে বিশেষ সেনা অভিযানের পর লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন।
মানব পাচারকারীরা প্রায়ই মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কাজের লোভ দেখিয়ে রোহিঙ্গাদের ছোট নৌকায় করে বিপজ্জনক যাত্রার দিকে ঠেলে দেয়।
-
সূত্র: রয়টার্স