কোভিড-১৯: মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ৫ মাস পর সিঙ্গাপুরের হাসপাতাল ছাড়লেন বাংলাদেশি
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশি এক কর্মী প্রায় ৫ মাস যাবত সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর অবশেষে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে সিঙ্গাপুরের দৈনিক স্ট্রেইট টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়ছে, রাজু সরকার নামে ৩৯ বছর বয়সী ওই বাংলাদেশি কর্মী হাসপাতালে তার ৫ মাসের চিকিৎসাকালীন সময়ে কয়েকবার 'মৃত্যুর খুব কাছাকাছি' গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তার ফিসে আসাটাকে 'বিস্ময়' বলছেন চিকিৎসকরা।
শুক্রবার সিঙ্গাপুরের টান টক সেং হাসপাতাল (টিটিএসএইচ) থেকে ছাড়া পেয়েছেন রাজু। দীর্ঘ চিকিৎসার ধকলে ইতোমধ্যেই ২৪ কেজি ওজন হারিয়েছেন তিনি।
সিঙ্গাপুরে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সময় ফেব্রুয়ারির যে ক'জন বাংলাদেশি আক্রান্ত হন তাদের মধ্যে একজন ছিলেন রাজু। তিনি অসুস্থ হওয়ার সময় বাংলাদেশে তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, গত ৩০ মার্চ তাদের একটি ছেলে হয়েছে। হাসপাতালে পাঁচ মাসের অধিকাংশ সময়ই তাকে আইসিইউতে কাটাতে হয়েছে।
হাসপাতালের রেসপিরেটোরি অ্যান্ড ক্রিটিকাল কেয়ার মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. বেঞ্জামিন হো বলেন, এত দীর্ঘ সময় আইসিইউতে থাকার পর তার নাটকীয়ভাবে সেরে ওঠায় বিস্মিত চিকিৎসকরাও। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় রাজুর অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন ছিল এবং দুই/তিন বার 'মৃত্যুর খুব কাছাকাছি গিয়েছিলেন' তিনি।
সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজিজেস-এনসিআইডির আইসিইউ-এর পরিচালক হিসেবেও কাজ করা এই চিকিৎসক আরও বলেন, "তার রক্তচাপ খুব কমে গিয়েছিল এবং তিনি অক্সিজেন নিতে পারছিলেনও খুব কম। আমরা ভেবেছিলাম, তাকে অনেকদিন অক্সিজেন দেওয়া লাগবে এবং সিঙ্গাপুরে প্রথম দিকের মৃত্যুর একটি হবে বলে খুবই উদ্বিগ্ন ছিলাম"।
করোনাভাইরাস রাজুর শরীরে বহুমাত্রিক প্রভাব ফেলেছে। তার শরীরে লবণ ও ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা কমে গেছে, হৃদযন্ত্রও দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফুসফুস, থাইরয়েড ও কিডনি জটিলতাও দেখা দিয়েছে। কিডনি সচল রাখতে সাময়িকভাবে তাকে ডায়ালাইসিস করতে হবে। দীর্ঘ সময় আইসিইউতে থাকায় তার মস্তিষ্কেও পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। এখনও সেরে ওঠার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন তিনি। দুই মাসের জন্য হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন রাজু । এই সময় পার হলে আবার তাকে ফলো-আপের জন্য আসতে হবে।
স্ট্রেইটস টাইমসকে রাজু বলেন, "আমি আমার ছেলে ও স্ত্রীকে দেখতে চাই। তিন বা চার মাসের মধ্যে বাড়ি যাওয়ার আশা করছি।"