যুক্তরাষ্ট্রে আমার কোনো বাড়ি নেই: ওয়াসার এমডি
যুক্তরাষ্ট্রে তার নিজের কোনো বাড়ি নেই বলে দাবি করেছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান।
সেখানে তার ১৪টি বাড়ি কেনা নিয়ে গণমাধ্যমে যে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে, সেসব এককথায় নাকচ করে দিয়েছেন তিনি।
তাকসিম এ খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমার যে ১৪টি বাড়ির কথা বলা হয়েছে তা শতভাগ মিথ্যা কথা। আমেরিকাতে আমার কিংবা পরিবারের কারো নামে কোনো বাড়ি নেই। যে প্রতিবেদন হয়েছে তার একটাও সত্য না। গত ১৩ বছর ধরে একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে এসব রটিয়ে যাচ্ছে।"
তিনি বলেন, "আমি ১৯৮৫ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা। প্রতিবেদনে শুধু একটি বিষয় ঠিক লিখেছে সেটা হচ্ছে আমার যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেনশিপ। আমার স্ত্রী সহ আমার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা। আমাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এনে ওয়াসার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।"
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খানের যুক্তরাষ্ট্রে ১৪টি বাড়ি কেনা সংক্রান্ত দুটি অভিযোগ সম্প্রতি জমা পড়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)।
একটি জাতীয় দৈনিকে যুক্তরাষ্ট্রে তাকসিম এ খানের ১৪ বাড়ি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর সোমবার (৯ জানুয়ারি) বিচারপতি মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ মৌখিকভাবে এ আদেশ দেন।
দুদকের সিনিয়র আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এ খবর আদালতের নজরে আনেন।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, তাকসিম এ খান যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে এসব বাড়ি কিনেছেন।
দেশ থেকে টাকা পাচার করে তিনি এসব বাড়ির মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইন্টারপোলসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তার এই অর্থের উৎস খুঁজতে শুরু করেছে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সন্দেহভাজন হিসেবে তাকসিমের নাম ঘোষণা করেছে।
তাকসিমের যুক্তরাষ্ট্রে ১৪টি বাড়ি ক্রয় এবং অর্থ পাচারকারী হিসেবে আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় নাম থাকা নিয়ে অভিযোগ দুটি জমা পড়ে দুদকে।
অভিযোগে একাধিক বাড়ির সুনির্দিষ্ট ঠিকানা, ছবি, কোন বাড়ি কখন এবং কত টাকা খরচ করে কেনা হয়েছে তার উল্লেখ রয়েছে।
২০০৯ সালে ওয়াসার এমডি পদে প্রথমবারের মতো নিয়োগ পান তাকসিম। বহু বিতর্ক ও সমালোচনা সত্ত্বেও তার মেয়াদ ছয়বার বাড়ানো হয়।
তাকসিমের মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে নীতিমালা না মানার অভিযোগও উঠেছে।
এছাড়া ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি, ঠিকাদার নিয়োগে সিন্ডিকেট, ঘুষ, চুক্তিভিত্তিক পদ তৈরি করে পছন্দের লোক নিয়োগ, অপছন্দের লোকদের ওএসডি করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াসার প্রকল্পগুলো সময়মতো শেষ হয় না। বিভিন্ন প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানো হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্পের নকশা ও বিবরণ অনুযায়ী কাজ করা হয় না।
তিনি একটি প্রকল্পের জন্য পরামর্শদাতা এবং ঠিকাদার নির্বাচনের সময় এমন কিছু শর্ত আরোপ করেছিলেন যাতে নির্দিষ্ট সংখ্যক ঠিকাদার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যক্তিমালিকানাধীন ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন, মিটার রিডিং ও রাজস্ব আদায়ে ব্যাপক দুর্নীতি হয়।
ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের প্রত্যক্ষ সহায়তা ও নির্দেশে ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির ১৩২ কোটি ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৬০ টাকা ছয়টি ব্যাংক থেকে আত্মসাৎ করা হয়।
গত বছরের ২৫ আগস্ট তাকসিম এ খান এবং তার পরিবারের সদস্যদের সব ধরনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে দেশের ব্যাংকগুলোকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।