রুশ আক্রমণে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর পতনের শঙ্কা!

আন্তর্জাতিক

13 April, 2024, 01:20 pm
Last modified: 13 April, 2024, 01:23 pm
যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় গোলাবারুদ ও সৈন্য সংখ্যায় মারাত্মক ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। কিয়েভের বিমান প্রতিরক্ষায়ও যথেষ্ট ঘাটতি চোখে পড়ছে। পরিস্থিতি সম্পর্কে জ্ঞাত পশ্চিমা কর্মকর্তাদের মতে, ইউক্রেন গত দুই বছরের মতো চলমান যুদ্ধে সবচেয়ে নাজুক মুহুর্তে রয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে কিয়েভের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হামলা হয়েছে। ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে হয়েছে বোমাবর্ষণ। একইসাথে রুশ বাহিনী ক্রমশ সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ফলে কিয়েভের সামরিক প্রতিরক্ষা পতনের কাছাকাছি বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্টরা।

যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় গোলাবারুদ ও সৈন্য সংখ্যায় মারাত্মক ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। কিয়েভের বিমান প্রতিরক্ষায়ও যথেষ্ট ঘাটতি চোখে পড়ছে। পরিস্থিতি সম্পর্কে জ্ঞাত পশ্চিমা কর্মকর্তাদের মতে, ইউক্রেন গত দুই বছরের মতো চলমান যুদ্ধে সবচেয়ে নাজুক মুহুর্তে রয়েছে।

এমতাবস্থায়, কিয়েভে ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পতন হলে সংঘাতের প্রাথমিক পর্যায়ের পর তা ক্রেমলিনের প্রথমবারের মতো একটি বড় অগ্রগতি বলে বিবেচনা করা হবে।

সেক্ষেত্রে পরবর্তী কয়েক মাস ইউক্রেনকে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। বিশেষ করে দেশটির পূর্বের খারকিভ শহরের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য। একইসাথে যুদ্ধে সৈন্যদের মাঝে ক্রমবর্ধমান হারে ক্লান্তিও বাড়ছে।  
ক্রিস্টিনা মালিয়েভা রাশিয়া আক্রমণ করার পর খারকিভ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। কিছুদিন পর তিনি আবার ফিরেও এসেছেন।

মালিয়েভা বলেন, "অনাকাঙ্ক্ষিত আক্রমণ শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে ভয় তৈরি করেছে। যদিও বেশিরভাগই এখনও বিশ্বাস করে না যে, ক্রেমলিন এই শহরটি দখল করতে পারে। যার পূর্ববর্তী জনসংখ্যা ছিল ১.৫ মিলিয়ন।"

ক্রোয়েশিয়া ও যুক্তরাজ্যে বছরখানেক থাকার পর ২০২৩ সালে ফিরে আসা একটি পারিবারের কর্তা মালিয়েভা এক সাক্ষাত্কারে বলেন, "খারকিভে এখন খুব বিষণ্ণতা বিরাজ করছে। মানুষ গত বছর ফিরে আসতে শুরু করেছিল। নতুন রেস্তোরাঁও খোলা হয়েছিল। এখন আমি দেখছি মানুষ আবার পালিয়ে যাচ্ছে।"

বর্তমানে ইউক্রেনের তুলনায় রাশিয়া অস্ত্রের দিক থেকে বেশ এগিয়ে রয়েছে। ফলে কিয়েভের তুলনায় মস্কো বেশি সুবিধাজনক অবস্থায় ছিল। 

এক কর্মকর্তার মতে, মস্কো চলতি বছর ৬ মিলিয়ন শেল পাবে। এক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়া ও ইরান হবে এক বড় যোগানদাতা। 

গতবছর ইউক্রেনের উদ্দেশ্য ছিল দখলকৃত অঞ্চল পুনরুদ্ধার করা। কিন্তু সেটি করা সম্ভব হয়নি। বরং নতুন শহর হারানোর দ্বারপ্রান্তে কিয়েভ।  
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গত সপ্তাহে বলেন, "রাশিয়া আগামী ১ জুনের মধ্যে ৩ লাখ নতুন সৈন্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হতে পারে।"

এমতাবস্থায়, হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এক মুখপাত্র বলেন, "কংগ্রেসকে অবশ্যই সামরিক সহায়তা অনুমোদন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।"

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ান বাহিনীর আসন্ন অগ্রগতির কোন লক্ষণ দেখতে পাচ্ছে না। তবে ইউক্রেনের মনোবল বেশ নিম্নগামী। তাই তাদের সেনাবাহিনীর পতনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।"

গত বৃহস্পতিবার সকালে ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থানে ৮০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। যার অধিকাংশই বিদ্যুৎ ও জ্বালানী কেন্দ্রকে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার এক তৃতীয়াংশ ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে।

এদিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দায়িত্বে থাকা জ্বালানী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রানারগোর চেয়ারম্যান আন্দ্রি হোতা বলেছেন," ট্রিপিলিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় গ্রীষ্মে ইউক্রেন খুব একটা সমস্যা না হলেও শীতকালে এটি একটি বিশাল সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। ইউরোপ থেকে খুচরা যন্ত্রাংশ দিয়ে এটি আবারো র্নির্মাণ করা সম্ভব হলেও ইউক্রেনের মিত্রদের কাছ থেকে শক্তিশালী বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া ভবিষ্যতেও এতে হামলা হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।"

ইউক্রেনের পশ্চিমে বৃহস্পতিবার অন্তত আরো দুটো তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের 'উল্লেখযোগ্য ক্ষতি' হয়েছে। যা দেশব্যাপী বিদ্যুৎ সরবরাহের ওপর আরো বেশি চাপ সৃষ্টি করেছে। এর আগে মার্চ মাসে টানা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইউক্রেনের ডিটিইকে পাওয়ার কোম্পানির বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ইতোমধ্যেই ২০ শতাংশ কমে এসেছে।

ডিটিইকে বিবিসিকে জানিয়েছে, বেসামরিক পাওয়ার স্টেশনগুলোতে সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় গ্রিডে প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করা কঠিন হয়ে উঠবে। রাশিয়ার বারবার হামলাকে প্রতিষ্ঠানটি ইউক্রেনের জ্বালানি ব্যবস্থা এবং এর কঠোর অর্জিত স্বাধীনতাকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে।

এদিকে কিয়েভ-ভিত্তিক রেটিং গ্রুপের ফেব্রুয়ারিতে করা এক জরিপে দেখা যায়, ইউক্রেনের অর্ধেকেরও কম মানুষ বিশ্বাস করে দেশটি রাশিয়ার দখলকৃত সমস্ত অঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে পারবে। যদিও বেশিরভাগ ইউক্রেনীয়রা এখনও বিজয়ে বিশ্বাসী, তবে তারা ক্রমেই ভাবছে ভবিষ্যতে কী হতে পারে।

এখন পর্যন্ত খারকিভ থেকে গণহারে মানুষ সরে যায়নি। শহরের এক বুটিক পাবলিশিং হাউসের মালিক ওলেক্সান্ডার স্যাভচুক জানান, শুধু প্রতিদিনের আক্রমণের কারণেই তিনি শহর ছেড়ে পালাবেন না। যতক্ষণ না রাশিয়া শহরটিতে অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে হাজির হয়, ততক্ষণ তিনি এখানেই থাকবেন। 


অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.