ক্ষতিগ্রস্ত ট্যাংকের দখল নিতে কেন প্রতিযোগিতায় নেমেছে রুশ ও ইউক্রেনীয় বাহিনী!

আন্তর্জাতিক

ফোর্বস
27 March, 2024, 07:10 pm
Last modified: 27 March, 2024, 07:21 pm
৬টি স্ট্রিডসভাগেন ১২২ ট্যাংকের ওপর এখন নজর পড়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেন দুপক্ষেরই। এগুলোর বেশিরভাগই টার্নি গ্রামের বাইরে মাঠের মধ্যে পড়ে রয়েছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয় দেশের সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারেরা এখন একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছে এই নো-ম্যানস ল্যান্ড থেকে ট্যাংকগুলো উদ্ধার করে নিজেদের দখলে নিতে।

পূর্ব ইউক্রেনের টার্নি গ্রামের কিছুটা পূর্বে দনেৎস্ক অব্লাস্তের প্রায় চার বর্গমাইল জায়গাজুড়ে মাঠ, রাস্তাঘাট আর গাছপালা। এখানে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর ২১ মেকানাইজড ব্রিগেড ও সংলগ্ন ইউনিটগুলো লড়ছে রাশিয়ার মটর-রাইফেল রেজিমেন্টের ৪টি দলের সঙ্গে।

গত কয়েক মাস ধরে দুই পক্ষের কঠিন লড়াই চলছে। ইউক্রেনের ২১ ব্রিগেড এ যুদ্ধে অন্তত ৭টি সুইডিশ স্ট্রিডসভাগেন ১২২ ট্যাংক খুইয়েছে। এ ব্রিগেডটি সাধারণত সুইডেনের তৈরি বিভিন্ন সমরাস্ত্র ব্যবহার করে। ২১ ব্রিগেডের কাছে মোট ১০টি স্ট্রিডসভাগেন ১২২ ট্যাংক ছিল।

এ ট্যাংকগুলো জার্মানির লেপার্ড ২এ৫ ট্যাংকের একটি সংস্করণ। ইউক্রেন বেশিরভাগ ট্যাংক হারিয়েছে টার্নির বাইরের ওই দুই বর্গমাইল এলাকাতে।

তবে যুদ্ধ বিষয়ক ডাচ গবেষণাগোষ্ঠী ওরিক্সের বিশ্লেষকেরা বলছেন, ৬৯ টনের চারজন চালিত স্ট্রিডসভাগেন ১২২ ট্যাংকগুলোর কেবল একটি ট্যাংক 'বিধ্বস্ত' হয়েছে। মাইন, ট্যাংক-বিধ্বংসী মিসাইল ও আক্রমণকারী ফার্স্ট-পার্সন-ভিউ ড্রোনের হামলার মুখে পড়ে বাকি ট্যাংকগুলো আদতে ক্রুরা পরিত্যাগ করেছেন।

বাকি থাকা ৬টি স্ট্রিডসভাগেন ১২২ ট্যাংকের ওপর এখন নজর পড়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেন দুপক্ষেরই। এগুলোর বেশিরভাগই টার্নি গ্রামের বাইরে মাঠের মধ্যে পড়ে রয়েছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয় দেশের সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারেরা এখন একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছে এই নো-ম্যানস ল্যান্ড থেকে ট্যাংকগুলো উদ্ধার করে নিজেদের দখলে নিতে।

ইউক্রেন ট্যাংকগুলো উদ্ধার করে সেগুলোকে লিথুয়ানিয়ায় মেরামতের জন্য পাঠাতে চায়। অন্যদিকে রাশিয়ার উদ্দেশ্য ট্যাংকগুলো পরীক্ষা করা এবং হয়তো সেগুলোকে ওয়ার প্রাইজ হিসেবে প্যারেডে প্রদর্শন করা।

