বাজার নিয়ন্ত্রণে তেল, চিনি ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করবে সরকার

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
09 February, 2021, 10:45 pm
Last modified: 10 February, 2021, 02:24 am
দর নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে প্রথমেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারিত অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ‘মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি’ তৈরি করছে জাতীয় মূল্য পর্যবেক্ষণ ও নির্ধারণ কমিটি

বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য ভোগ্যপণ্যের দাম বেধে দিচ্ছে সরকার। তেল, চিনির স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের সাম্প্রতিক সময়ের অস্থিরতা এবং রমজান মাস কেন্দ্রিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতেই সরকার এই পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

দর নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে প্রথমেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারিত অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের 'মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি' তৈরি করছে জাতীয় মূল্য পর্যবেক্ষণ ও নির্ধারণ কমিটি। বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিবিসি) অধীনে এ কমিটি গঠন করা হয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঘোষিত অত্যাবশ্যকীয় পণ্য; তেল, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, ডাল, ছোলা, শুকনা মরিচ, এলাচ, ধনে, জিরা, আদা, লবণসহ মোট ১৭টি পণ্য। এরমধ্যে তেল, চিনি, পেঁয়াজ, আদা, ডাল ও ছোলার বাজারে প্রতি বছরই অস্থিরতা তৈরি হয়।

এদিকে গত বছরের শেষ দিকে পেঁয়াজের বাজারের অস্থিরতা কাটতে না কাটতেই, শুরু হয়েছে সয়াবিন তেলের বাজারে দরবৃদ্ধির উত্তাপ। আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে স্থানীয় বাজারে লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে সয়াবিন তেলের দাম। যেকারণে ভোক্তাদের সর্বোচ্চ ১৪০ টাকা লিটার হিসেবে সয়াবিন তেল কিনতে হচ্ছে। চিনির দাম ৬৫-৭২ টাকা থেকে বেড়ে ৭০-৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলমা মাওলা- দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সরকার ব্যবসায়ীদের নিয়ে দাম নির্ধারণ করতে পারলে ভালো। তবে তা কতটা বাস্তবায়ন করতে পারবে- তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।'

অন্যদিকে আগামী এপ্রিলের মাঝামাঝিতে শুরু হবে রমজান মাস। রমজানকে সামনে রেখে প্রতিবছরই তেল, চিনি ও পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। সরকার বারবার বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা বললেও, মূলত নিয়ন্ত্রণ থাকে ব্যবসায়ীদের হাতে। এবারও রমজানের আগে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে আগেভাগেই, এধরনের ব্যবস্থা নিতে চাচ্ছে সরকার।

ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মুন্সি শাহাবুদ্দীন আহমেদ- দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এটা হলে ব্যবসায়ীরা একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।'

জাতীয় মূল্য পর্যবেক্ষণ ও নির্ধারণ কমিটি সূত্রে জানা গেছে, কমিটি প্রথমেই তেল ও চিনির মূল্য নির্ধারণে সরকারকে সুপারিশ করবে। তারপর অন্য পণ্যগুলোর দাম নির্ধারণে কাজ করবে।

অবশ্য, সয়াবিন তেলের দাম কমানো বা বাড়ানোর আগে পরিশোধনকারী মিলগুলোর গঠিত এসোসিয়েশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ট্যারিফ কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানায়। তবে কোন কোন সময় না জানিয়েও তেলের দাম বৃদ্ধির নজির দেখা গেছে।  

জানা গেছে. তালিকাভুক্ত ১৭টি পণ্যের সবগুলোই আমদানি নির্ভর। লবণে আমদানি নির্ভরতা কম থাকলেও মাঝেমধ্যে বাজারে এর সংকট তৈরি হয়। এজন্য আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দ্রুতই তার প্রভাব স্থানীয় বাজারেও পড়ে।

তাই কমিটি পণ্যগুলোর উৎপাদন ও আমদানি মূল্য পর্যালোচনা করবে। এরসঙ্গে মিলিং, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও প্যাকেটজাতকরণের খরচ, আমদানি শুল্ক, পরিবহন খরচ, উৎপাদক ও আমদানিকারকের মুনাফা, পরিবেশক/পাইকারী ব্যবসায়ীর মুনাফা ও খুচরা ব্যবসায়ীর মুনাফা পর্যালোচনা করে মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতির খসড়া প্রণয়ণের কাজ করছে।

জাতীয় মূল্য পর্যবেক্ষণ ও নির্ধারণ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী; বিটিটিসির যুগ্ম-প্রধান মনজুর মোর্শেদ চৌধুরীকে আহবায়ক করে ৯ সদস্যের একটি কারিগরি কমিটি করা হয়েছে। চলতি মাসের ৪ তারিখে গঠন করা এই কমিটি খসড়া তৈরির কাজ করছে। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে জাতীয় মূল্য পর্যবেক্ষণ ও নির্ধারণ কমিটির কাছে খসড়া জমা দেওয়া হলে- তা যাচাই বাচাই শেষে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় মূল্য পর্যবেক্ষণ ও নির্ধারণ কমিটির এক সভায় বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স এসোসিয়েশনের পক্ষে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিত সাহা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত চিনির মূল্যে উর্ধ্বমুখি প্রবণতা রয়েছে, যা স্থানীয় বাজারে মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা উচিৎ।

একই বৈঠকে বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড- এর পরিচালক মো. ওবায়দুল আজম বলেন, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন, ১৯৫৬ অনুযায়ী সরকার কতিপয় পণ্যকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। এসকল পণ্যের মূল্য ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা সরকারের দায়িত্ব। সে লক্ষ্যে আমদানি নির্ভর এসকল পণ্যের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারদর পর্যালোচনা করে; যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতি প্রণয়ন করা দরকার।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.