ভারতের গবেষণা সংস্থাগুলো যখন চাপের মধ্যে, তখনই নতুন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করছেন গৌতম আদানি 

আন্তর্জাতিক

দ্য প্রিন্ট ও ফিন্যান্সিয়াল টাইমস 
16 April, 2024, 07:55 pm
Last modified: 16 April, 2024, 10:49 pm
সূত্রগুলো জানায়, সংস্থার সদর দপ্তর হবে নয়াদিল্লিতে, যার মূল লক্ষ্য হবে ভারতের পাশাপাশি বৈশ্বিক দক্ষিণের পক্ষে গবেষণা প্রকাশ ও মতামত উপস্থাপন। 

বৈশ্বিক একটি চিন্তক সংস্থা বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান তৈরির বিষয়ে অনেকদূর এগিয়েছেন ভারতের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনাঢ্য ব্যক্তি গৌতম আদানি। এমন সময়ে একথা জানা গেছে, যখন দেশটির স্বাধীন গবেষণা গ্রুপগুলোর ওপর সরকার বা কর্তৃপক্ষের চাপ বাড়ছে – তারা বস্তুনিষ্ঠ তথ্য পরিবেশন করায়, যা বিজেপি সরকারের মনঃপুত হচ্ছে না।

ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য প্রিন্ট জানায়, এটি হবে একটি নীতি-পরামর্শক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, যেখানে অর্থায়ন করবে আদানি গ্রুপ। খুব শিগগিরই এটি চালু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান প্রিন্টকে। 

সূত্রগুলো জানায়, সংস্থার সদর দপ্তর হবে নয়াদিল্লিতে, যার মূল লক্ষ্য হবে ভারতের পাশাপাশি বৈশ্বিক দক্ষিণের পক্ষে গবেষণা ও মতামত উপস্থাপন। 

এটির নাম ঠিক করা হয়েছে, চিন্তন রিসার্চ ফাউন্ডেশন। আদানি গ্রুপ প্রাথমিকভাবে এতে ১০০ কোটি রুপির তহবিল দিচ্ছে বলে দ্য প্রিন্টকে জানান কোম্পানির একজন সিনিয়র কর্মকর্তা। ভবিষ্যতে আরো তহবিল দেওয়ার আভাসও দেন তিনি।  

তবে ওই কর্মকর্তা দাবি করেন, আদানি গ্রুপ থেকে স্বাধীনই থাকবে এই চিন্তক সংস্থা, থাকবে তার নিজস্ব সাংগঠনিক কাঠামো ও পরিচালক বোর্ড। 

"শুরুতে তহবিল আদানি গ্রুপ দিচ্ছে। আমরা আশা করছি, ভবিষ্যতে সংস্থাটির নিজস্ব আয়ের উৎস থাকবে, এবং কিছু সময় পরে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে"- বলেন তিনি। আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা না আসায় নাম না প্রকাশের শর্তে ওই কর্মকর্তা এসব কথা জানান।  

এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি আদানি গ্রুপ। 

এদিকে প্রভাবশালী ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বলেছে, চিন্তন রিসার্চ ফাউন্ডেশন জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানি রূপান্তর এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির মতো বিষয়ে গবেষণা ও মতামত প্রণয়নে গুরুত্ব দিবে। 

সংশ্লিষ্টদের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি আরো জানায়, এরমধ্যেই সংস্থাটির চেয়ার ও আন্তর্জাতিক পরামর্শক বোর্ড সদস্য নিয়োগের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদের খোঁজ চলছে। গৌতম আদানি ভারতে একটি বিশ্বমানের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেটি বৈশ্বিক দক্ষিণকে প্রাধান্য দেবে। এটি পেশাদারিত্বের সাথে পরিচালিত হবে বলেও দাবি সংশ্লিষ্টদের। 
 
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বলেছে, ভারতের উন্নয়ন লক্ষ্যগুলোর সাথে প্রকাশ্য ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে গৌতম আদানির। বড় বড় অবকাঠামোর কাজ হচ্ছে তাঁর শিল্পগোষ্ঠীর মাধ্যমে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর দেশকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর নেতা ও মুখপাত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান– আদানির এ উদ্যোগ সেই লক্ষ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। 

গত বছরের গ্রীষ্মে জি-২০ সম্মেলনের আয়োজন হয় ভারতের নয়াদিল্লিতে। এই সম্মেলনে আফ্রিকান ইউনিয়নকে জি-২০'র পূর্ণ সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে তাতে সফলও হন নরেন্দ্র মোদি। এসময় স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল নয়াদিল্লির এই সাফল্যকে 'বিশ্বগুরু ইন্ডিয়া' বলে প্রচার করে।  

এই প্রেক্ষাপটে গবেষণা অঙ্গনে নতুনতম বিলিয়নেয়ার হিসেবে যুক্ত হচ্ছেন গৌতম আদানি। ভারত  এবং এশিয়ার শীর্ষতম ধনী মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ ইতোমধ্যেই অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামের একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্কের প্রধান প্রতিষ্ঠাতা। এই সংস্থা ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে অংশীদারত্বে রাইসিনা ডায়ালগ ফোরাম নামের একটি ভূরাজনীতি বিষয়ক ফোরাম চালায়। 

অন্যদিকে, ভারতের অনুদান বা দাতব্যে পরিচালিত গবেষণা গ্রুপ এবং বেসরকারি গবেষণা সংস্থাগুলোর ওপর কড়া তদারকি করছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই অবস্থায়, মুকেশ আম্বানির মতোই মোদির আরেক ঘনিষ্ঠজন গৌতম আদানি আসছেন এই খাতে। 

আন্তর্জাতিক-পর্যায়ে বহুল সমাদৃত একটি ভারতীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হলো- নয়াদিল্লির সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ (সিপিআর)। এই প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা সরকারের নানান নীতির সমালোচনামূলক নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। এমন আরো দুটি গবেষণা সংস্থা হলো- অক্সফাম ইন্ডিয়া, গণমাধ্যম নিয়ে কাজ করা পাবলিক-স্পিরিটেড মিডিয়া ফাউন্ডেশন। এসব সংস্থায় ভারতের কর কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়েছেন।  

গত বছর সিপিআরকে কর আওতামুক্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয় এবং তাদের তহবিল সংগ্রহেও বাধা দেওয়া হয়। এই অবস্থায়, কর্মচারীদের পুরো বেতন দিতে পারেনি সংস্থাটি। বাধ্য হয়ে অনেক কর্মী চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.