নির্বাচনের মধ্যে ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক বক্তব্য মোদির, ভারতীয় মুসলিমদেরকে বললেন ‘অনুপ্রবেশকারী’

আন্তর্জাতিক

সিএনএন
22 April, 2024, 04:20 pm
Last modified: 22 April, 2024, 04:34 pm
জনসভায় আসা মানুষের কাছে মোদি জানতে চান, ‘আপনারা কি আপনাদের কষ্টার্জিত সম্পত্তি অনেক সন্তান জন্ম দেওয়া মুসলমানদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে চান?’

মুসলিমবিদ্বেষী মন্তব্য করে আবারও বিতর্কে জড়ালেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রোববার এক নির্বাচনী সমাবেশে ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। 

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজস্থান রাজ্যে বিপুল জনতার সামনে মোদি মুসলমানদের ভারতে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে উল্লেখ করেন। দর্শকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, 'কংগ্রেস যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন তারা বলেছিল, সম্পদের ওপর মুসলমানদের অগ্রাধিকার রয়েছে। তারা তোমাদের সমস্ত সম্পদ একত্রিত করবে এবং মুসলিম সন্তানসন্ততি ও অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে বণ্টন করে দেবে।'

জনসভায় আসা মানুষের কাছে মোদি জানতে চান, 'আপনারা কি আপনাদের কষ্টার্জিত সম্পত্তি মুসলমানদের মধ্যে, যাদের অনেক বাচ্চাকাচ্চা হয় তাদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে চান?'

কংগ্রেস ও মুসলমানদের নিয়ে এই ভাষণ ভারতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কংগ্রেসসহ বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতারা ওই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। মোদির মন্তব্য আচরণবিধি ভঙ্গ করে কিনা তা খতিয়ে দেখতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধীরা।

ভারতের নির্বাচনী আচরণবিধিতে বলা আছে, রাজনীতিবিদরা 'জাতপাত' ও 'সাম্প্রদায়িক অনুভূতি'র ভিত্তিতে ভোটারদের কাছে আবেদন করতে পারবেন না। সম্প্রদায় ও ধর্মের মধ্যে পার্থক্য বাড়াতে পারে বা পারস্পরিক ঘৃণা তৈরি করতে পারে বা উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে এমন কার্যকলাপও অনুমোদিত নয়।

এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ভারতের নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে সিএনএন।

মোদি এমন মন্তব্যের জন্য মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছ থেকে ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন, অনেকে আশঙ্কা করছেন যে বিজেপি তৃতীয় মেয়াদ ক্ষমতায় আসলে দেশজুড়ে ইতোমধ্যে চলমান সাম্প্রদায়িক ফাটলকে আরও গভীর করবে।

প্রখ্যাত মুসলিম সাংবাদিক রানা আইয়ুব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, 'এটি কোনো সূক্ষ্ম বার্তা নয়; এটি একটি সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃণার সরাসরি, নির্লজ্জ প্রকাশ।' 

মুসলিম আইনপ্রণেতা ও অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের সভাপতি আসাদুদ্দিন ওয়াইসি বলেন, 'মোদি আজ মুসলিমরা অনেক সন্তান জন্ম দেয় এবং তাদেরকে অনুপ্রবেশকারীর তকমা দিয়েছেন। ২০০২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত মোদির শুধু মুসলিমদের গালি দিয়েই ভোট পেয়েছেন।' 

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে মোদির মন্তব্যকে 'বিদ্বেষমূলক বক্তব্য' এবং 'নজর ঘোরানোর একটি সুচিন্তিত চাল' বলে বর্ণনা করেছেন।

রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) নামে একটি ডানপন্থি হিন্দু আধাসামরিক সংগঠনের কথা উল্লেখ করে বলেন, 'আজ প্রধানমন্ত্রী আরএসএস থেকে যা আত্মস্থ করেছেন তার-ই প্রমাণ করেছেন। ভারতের ইতিহাসে আর কোনো প্রধানমন্ত্রী তার পদের মর্যাদা এতটা খর্ব করতে পারেননি, যতটা মোদি করেছেন।' 

উন্নয়ন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসেন মোদি। প্রকাশ্যে হিন্দু জাতীয়তাবাদী অ্যাজেন্ডা নিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে এবারও টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসবে তার দল বিজেপি। 

বিজেপি ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য করে না এবং সমস্ত নাগরিকের প্রতি সমান আচরণ করে এমনটা বারবার দাবি করে আসলেও গত এক দশকে মোদি ও বিজেপির বিরুদ্ধে হিন্দু জাতীয়তাবাদী নীতির মাধ্যমে ব্যাপক ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে, যার ফলে বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রে ইসলামভীতি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সহিংস সাম্প্রদায়িক সংঘাত বেড়েছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক একটি গবেষণা দল জানিয়েছে, ২০২৩ সালের শেষার্ধে ভারতে মুসলমানদের লক্ষ্য করে ঘৃণামূলক মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্যের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তারা ২০২৩ সালে মুসলমানদের লক্ষ্য করে ৬৬৮টি ঘৃণাত্মক বক্তব্যের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে, যার মধ্যে ২৫৫টি ঘটনা বছরের প্রথমার্ধে ঘটেছে এবং বাকি ৪১৩টি বছরের শেষ ছয় মাসে। বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের পরিমাণ প্রায় ৬২ শতাংশ বেশি। 

ভারতে ৬ সপ্তাহের নির্বাচনে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) থেকে ভোট দিতে শুরু করেছেন লাখ লাখ ভারতীয়। হিমালয় পর্বতমালা থেকে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত প্রথম ২১টি রাজ্যে সকাল ৭টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। তবে আগে থেকেই ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে লাইনে দাঁড়াতে শুরু করেন।

১ জুন পর্যন্ত চলা এই নির্বাচনে প্রায় ৯৭ কোটি ভোটার ভোট দিবেন যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশেরও বেশি। তারা ভোটের মাধ্যমে ৫ বছরের জন্য পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ৫৪৩ জন সদস্যকে নির্বাচিত করবেন। ভোট গণনা হবে ৪ জুন।

এই নির্বাচনকে ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ নির্বাচন হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং এটি মোদির রাজনৈতিক আধিপত্যের সীমা পরীক্ষা করবে। নির্বাচনে জিতলে জওহরলাল নেহরুর পর মোদিই হবেন দ্বিতীয় ভারতীয় নেতা যিনি তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসবেন। বেশিরভাগ জরিপে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন বিস্তৃত বিরোধী জোট এবং শক্তিশালী আঞ্চলিক দলগুলোর বিরুদ্ধে মোদি ও তার হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জয়ের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।


অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.