ব্রহ্মপুত্র নদের উজানে চীনের নির্মাণ কাজ মোকাবিলায় ভাটিতেও বাঁধ দিচ্ছে ভারত
ব্রহ্মপুত্র নদের উজানে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছে চীন, এমন সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই উদ্বিগ্ন ভারত। দেশটি তাই পুর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচলে চীনা স্থাপনার বিরূপ প্রভাব এড়াতে ভাটিতে নিজেরাও বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।
ভারতীয় এক কর্মকর্তার বরাতে এব্যাপারে নিশ্চিত করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। বাঁধটি ১০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন সক্ষম স্থাপনার অংশ হিসাবে নির্মাণ করা হবে, বলে তিনি জানিয়েছেন।
চীনে ইয়ারলুং-সাংবো নামে পরিচিত ব্রহ্মপুত্র তিব্বত থেকে ভারতের অরুণাচল প্রদেশে প্রবেশ করে আসাম হয়ে বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়। একারণে ভারতের উদ্বেগ চীনা প্রকল্পগুলোর কারণে আকস্মিক বন্যা এবং পানি সঙ্কটের মতো পরিস্থিতি দেখা দেবে।
টি এস মেহরা নামের ভারতের কেন্দ্রীয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ ওই কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, 'চীনা প্রকল্পের ক্ষতিকর প্রভাব এড়াতেই এখন অরুণাচলে একটি বড় বাঁধ নির্মাণ সময়ের প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।'
পানি প্রবাহে চীনা স্থাপনার প্রভাব এড়াতে অনেক বেশি পরিমাণে পানি ধরে রাখতে চায় ভারত। 'সেই অনুসারে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া একটি প্রস্তাব সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিবেচনাধীন রয়েছে' বলেই জানান তিনি।
ব্রহ্মপুত্র নদের উপর পরস্পর বিরোধী বাঁধ নির্মাণের এই প্রটিযোগীতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হতে পারে বাংলাদেশের মতো উজানের দেশ। আর এমন সময় এই পরিকল্পনার কথা জানা যাচ্ছে, যখন ভারত চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক সর্বনিম্ন পর্যায়ে।
হিমালয়ের উচ্চতায় দুই দেশের সেনাবাহিনী পরস্পরের মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। বিগত কয়েক মাস ধরেই চলছে এমন উত্তেজনা।
ব্রহ্মপুত্র বাঁধ নির্মাণ দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার আরেক স্ফুলিঙ্গ তৈরি করবে বলেও সতর্ক করেছেন কিছু বিশেষজ্ঞ। কারণ চীনের বাঁধটি তৈরি হবে ভারত সীমান্তের বেশ কাছেই।
এব্যাপারে ভারত-চীন সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ব্রহ্ম চেলানী এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, 'ভারত স্থলসীমায় হিমালয়ে চীনের আগ্রাসনের শিকার। নিজের আঙ্গিনাতেও ভারতের নৌ আধিপত্য সঙ্কোচনের হুমকিতে। এখন তার সঙ্গে যোগ হয়েছে পানি নিয়ে যুদ্ধ।''
এর আগে গত সোমবার চীনা রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানায়, ব্রহ্মপুত্র নদের একটি অংশে চীন ৬০ মেগাওয়াট সক্ষমতার একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করার কথা ভাবছে। চীন সরকারের এক শীর্ষ নির্বাহীর বরাতে তারা একথা জানায়।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাওয়ার কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন অব চায়নার ওই নির্বাহী হচ্ছেন সংস্থার চেয়ারম্যান ইয়ান ঝিয়ং। তিনি জানান, নদে বাঁধ দেওয়ার এই পরিকল্পনা একটি 'ঐতিহাসিক সুযোগ।'
এব্যাপারে মেহরা জানান, ''আমরা তাদের (চীন) আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছি তোমাদের নেওয়া কোনো পদক্ষেপ যেন ভারতে বিরূপ প্রভাব না ফেলে। তারা আমাদের আশ্বস্তও করে। কিন্তু, কতদিন তাদের এই আশ্বাস টিকবে তা নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে।''
এশিয়ার বৃহৎ নদীগুলিতে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো সাম্প্রতিক কয়েক বছরে আঞ্চলিক উত্তেজনার ক্রমবর্ধমান উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, চীন মেকং নদীর উপর নির্মিত যেসব সিরিজ বাঁধ নির্মাণ করেছে তা উজানে ক্ষরার মতো নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বেইজিং বরাবর এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
আর চীন যদি ব্রহ্মপুত্র নদের 'গ্রেট ব্যান্ড' নামে পরিচিত অংশে বাঁধ নির্মাণ করে, তাহলে ভারতের জন্য যথেষ্ট দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠবে। কারণে, এখানেই ইয়ারলুং (ব্রহ্মপুত্র) একটি বাঁক নিয়ে কিছু দক্ষিণে গিয়ে তারপর ভারতে প্রবেশ করেছে। পাহাড়ি অঞ্চলের এই বাঁকের মধ্যে বিপুল পরিমাণ পানিও জড়ো হয়। এমন আশঙ্কার কথা তুলে ধরেন নয়াদিল্লি ভিত্তিক অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামের একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্কের গবেষক সায়াংশু মোদক।
তিনি অবশ্য বলেন, এই অঞ্চলটি ভূতাত্ত্বিক দিক থেকেও অস্থিতিশীল এবং তা সম্ভাব্য বাঁধ নির্মাণকে চ্যালেঞ্জিং করে তুলবে।
বাংলাদেশে পরিবেশবাদী প্রচারণা সংস্থা-রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকন বলেছেন, যে কোনও বাঁধ তৈরির আগে তা নিয়ে চীনের বহুপাক্ষিক আলোচনার আয়োজন করা উচিত।
তিনি বলেন, ''পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এনিয়ে উজান অঞ্চলে চীনের প্রতিবেশীদের উদ্বেগের সঙ্গত কারণ রয়েছে।''