পুরোদমে কারখানা চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেন তৈরি পোশাক মালিক ও রপ্তানিকারকরা
স্বাস্থ্যবিধি মেনে সর্বোচ্চ সংখ্যক কর্মী নিয়ে পুরোদমে কারখানা চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন দেশের তৈরি পোশাক শিল্প (আরএমজি) রপ্তানিকারকরা। কোভিড-১৯ সংক্রমণ এবং মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়ায় সরকার অর্ধেক জনবল নিয়ে সব প্রতিষ্ঠান চালানোর নির্দেশনা দিলেও ভিন্নপথে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের তৈরি পোশাক শিল্প খাত।
সরকারি নির্দেশনার প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করে তৈরি পোশাক মালিক ও রপ্তানিকারকরা জানান, ক্রয়াদেশ বাতিল কিংবা পারিশ্রমিক স্থগিতাদেশ এড়িয়ে সঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে পূর্ণাঙ্গভাবে কারখানার কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হবে।
বৃহস্পতিবার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কেএম আবদুস সালাম বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে রপ্তানিকারকরা জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানাগুলো পূর্ণাঙ্গ জনবল নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ড. রুবানা হক এ চিঠিতে স্বাক্ষর করেন। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির প্রথম ধাক্কা সামলে নেওয়া শুরু করেছে তৈরি পোশাক শিল্প খাত। নতুন সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করা হলে শিল্প-কারখানাগুলো সময়মতো চালান পাঠাতে ব্যর্থ হবে। ফলস্বরূপ, খাতটি বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
কর্মী সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে নজরদারির দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন বিজিএমইএ পরিচালক রেজওয়ান সেলিম। তিনি জানান, ইতোমধ্যে বিজিএমইএর সকল সদস্য কারখানাকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
"কর্মীদের মাস্ক পরতে হবে। কারখানায় প্রবেশের পূর্বে তাদের তাপমাত্রা যাচাই করা হবে। সেইসাথে হাত ধুয়ে এবং স্যানিটাইজার ব্যবহার করে তাদের কারখানায় প্রবেশ করতে হবে। শুধু কর্মস্থলে নয়, কারখানায় প্রবেশ এবং বহির্গমনের সময় কর্মীদের সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে," বলেন তিনি।
বিজিএমইএ'র চিঠির বক্তব্য অনুযায়ী, প্রথম ওয়েভ চলাকালে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের মাধ্যমে কারখানাগুলো কর্মীদের সংক্রমণের হার দশমিক শূণ্য তিন শতাংশের নিচে রাখতে সক্ষম হয়েছিল।
চিঠিতে আরও বলা হয়, পশ্চিমা বিশ্বে মহামারির দ্বিতীয় ওয়েভ আসার পর ক্রয়াদেশ ৩০- ৪০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায়। এছাড়া, বিদেশি ক্রেতারা বিদ্যমান অর্ডারগুলো দ্রুততম সময়ের মাঝে পাঠানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিলেন।
'আরেকটি প্রণোদনা জরুরি'
বিজিএমইএ'র পরবর্তী নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী 'সম্মিলিত পরিষদে'র নেতা ফারুক হাসান জানান, করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ পোশাক শিল্প খাতে তীব্র আঘাত সৃষ্টি করেছে। খাতটিতে পুনরায় প্রণোদনা প্রণয়ন জরুরি। একই সাথে সরকারের নিকট সহায়ক নীতিমালাও প্রত্যাশা করেন তিনি।
"গত বছরের ডিসেম্বরে ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়েভ শুরু হয়। সেখানকার পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক। আর তাই আমরা এখন বড় ধরনের সংকটের মাঝে আছি," বলেন তিনি।
"পাশাপাশি আমাদের ক্রয়াদেশ বাতিলসহ বসন্ত/গ্রীষ্মকালীন চালানের স্থগিতাদেশ এবং শরৎ/ শীতকালীন কাজ কমে যাওয়া- ইত্যাদি নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আমরা সাধারণত, এপ্রিল থেকে শরৎ/ শীতকালীন চালানের কাজ করে থাকি," দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন তিনি।
"ফলে তৈরি পোশাক খাতের অর্থচক্রে বিঘ্নতার সৃষ্টি হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বাধা অতিক্রম করে টিকে থাকতে প্রণোদনা প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরি," বলেন ফারুক হাসান।
তিনি আরও জানান, বিদ্যমান ঋণের পুনর্গঠন এবং পুনঃঅর্থায়ন, স্বল্প সুদে নতুন মূলধনী ঋণ গ্রহণ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানার জন্য বিশেষ ধরনের ঋণ পরিকল্পনা প্রণয়নের বিষয়ে পোশাক শিল্প সমিতি সরকারের সাথে কাজ করবে।
"কঠিন এই পরিস্থিতির সাথে লড়াই করে টিকে থাকা এবং কারখানাগুলোকে বন্ধ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করাই আমাদের লক্ষ্য। যদি কারখানা বন্ধ না করে আরও ছয় মাস টিকতে পারি, তবে আমরা ব্যবসায়িক পুনরুদ্ধার এবং প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারব বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস," বলেন তিনি।