আমদানি-রপ্তানির অনিয়ম ধরতে অডিট ফাইল সিলেক্ট করবে সফটওয়্যার
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2023/10/09/nbr.jpg)
আমদানি-রপ্তানিকারকদের অনিয়ম ধরতে অডিটের জন্য গতানুগতিক ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে সফটওয়্যার ভিত্তিক পদ্ধতি শুরু করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস বিভাগ।
এ লক্ষ্যে অন্তত ২৭ ধরণের ক্রাইটেরিয়া সেট করে দেওয়া হবে, যার ভিত্তিতে কোন আমদানি কিংবা রপ্তানিকারকের ফাইল অডিটের আওতায় আসা উচিত, তা সফটওয়্যার স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিলেক্ট করবে।
এর ভিত্তিতে এনবিআরের কাস্টমস রিস্ক ম্যনেজমেন্ট ইউনিট ওই ফাইলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির অডিটের পদ্ধতি ঠিক করে দেবে।
এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি এই প্রথমবারের মত সিস্টেম বেজড অডিট ম্যানুয়াল তৈরি করেছে। চলতি সপ্তাহে তা গেজেট আকারে প্রকাশ হওয়ার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে ওই সফটওয়্যার এনবিআরের হাতে এসেছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, এতদিন মূলত ট্রানজেকশন বেজড অডিট ব্যবস্থা চালু ছিলো এবং ম্যানুয়ালি অডিট ফাইল সিলেক্ট করা হতো।
কিন্তু সিস্টেম বেজড অডিট ম্যানুয়াল তৈরি হওয়ার ফলে অডিটের আওতাকে বিস্তৃত করার পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। অডিটের পর অনিয়ম উদ্ঘাটন হলে প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করা, ব্যাখ্যা নেওয়া এবং প্রযোজ্য ডিউটি-ট্যাক্স ও জরিমানা আদায়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পক্ষের দায়িত্ব ও সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হচ্ছে।
এটি কার্যকর হলে আমদানি-রপ্তানির নামে রাজস্ব ফাঁকি কিংবা মানি লন্ডারিং বহুলাংশে কমে যাবে বলে মনে করছেন এই ম্যানুয়াল তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, অটোমেশনের নামে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হলে তারা তা মেনে নেবেন না।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, "বর্তমানে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে কোন ধরণের ডেভিয়েশন পাওয়া গেলে তিন বছর পর্যন্ত অডিট করা যায়। তবে অটোমেশনের আওতায় আনার মাধ্যমে যদি কোন অনিয়মকারী কিংবা ফাঁকিবাজকে শাস্তির আওতায় আনা হয়, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। আমরা এর পক্ষে।"
"কিন্তু অটোমেশনের নামে কিছু কাজ অটোমেশন, আবার কিছু ম্যানুয়ালি করা এবং এর মাধ্যমে উদ্দেশ্যমূলক হয়রানি করা হলে আমরা তা মেনে নেব না", বলেন তিনি।
যদিও দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটির প্রধান মোঃ নেয়ামুল ইসলাম জানান, ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশন ও ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট প্র্যাকটিসের আওতায় এ ম্যানুয়াল তৈরি করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে কম মূল্য দেখালেই অডিট
আমদানি পণ্য চালান রপ্তানিকারক দেশের তুলনায় কম মূল্য দেখানো হলেই ওই পণ্য চালানসহ প্রতিষ্ঠান অডিটের মুখে পড়বে। এনবিআর কাস্টমস সূত্র জানায়, এছাড়াও ২৭ ধরণের ক্ষেত্র চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে, যার কারণে প্রতিষ্ঠান অডিটের মুখে পড়বে।
অডিট ম্যানুয়াল তৈরির লক্ষ্যে গঠিত কমিটি গত আগস্ট মাসে এ প্রতিবেদন জমা দেয়। তাতে এ বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে।
কমিটি প্রধান মোঃ নেয়ামুল ইসলাম বলেন, "সফটওয়্যার ফাইল সিলেক্ট করার পর এনবিআরের রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইউনিট অডিটের আওতা ঠিক করে দেবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় তথ্য অডিটের আওতায় আসবে।"
তিনি বলেন, "কেবল অডিট নয়, অডিট পরবর্তী রাজস্ব কিংবা জরিমানা কীভাবে, কত সময়ে সম্পন্ন করা হবে– তাও এই ম্যানুয়ালে ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।"
সিস্টেম বেজড অডিটের জন্য সফটওয়্যার আরো যেসব বিষয় বিবেচনায় নেবে তা হলো, ইতিপূর্বে যেসব পণ্যে অধিক ফাঁকি উদ্ঘাটিত হয়েছে, যেসব খাতের রাজস্ব আদায় সম্ভাবনার তুলনায় কম, যেসব প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব আগের বছরের তুলনায় অস্বাভাবিক পরিমাণে কম, স্থানীয় বিক্রির পাশাপাশি রপ্তানি রয়েছে- এমন প্রতিষ্ঠান।
এছাড়া যেসব পণ্যে রাজস্ব ফাঁকির সম্ভাবনা বেশি, যেসব পণ্যের টোটাল ট্যাক্স ইনসিডেন্স ১০০ শতাংশ বা তারও বেশি, রিবেট সুবিধা পাওয়া প্রতিষ্ঠান, মিস ডিক্লারেশনের প্রবণতা রয়েছে– এমন পণ্য, পূর্বে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া কিংবা অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া প্রতিষ্ঠান, যাদের কাছে সরকারের বিপুল রাজস্ব পাওনা রয়েছে, রিফান্ডের পরিমাণ বেশি, আমদানির তুলনায় রপ্তানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, পণ্যের রপ্তানিকারক ও নেগোশিয়েটিং ব্যাংক ভিন্ন হলে, সমজাতীয় পণ্যের মূল্যের তারতম্য হলে কিংবা সরবরাহকারীর ব্যবসায়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হলে সেসব প্রতিষ্ঠানের ফাইলও অডিটের জন্য নির্বাচন করবে সফটওয়্যার।
এছাড়া সরবরাহকারী ও আমদানিকারকের সাথে কোন ধরণের সম্পর্ক থাকলে, আমদানিকৃত পণ্য আমদানিকারকের ব্যবসায়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হলে কিংবা কম বেশি হলে, কাস্টমস প্রসিডিওর কোড সঠিকভাবে ঘোষণা করা না হলে কিংবা শর্ত পরিপালন না হলে, আমদানির এলসি সংশোধন করা হলে, ইনভয়েসে উল্লিখিত মূল্য কাস্টমস ভ্যালুয়েশন রুলস অনুযায়ী নির্ধারিত না হয়ে থাকলে, নন-কমপ্লায়েন্ট বন্ড প্রতিষ্ঠানও আসবে অডিটের তালিকায়।