কর্ণফুলী নদীতে প্রথম বেসরকারি জেটিতে ভিড়লো স্ক্র্যাপবাহী জাহাজ
পানামা পতাকাবাহী জাহাজ 'দিনা ওশান' জাপানের চিবা বন্দর থেকে ১৫ হাজার মেট্রিকটন স্ক্র্যাপ পণ্য নিয়ে গত ২৩ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পৌছায়। চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে শিডিউল অনুযায়ী জাহাজটি বার্থিং পেতে সময় লাগতো অন্তত ২২ দিন।
কিন্তু কর্ণফুলী নদীর তীরে কর্ণফুলী ড্রাই ডক এর প্রথম বেসরকারি জেটিতে দিনা ওশান জাহাজটি বহির্নোঙ্গরে আসার ৭ দিনের মাথায় ৩০ মার্চ জেটিতে ভিড়েছে। এতে জাহাজটির সময় সাশ্রয় হয়েছে ১৫ দিন।
শিপিং এজেন্টের তথ্য অনুযায়ী এই জাহাজটির একদিনের ভাড়া প্রায় ১৫ হাজার ডলার। ১৫ দিন আগে বার্থিং পাওয়ায় আমদানিকারকের এতে সাশ্রয় হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ডলার।
১৫৪.৫ মিটার লম্বা এবং ৮.৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজটিতে রয়েছে দেশের বৃহৎ রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম'র রড উৎপাদনের কাঁচামাল জিআই স্ক্র্যাপ।
আমদানিকারক এবং সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বেসরকারি জেটিতে বড় জাহাজ ভেড়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে বহির্নোঙ্গরে জাহাজের গড় অবস্থান সময় কমে আসবে। দেশের অর্থনীতির জন্য এটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক খবর।
চট্টগ্রাম বন্দরের ডেপুটি কনজারভেটর ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম বলেন, বেসরকারী জেটিতে ভেড়ানোর কারণে জাহাজটি ১৫ দিন আগে বার্থিং পেয়েছে। এটি বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থান ও সময় কমিয়ে আনতে ভূমিকা রাখবে।
তিনি আরো বলেন, বেসরকারি এই জেটির দৈর্ঘ্য ১০৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩০ মিটার। জেটির ড্রাফট ১০ মিটার। তবে জেটির দৈর্ঘ্য আরো ৩০ মিটার বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। তখন এই জেটিতে ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানো যাবে।
বিএসআরএম এর হেড অব সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট সঞ্জয় কুমার ঘোষ বলেন, বাংলাদেশের আমদানিকারকদের প্রতিবছর শিপিং ডেমারেজ বাবদ প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বিদেশী জাহাজ কোম্পানীগুলোকে পরিশোধ করতে হয়। খাদ্য পণ্য নিয়ে জেটিতে ভেড়ার জন্য বন্দরের বহির্নোঙ্গরে ২৫ দিন ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এই অবস্থায় বেসরকারি জেটির কার্যক্রম শুরু হওয়া নিঃসন্দেহে দেশের অর্থনীতির জন্য সুখবর বয়ে এনেছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুয়ায়ী, ২০১৯- ২০ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর ৮৭,২৭৫,২৪৮ মেট্রিক টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮২,৯৩৯,৭৩১ মেট্রিক টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭৮,০৫০,৪৪৭ মেট্রিক টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬৬,৪৬৪,২৮৫ মেট্রিক টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫৮,৩২৪,৭৮৬ মেট্রিক টন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪৮,৯৪১,৪০৬ মেট্রিক টন আমদানি কার্গো হ্যান্ডেলিং করে।
প্রতিবছর কার্গো আমদানি বাড়লেও সেই তুলনায় বাড়েনি বন্দরের সক্ষমতা। তবে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল, বে টার্মিনাল, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর এমন কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এই পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হবে।
কর্ণফুলী ড্রাইডক এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এম এ রশিদ বলেন, বন্দরের জেটির তুলনায় কার্গো আমদানির পরিমাণ বেশি হওয়ায় জাহাজকে দিনের পর দিন বর্হিনোঙ্গরে বসে থাকতে হয়। সেই চিন্তা থেকে আমরা জেটি নির্মাণের উদ্যোগ নিই। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আরো একটি জেটি জাহাজ ভেড়ানোর উপযোগী হবে। দুটি জেটিতে প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২টি জাহাজের মালামাল খালাস করা সম্ভব হবে।
মঙ্গলবার জেটিতে দেখা যায় জাহাজটি ভেড়ার পর পণ্য খালাসের প্রস্তুতি নিচ্ছেন শ্রমিকরা। জেটির পাশে পণ্য নেওয়ার অপেক্ষায় আছে সারিবদ্ধ ট্রাক।
বার্থ অপারেটর রুহুল আমিন এন্ড ব্রাদার্স এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আবদুল মবিন বলেন, জাহাজ ভেড়ার পর মঙ্গলবার বিকেল থেকে শুরু হয়েছে পণ্য খালাস। আগামী ৫-৬ দিনের মধ্যে পণ্য খালাস শেষ হবে।
দিনা ওশান জাহাজটির স্থানীয় শিপিং এজেন্ট এভারেট বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক মো: আসিফ ইফতেখার হোসাইন বলেন, 'একটি জাহাজ ২২-২৩ দিন অপেক্ষার কারণে জাহাজের প্রিন্সিপালদের কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হতো। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতো। অনেক জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসতে অপারগতা প্রকাশ করতো। নতুন এই জেটি নির্মাণেরে ফলে আন্তর্জাতিক মেরিটাইম সেক্টরে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে'।