জাতিসংঘে গাজা যুদ্ধবিরতি ভোটের পর বাইডেন নেতানিয়াহু সংঘাতের পথে!

আন্তর্জাতিক

রয়টার্স
26 March, 2024, 02:05 pm
Last modified: 26 March, 2024, 02:10 pm
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভোটদানে বিরত থাকলেও কোন ভেটো দেয়নি। পরবর্তীতে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি পাস হয়েছে। নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, ভেটো না দেওয়ার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার পূর্ববর্তী অবস্থান থেকে সরে এসেছে এবং এর ফলে চলমান যুদ্ধে ইসরায়েল ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতকালীন সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে সম্পর্কের সর্বোচ্চ অবনতি ঘটেছে। সোমবার (২৫ মার্চ) জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভোটদানে বিরত থাকলেও কোন ভেটো দেয়নি। পরবর্তীতে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি পাস হয়েছে।

এ সপ্তাহে গাজার সর্বদক্ষিণের শহর রাফায় আসন্ন অভিযান নিয়ে আলোচনা করতে একটি উচ্চপদস্থ ইসরায়েলি প্রতিনিধিদলের যুক্তরাষ্ট্র সফরের কথা থাকলেও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাসের পর সেই সফর বাতিল করে দিয়েছেন নেতানিয়াহু।

বৈঠক বাতিল হয়ে যাওয়ার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে যেহেতু মার্কিন প্রশাসন গাজায় মানবিক পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। নেতানিয়াহুকে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের জন্য নিরাপদ স্থান রাফাতে স্থল আক্রমণ বাদে অন্য বিকল্প বের করার ব্যাপারে রাজি করানোর চেষ্টা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, ভেটো না দেওয়ার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার পূর্ববর্তী অবস্থান থেকে সরে এসেছে এবং এর ফলে চলমান যুদ্ধে ইসরায়েল ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এদিকে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলের এমন সিদ্ধান্তে হতবাক হয়েছে বাইডেন প্রশাসন। তারা জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে ইসরায়েল অহেতুক প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। মার্কিন প্রশাসন দাবি করেছে, তারা নীতিতে কোন পরিবর্তন আনেনি।

কিন্তু গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। যার ফলে নেতানিয়াহু বাইডেনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গেলে দেশটিতে মার্কিন সামরিক সহায়তার উপর সম্ভাব্য বিধিনিষেধ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।

রিপাবলিকান এবং ডেমোক্রেটিক প্রশাসনের হয়ে মধ্যপ্রাচ্যে সাবেক মধ্যস্থতাকারী অ্যারন ডেভিড মিলার বলেছেন, "এ থেকে দেখা যাচ্ছে, বাইডেন প্রশাসন এবং নেতানিয়াহুর মধ্যে বিশ্বাস কমে আসছে। যদি সংকটটি যত্ন সহকারে সমাধান না করা হয় তাহলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।"

আগামী নভেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পুনরায় অংশ নিতে চাওয়া বাইডেন মার্কিন সমর্থকদের কাছ থেকে এমনিতেই যথেষ্ট চাপে আছেন। পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের থেকেও তাকে চাপ প্রদান করা হচ্ছে গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলার লাগাম টেনে ধরার জন্য।

অন্যদিকে নেতানিয়াহু নিজ দেশে বিভিন্ন সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন। তার ডানপন্থি মিত্ররা তাকে ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে ক্রমাগত চাপ দিয়ে যাচ্ছে। তাকে অবশ্যই জিম্মিদের পরিবারকে বোঝাতে হবে, তিনি তাদের মুক্তির জন্য সবকিছু করছেন। পাশাপাশি তার পদত্যাগ দাবি করে দেশটিতে বিক্ষোভ চলছে।

এর আগে গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধের সময় ওয়াশিংটন বেশিরভাগ সময় 'যুদ্ধবিরতি' শব্দটি এড়িয়ে গিয়েছিল এবং হামাসের বিরুদ্ধে চালানো হামলায় ইসরায়েলকে রক্ষা করার জন্য জাতিসংঘে ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করেছিল।

কিন্তু গাজায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়ায় এবং যুদ্ধবিরতির জন্য ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চাপের মধ্যেই ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৩২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রমজান উপলক্ষ্যে আসা যুদ্ধবিরতির আহ্বান থেকে বিরত থেকেছিল।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাইডেন এবং নেতানিয়াহুর জন্য এখন আসল চ্যালেঞ্জ হল নিজেদের পার্থক্যগুলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে বাড়তে না দেওয়া। 

ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ থিংক ট্যাংকের মিডল ইস্ট প্রোগ্রামের ডিরেক্টর জন অল্টারম্যান বলেছেন, "সম্পর্কের জন্য এটি একটি 'মারাত্মক আঘাত' হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমি মনে করি না যে কোন কিছুর জন্যই দরজা বন্ধ হয়ে গেছে।"

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.