পাল্টা-হামলার বিষয়ে ইসরাইলকে হুঁশিয়ারি ইরানের, সংযম প্রদর্শনের আহ্বান বিশ্বনেতাদের
ইসরায়েলে করা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ নিতে ইরানে পাল্টা হামলা করা হলে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে আরও কড়া জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান।
আঞ্চলিক চিরশত্রুদের মধ্যে এই প্রকাশ্য যুদ্ধের হুমকি এবং যুক্তরাষ্ট্রকে মাঝে টেনে আনায় মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের ঝুঁকি আরও বেড়েছে।
এদিকে, ওয়াশিংটন বলেছে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে সংঘাত চায় না। তবে তাদের বাহিনী এবং ইসরায়েলকে রক্ষা করতে দ্বিধা করবে না তারা।
গত ১ এপ্রিল সিরিয়ায় নিজেদের কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলায় রেভল্যুশনারি গার্ডের দুজন জ্যেষ্ঠ কমান্ডারসহ সাত কর্মকর্তা নিহতের ঘটনা এবং গাজা যুদ্ধের কারণে ইসরায়েল ও ইরানের আঞ্চলিক মিত্রদের মধ্যে কয়েক মাস ধরে চলা সংঘর্ষের জেরে ইরান এ হামলা চালায়।
তবে ইরানের করা শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ইসরায়েলে সামান্য ক্ষতি হয়েছে দাবি করেছে ইসরায়েল।
কারণ তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও জর্ডানের সহায়তায় সেগুলোর অধিকাংশই ভূপাতিত করেছে বলে জানিয়েছে।
ইরানের হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলের একটি সেনাঘাঁটি সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সাত বছর বয়সী একটি শিশু মারাত্মক আহত হয়েছে। এছাড়া বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামলার প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনার জন্য ডাকা বৈঠকের আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেছেন, 'আমরা প্রতিহত দিয়েছি, আমরা নিরস্ত করেছি, একসঙ্গে আমরা জিতব।'
ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এক্স-এ (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে ইংরেজি ভাষায় লিখেছেন: 'খল জায়োনিস্ট রেজিমকে শাস্তি দেওয়া হবে।'
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ট বলেছেন, 'আমাদের অবশ্যই প্রতিটি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে'।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ টিভি জানিয়েছে, হামলার 'উল্লেখযোগ্য জবাব' দেওয়া হবে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আবদুল্লাহিয়ান বলেছেন, ইসরায়েলের প্রতিবেশী দেশগুলোকেও তাদের পরিকল্পিত হামলার বিষয়ে ৭২ ঘণ্টা আগে অবহিত করা হয়েছিল।
অন্যদিকে, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স ও জার্মানির পাশাপাশি আরব রাষ্ট্র মিসর, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো বিশ্ব নেতারা দুই পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে।
চীন সফরে থাকা জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস সাংবাদিকদের বলেন, 'উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি ঠেকাতে আমরা সবকিছু করব। আমরা সবাইকে, বিশেষ করে ইরানকে এ ধরনের ঘটনা অব্যাহত রাখার বিরুদ্ধে সতর্ক করব।
তুরস্কও ইরানকে সতর্ক করে বলেছে, তারা এই অঞ্চলে আর উত্তেজনা চায় না।
ইরানের সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মাদ বাঘেরি টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে বলেছেন, 'ইসরায়েল যদি ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়, তাহলে গত রাতের সামরিক পদক্ষেপের চেয়ে আমরা আরও অনেক বড় পদক্ষেপ নেবো।'
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিলেও, শনিবার রাতেতিনি কোনো সামরিক পদক্ষেপের ঘোষণা দেননি।
রবিবার স্থানীয় সময় বিকাল ৪টায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।
এর আগে শনিবার ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী হরমুজ প্রণালী থেকে ইসরাইল সংশ্লিষ্ট একটি কার্গো জাহাজ জব্দ করেছে,এটি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি পরিবহন রুট।
ইসরায়েল ওই হামলার দায় স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটিই করেনি। এ ঘটনায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হামলা চালানোর হুমকি দিয়ে আসছিল ইরান।
হামলার পর জর্ডান, ইরাক, মিশর, লেবাননসহ মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশ তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এবং ইসরায়েল ও উপসাগরীয় দেশগুলোর শেয়ারবাজারে শেয়ারের দাম কমেছে।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর গাজায় যে যুদ্ধ শুরু হয়, তা ক্রমে লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন ও ইরাকে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংঘর্ষে গড়ায়।
মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্র লেবাননের শিয়া গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ রাতভর ইসরায়েলি ঘাঁটিতে রকেট হামলা চালিয়েছে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, রবিবার সকালে তারা লেবাননের অভ্যন্তরে হিজবুল্লাহর একটি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে।
লোহিত সাগরে জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা ইয়েমেনের হুতিরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইরানের হামলাকে বৈধ বলে অভিহিত করেছে।
৭ অক্টোবরের হামাসের হামলায় ১২০০ ইসরায়েলি নিহত হয় এবং ২৫৩ জনকে জিম্মি করে তারা।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের আক্রমণে গাজার ৩৩ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং ৭৬ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। এর বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি