গাজার প্রতি সমর্থন জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপক বিক্ষোভ

আন্তর্জাতিক

বিবিসি ও দ্য গার্ডিয়ান
23 April, 2024, 11:15 am
Last modified: 23 April, 2024, 11:17 am
হামাস ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রধান আলোচনা ও বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ ও বাকস্বাধীনতা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ফিলিস্তিনপন্থি ও ইসরায়েলপন্থি শিক্ষার্থীরা একে অন্যের বিরুদ্ধে ইহুদিবিদ্বেষ ও ইসলামভীতি বাড়ানোর অভিযোগ জানিয়ে আসছে।

গাজায় চলমান যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া ও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভসহ অন্যান্য কর্মসূচি পালন করে আসছে। 

সোমবার (২২ এপ্রিল) রাতে পুলিশ নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান বিক্ষোভ থামানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে।

তার আগের দিন ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক ডজন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরাসরি ক্লাস বাতিল করা হয়েছে। বার্কলে, এমআইটি এবং সারাদেশের অন্যান্য কলেজগুলোতেও একইভাবে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ পালন করা হচ্ছে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে প্রায় এক হাজার দুইশ জন নিহত হয় এবং প্রায় দুইশতাধিক মানুষকে গাজায় বন্দী হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়। এর জবাবে গাজায় তীব্র হামলা চালানো শুরু করে ইসরায়েল। ছয় মাসের বেশী সময় ধরে চলমান ইসরায়েলি হামলায় গাজায় প্রায় ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

হামাস ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রধান আলোচনা ও বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ ও বাকস্বাধীনতা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ফিলিস্তিনপন্থি ও ইসরায়েলপন্থি শিক্ষার্থীরা একে অন্যের বিরুদ্ধে ইহুদিবিদ্বেষ ও ইসলামভীতি বাড়ানোর অভিযোগ জানিয়ে আসছে।

চলমান বিক্ষোভ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি 'ইহুদি-বিরোধী আন্দোলন' এবং 'যারা বুঝতে পারছে না গাজায় কি ঘটছে' তাদের প্রতি নিন্দা জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্পাসগুলোতে চলমান আন্দোলন গত সপ্তাহে বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করে যখন নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে একশোর বেশি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে। শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভের অংশ হিসেবে ক্যাম্পাসে তাঁবু গেড়ে সেখান থেকে প্রতিবাদ জানাচ্ছিল। পুলিশ গ্রেপ্তার করার পর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সোমবার ঘোষণা দিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত ক্লাস ভার্চুয়ালি পরিচালিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট মিনোচে শফিক চলমান আন্দোলনকে 'ভীতিকর এবং হয়রানিমূলক আচরণের ঘটনা' হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্পর্ক নেই এমন ব্যক্তিরা ক্যাম্পাসে তাদের নিজস্ব অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে একশোর বেশি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করার প্রতিবাদে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ শিক্ষক সোমবার গণ ওয়াকআউট করেছেন।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে একশোর বেশি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করার প্রতিবাদে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রতিবাদ জানান। ছবি: আন্দ্রেয়া রেনল্ট/জুমা

এদিকে বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি), মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় ও এমারসন কলেজ সহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিক্ষোভ চলছে। কিন্তু অনেক মার্কিন রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্যাম্পাসের ইহুদিভিত্তিক সংগঠনসহ বিভিন্ন মাধ্যম চলমান আন্দোলনকে 'ইহুদি-বিরোধী' আন্দোলন হিসেবে দাবি করছে।

রবিবার (২১ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে কলম্বিয়া স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইনে জানিয়েছে, তারা 'যেকোনো ধরনের ঘৃণা বা গোঁড়ামিকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে'। পাশাপাশি 'তাদের প্রতিনিধিত্ব করে না ও সমস্যা সৃষ্ট করছে' এমন ব্যক্তিদের সমালোচনা করেছে তারা।

নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হচুল সোমবার কলম্বিয়ার প্রশাসক, শহরের কর্মকর্তা এবং পুলিশের সাথে দেখা করেন। অন্যদিকে, ইহুদি হাউস ডেমোক্র্যাটদের একটি দল ইহুদি ছাত্রদের সাথে দেখা করেছে। ডেমোক্রেটিক কংগ্রেসম্যান জোশ গোটেইমার সতর্ক করে জানিয়েছেন, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় যদি ইহুদি ছাত্রদের নিরাপদে রাখতে ব্যর্থ হয় তাহলে এর নেতৃত্বকে এর 'মূল্য দিতে হবে'। কংগ্রেসম্যান ও নিউইয়র্ক ডেমোক্র্যাট ড্যান গোল্ডম্যান বলেছেন, ইহুদি ছাত্ররা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যা কিছুর সম্মুখীন হচ্ছেন বা দেখেছেন তা 'অগ্রহণযোগ্য'।

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য কলেজ ফিলিস্তিনকে সমর্থন করে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সময় শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনকে সমর্থন দিয়ে প্রতিবাদ জানালে বিশ্ববিদ্যালয় এরকম আচরণের শাস্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

এদিকে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য স্থানে বিক্ষোভ চলছে। ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভকারীরা সোমবার (১৫ এপ্রিল) অর্থনীতিকে ব্যাহত করার একটি বৈশ্বিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ও গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা অবরোধ ও যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল।

 


অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়


 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.