অ্যাসাঞ্জকে এখনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ করা হচ্ছে না, হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত

আন্তর্জাতিক

সিএনএন
27 March, 2024, 10:25 am
Last modified: 27 March, 2024, 11:24 am
মঙ্গলবারের (২৬ মার্চ) একটি রায়ে দুই বিচারকের একটি প্যানেল জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক অ্যাসাঞ্জকে অবিলম্বে প্রত্যর্পণ করা হবে না। আদালত অ্যাসাঞ্জের প্রথম সংশোধনী অধিকারের ব্যাপারে একাধিক আশ্বাস দেওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তিন সপ্তাহ সময় দিয়েছেন এবং তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে না

উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে একটি সাময়িক বিজয় লাভ করেছেন কারণ লন্ডনের হাইকোর্ট তার প্রত্যর্পণের বিষয়ে দেশটির কাছ থেকে আরো নিশ্চয়তা চেয়েছেন।

মার্কিন কর্তৃপক্ষের দাবি, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ (৫২) গোপন সামরিক নথি প্রকাশ করে মানুষের জীবন বিপন্ন করেছেন। কয়েক বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তার প্রত্যর্পণের চেষ্টা করে যাচ্ছে। গত মাসে দুই দিনের শুনানি শেষে অ্যাসাঞ্জ তার প্রত্যর্পণের সিদ্ধান্ত নিয়ে যুক্তরাজ্যের ২০২২ সালের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি চেয়েছিলেন। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন, মামলাটি রাজনৈতিকভাবে পরিচালিত হওয়ায় তিনি সুষ্ঠু বিচার পাবেন না।

মঙ্গলবারের (২৬ মার্চ) একটি রায়ে দুই বিচারকের একটি প্যানেল জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক অ্যাসাঞ্জকে অবিলম্বে প্রত্যর্পণ করা হবে না। আদালত অ্যাসাঞ্জের প্রথম সংশোধনী অধিকারের ব্যাপারে একাধিক আশ্বাস দেওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তিন সপ্তাহ সময় দিয়েছেন এবং তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে না।

যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এগুলো দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে মে মাসে একটি শুনানিতে অ্যাসাঞ্জকে তার প্রত্যর্পণের আবেদন করার অনুমতি দেওয়া হবে।

গত পাঁচ বছর ধরে অ্যাসাঞ্জ লন্ডনের বেলমার্শ কারাগারে আটক থাকাকালীন প্রত্যর্পণ এড়িয়ে এসেছেন। এর আগে তিনি লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে রাজনৈতিক শরণার্থী হিসেবে সাত বছর কাটিয়েছেন।

তার মামলাটিকে অনেকেই বাকস্বাধীনতার উপর আঘাত বলে মনে করেন। তাদের ধারণা, যদি তার প্রত্যর্পণের অনুমতি দেওয়া হয় তবে এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর তীব্র প্রভাব ফেলবে।

মঙ্গলবার আদালত বলেছেন, নয়টি আপিলের ভিত্তিতে তিনটিতে অ্যাসাঞ্জের সাফল্যের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। এগুলো হলো: কীভাবে তার প্রত্যর্পণ মত প্রকাশের স্বাধীনতার সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারে, তার জাতীয়তার কারণে বিচারে অন্যায় আচরণের সম্ভাবনা থাকে কিনা এবং প্রত্যর্পণ করা হলে তিনি মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত সুরক্ষা পাবেন কিনা।

কিন্তু প্রসিকিউশন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত— এই দাবির উপর ভিত্তি করে আদালত তাকে আপিল করার অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। আদালত বলেছেন, অ্যাসাঞ্জকে তার রাজনৈতিক মতামতের কারণেই যে বিচার করা হচ্ছে তা তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।

অ্যাসাঞ্জের স্ত্রী স্টেলা অ্যাসাঞ্জ আদালতের রায়ের পরে আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের বলেছেন, তার স্বামী একজন 'রাজনৈতিক বন্দী'।

তিনি বলেন, "তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা সত্য প্রকাশ করার জন্য আনা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে কারণ তিনি তার প্রত্যর্পণ চাওয়া দেশটির যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ প্রকাশ করে দিয়েছিলেন।"

তিনি বাইডেন প্রশাসনকে 'এই লজ্জাজনক মামলাটি' বাদ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন।

বর্তমানে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ১৮টি ফৌজদারি অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হলে ১৭৫ বছর কারাভোগের আদেশ হতে পারে।

অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানো নিয়ে অনেক আইনি লড়াই হয়েছে এখন পর্যন্ত। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে অ্যাসাঞ্জের মানসিক সুস্থতার কারণ দেখিয়ে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত জানিয়েছিলেন, তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানো হলে তা হবে 'অন্যায়'।

তবে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাজ্যের উচ্চ আদালত সে আদেশ বদলে দেন। উচ্চ আদালত জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র তার চিকিৎসার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে পারলে তাকে সেখানে পাঠাতে কোনো বাধা নেই।

 


অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়


 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.