দুই দশক দখল করে রাখা ইরাকি ঘাঁটি ছেড়ে যাবে মার্কিন সৈন্যরা
ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত একটি মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের সামরিক মিশন আগামী বছর শেষ করার উদ্দেশ্যে শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ইরাক সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা দুই দশক ধরে দখল করে রাখা কিছু ইরাকি ঘাঁটি ছেড়ে দেশে ফিরে যাবেন।
কিন্তু এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। বিশেষ করে, বর্তমানে ইরাকে নিযুক্ত আড়াই হাজার মার্কিন সেনার মধ্যে কতজন ইরাক ছাড়বেন— সেটি এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি।
পেন্টাগনের উপ-প্রেস সচিব সাবরিনা সিং শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, "আমি মনে করি, দেশের (ইরাক) মধ্যে আমাদের উপস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে।" তবে তিনি এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
এই ঘোষণা এমন একটি সময় এসেছে যখন ইসরায়েলের সঙ্গে ইরান-সমর্থিত দুই সশস্ত্র গোষ্ঠী, লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং গাজার হামাসের সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। এতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধের শঙ্কা দেখা গিয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরে, যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলোকে নিয়মিতভাবে ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়ারা লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। সম্প্রতি ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর এসব হামলার মাত্রা আগের থেকে অনেক বেশি বেড়েছে।
বছরব্যাপী, ইরাকি কর্মকর্তারা বিভিন্ন মার্কিন জোট বাহিনী প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে আসছেন। দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি কমানোর জন্য আনুষ্ঠানিক আলোচনা কয়েক মাস ধরে চলছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা শুক্রবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ইরাকে অবস্থানরত সৈন্যদের নিয়ে একটি দুই-পর্যায়ের পরিবর্তনের চুক্তি কার্যকর হবে। প্রথম পর্যায়টি সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত চলবে, যেখানে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর বিরুদ্ধে জোটের অভিযান শেষ হবে এবং কিছু পুরনো ঘাঁটি থেকে সৈন্যরা চলে যাবে।
নভেম্বর নির্বাচনের পরে, মার্কিন বাহিনী পশ্চিম ইরাকের আইন-আল-আসাদ বিমানঘাঁটি এবং বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চলে যেতে শুরু করবে। এই বাহিনীকে ইরাকের কুর্দিস্তানের হেরির ঘাঁটিতে স্থানান্তরিত করা হবে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে, ২০২৬ সাল পর্যন্ত মার্কিন সৈন্যরা ইরাকে কোনো একভাবে অবস্থান করে সঠিকভাবে কাজ চালিয়ে যাবে, যাতে সিরিয়ায় আইএস বিরোধী কার্যক্রম সমর্থন করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত সামরিক মিশনটি একটি দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা সম্পর্কের দিকে পরিবর্তিত হবে। তবে ভবিষ্যতে ইরাকে কতজন মার্কিন সৈন্য থাকবেন, সে সম্পর্কে কিছুই উল্লেখ করেননি তারা।
ইরাকি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের পর কিছু মার্কিন সৈন্য হেরির ঘাঁটিতে থাকতে পারেন, কারণ কুর্দিস্তান অঞ্চলের সরকার তাদের সেখানে থাকার জন্য অনুরোধ করেছে।
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-সুদানি এই মাসে একটি ভাষণে বলেন, "আমরা আইএস-এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জোটের বিষয়টি সমাধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছি।" তিনি উল্লেখ করেন, "সরকার আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সক্ষমতায় বিশ্বাস করে।"
এদিকে সমালোচকরা সতর্ক করে বলেছেন, ইরাকে মার্কিন সৈন্যদের সংখ্যা কমিয়ে আনা "আশঙ্কার একটি গুরুতর কারণ" হতে পারে, বিশেষ করে এই বছর সিরিয়ায় আইএস-এর হামলা বৃদ্ধির ফলে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক থেকে সৈন্য প্রত্যাহার নতুন করে ইরাকে অন্তত ২০ বছর ধরে চলে আসা সামরিক উপস্থিতির তৃতীয় পরিবর্তন। যুক্তরাষ্ট্র ২০০৩ সালের মার্চে ইরাকে প্রথম অভিযান চালায়।
২০০৭ সালের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চালানো মার্কিন অভিযানের সময় ইরাকে ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মার্কিন সৈন্য উপস্থিত ছিলেন। ওবামা প্রশাসন এই সংখ্যাটি কমানোর ব্যবস্থা করেছিল এবং ২০১১ সালের ডিসেম্বরে শেষ কমব্যাট সৈন্যরা ইরাক ছেড়ে চলে যান।
তখন শুধু নিরাপত্তা সহায়তা অফিস পরিচালনা করতে এবং দূতাবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কয়েকজন সামরিক কর্মী এবং ছোট মেরিন দল ইরাকে অবস্থান করছিল।
২০১৪ সালে ইরাক ও সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট-এর উত্থানের পর যুক্তরাষ্ট্র আবারও সেখানে সৈন্য পাঠায়। ২০২১ সালে ইসলামিক স্টেট-এর নিয়ন্ত্রণ কমে আসার পর জোটের সামরিক অভিযান শেষ হয়। কিন্তু ইরাকে প্রায় আড়াই হাজার সৈন্য এখনও প্রশিক্ষণ ও যৌথ কার্যক্রম চালানোর জন্য অবস্থান করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এই উপস্থিতি ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোর জন্য চাপ সৃষ্টি করে এবং ইরানকে ইরান ও সিরিয়া থেকে লেবাননে অস্ত্র স্থানান্তর করতে বাধা দেয়।