তবে এখন পর্যন্ত এ প্রতিযোগিতায় ইউক্রেন এগিয়ে রয়েছে। ইউক্রেনযুদ্ধ বিশ্লেষক অ্যান্ড্রু পারপেচুয়া স্যাটেলাইট ছবি নিরীক্ষা করে সম্প্রতি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, ইউক্রেনের অতিসম্প্রতি পরিত্যক্ত পাঁচটি স্ট্রিডসভাগেন ১২২ ট্যাংকের ৩টি ইতোমধ্যে ওই এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। 'খুব সম্ভবত ইউক্রেনের দ্বারা,' লেখেন পারপেচুয়া।

একটি স্ট্রিডসভাগেন ১২২ ট্যাংকের অবস্থান টার্নি গ্রামের পথের ধারে। এটি উদ্ধারের সবচেয়ে বড় দাবিদার ইউক্রেন। অন্যটি হয়তো ২১ ব্রিগেডের ক্ষয়ক্ষতির তালিকাতেই নাম লেখাবে।

দ্বিতীয় এ ট্যাংকটি গত ১৯ মার্চ রাশিয়া টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। তার নয়দিন আগে রাশিয়ান ড্রোন হামলায় অকেজো হয়ে পড়ে ট্যাংকটি।

রাশিয়ার দুটি ব্রেম সাজোঁয়া উদ্ধারকারী যান স্ট্রিডসভাগেন ১২২ ট্যাংকটির গায়ে উইঞ্চ লাগিয়ে এটিকে মাইলখানেক দূরে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা লাইনের দিকে টেনে নিতে শুরু করে। মোটামুটি অর্ধেক যাওয়ার পর ইউক্রেনের ১২ আজভ ব্রিগেড রাশিয়ানদের দেখতে পায়।

ইউক্রেনের প্রায় প্রতিটি ব্রিগেডের বর্তমানে ড্রোন ইউনিট রয়েছে। আজভ ব্রিগেডের ড্রোন পরিচালকেরা সম্মুখভাবে থাকা সাজোঁয়া যানটিকে লক্ষ্যবস্তু করে। এক পর্যায়ে যানটির পেছনে থাকা ডিজেল ইঞ্জিনে দুবার আঘাত হানে ইউক্রেনের বিস্ফোরকবাহী আক্রমণকারী ড্রোন।

তৃতীয় একটি ড্রোন দ্বিতীয় রুশ সাজোঁয়া যানটির ইঞ্জিন কম্পার্টমেন্টে বিস্ফোরিত হয়। অবশ্য এতে খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি রুশ যানটি।

তবে রাশিয়ানরা তাদের 'ট্রফি' নিয়ে খুব বেশিদূর যেতে পারেনি। সপ্তাহখানেক পরে বিশ্লেষক পারপেচুয়া জানান, স্ট্রিডসভাগেন ১২২ ট্যাংকটি তখনো সেখানে পড়ে রয়েছে—আশপাশে রুশ সাজোঁয়া বহরের কোনো চিহ্ন নেই।

এ ট্যাংকটির অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, রাশিয়া যদি আবারও কোনো স্ট্রিডসভাগেন ১২২ ট্যাংক দখল করার চেষ্টা করে, তাহলে এটিই হবে তাদের জন্য সবচেয়ে সম্ভাব্য উপযুক্ত লক্ষ্যবস্তু।

তবে ইউক্রেনও সহজে হাল ছেড়ে দেবে না বলেই মনে হচ্ছে। ১৯ মার্চের সফলতার পর ড্রোন মিশন পরিচালনা না করে কোনো ট্যাংক বিনাযুদ্ধে হাতছাড়া হতে দেবে না ২১ মেকানাইজড ব্রিগেড বা এর মিত্র ব্রিগেডগুলো।

এখন দেখার বিষয় লিথুয়ানিয়ায় টেকনিশিয়ানরা কত দ্রুত ইউক্রেনের উদ্ধার করা স্ট্রিডসভাগেন ১২২ ট্যাংকগুলো মেরামত করতে পারে। সাধারণত জার্মান ডিজাইনের ট্যাংকগুলোর বাড়তি যন্ত্রাংশের ঘাটতির কারণে স্ট্রিডসভাগেন ১২২ বা লেপার্ড ২-এর মতো ট্যাংকগুলো মেরামতে কয়েক মাসও লেগে যায়।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.