তিনি জানতেন না সনেট কি, এখন তিনিই কবিতার মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার বিজয়ী

আন্তর্জাতিক

ওয়াশিংটন পোস্ট
21 March, 2024, 03:45 pm
Last modified: 21 March, 2024, 11:14 pm
প্রথমে তোলেস চেয়েছিলেন প্রকৌশলী হতে। কিন্তু পরীক্ষায় আশানুরূপ নম্বর পাননি তিনি। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাই পরিসংখ্যান নিয়ে পড়া শুরু করতে হয় তাকে। এ বিষয়েও তিনি খুব ভালো ছিলেন না। পরে কয়েকজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে সাহিত্য প্রেস প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
আজিবোলা তোলেস। ছবি: পোয়েট্রি ফাউন্ডেশন

নাইজেরিয়ার আজিবোলা তোলেস চেয়েছিলেন একজন কবি হতে। কিন্তু কবিতার বিষয়ে তার তেমন একটা জানাশোনা ছিল না। তাই যুক্তরাষ্ট্রের উইনকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম দিন কবিতার ক্লাসে বসে মনে মনে ভেবেছিলেন, তিনি সম্ভবত এই ক্লাসে বসারই যোগ্য নন।

এর ঠিক পাঁচ বছর পর, কবিতার বিষয়ে একসময়ে তেমন কিছু না জানা সেই তোলেসই জিতেছেন কবিতার মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার কেভ ক্যানেম প্রাইজ। '২,০০০ ব্ল্যাকস' পাণ্ডুলিপির জন্য তিনি এ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গ প্রেস শীঘ্রই এই পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করবে।

নাইজেরিয়ার আবেউকুতায় অবস্থিত ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচার থেকে পরিসংখ্যান বিষয়ে ডিগ্রি নিয়েছেন তোলেস। উচ্চশিক্ষা নিতে এরপর তিনি উইনকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। সেখানকার সংস্কৃতি ও নতুন পরিবেশে কালচার শকের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে মুঠোফোনে তোলেস বলছিলেন, 'ওই সময় পরিস্থিতি এমন ছিল যেন আমার হাত-পা হিম হয়ে আসছিল।'

২৯ বছর বয়সী তোলেস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিনের সেই কবিতার ক্লাসের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, 'আমার কাছে সহপাঠীদের আরও বেশি জ্ঞানী ও আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছিল। কারণ, তারা যেসব বিষয় নিয়ে কথা বলছিলেন, সেগুলো সম্পর্কে তারা আগে থেকেই জানতেন। বইয়ে থাকা বিভিন্ন টার্ম বা নতুন শব্দগুলোর বিষয়ও তাদের জানা ছিল। যেমন- 'অ্যানাফোরা'। আমি এ শব্দটি আগে কখনোই শুনিনি। আমাদের প্রথম অ্যাসানইমেন্ট ছিল ব্ল্যাঙ্ক ভার্স নিয়ে। অথচ এই বিষয়ে আমি কিছুই লিখতে পারিনি। আমার মনে হয়েছিল প্রথমে আমাকে খুঁজে বের করতে হবে বা বুঝতে হবে আয়াম্বিক পেন্টামিটার কি।'

নাইজেরিয়ার একটি অস্বচ্ছল পরিবারে বেড়ে উঠেছেন তোলেস। ১০ বছর বয়সে তাকে একটি সরকারি বোর্ডিং স্কুলে পাঠানো হয়। সেখানে ক্লাসে সবচেয়ে ছোট হওয়ায় সহপাঠীরা তাকে হেয় করত। পরে তোলেসকে তার বাবা-মা অন্য একটি স্কুলে ভর্তি করেন। সেখানে সহপাঠীদের সঙ্গে খুব একটা মিশতেন না তোলেস। যখন দুপুরে খাবারের বিরতি হতো, তখন তিনি বসে বসে সাহিত্য ক্লাসের দেয়ালে লেখা কবিতাগুলো লিখতেন।

প্রথমে তোলেস চেয়েছিলেন প্রকৌশলী হতে। কিন্তু পরীক্ষায় আশানুরূপ নম্বর পাননি তিনি। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাই পরিসংখ্যান নিয়ে পড়া শুরু করতে হয় তাকে। এ বিষয়েও তিনি খুব ভালো ছিলেন না। পরে কয়েকজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে সাহিত্য প্রেস প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

অনেক তরুণ নাইজেরিয়ানের মতো তোলেসকেও কাজ খুঁজে পেতে সংগ্রাম করতে হয়েছে। তিনি নৌবাহিনী যোগ দেওয়ার চেষ্টা করে সেখানেও ব্যর্থ হন।

পরে তিনি লাগোসের একটি ব্যাংকে এন্ট্রি-লেভেল পদের জন্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার জন্য দুটি পোয়েট্রি প্রোগ্রামে আবেদন করেন।

সৌভাগ্যবশত তোলেস যুক্তরাষ্ট্রের উইনকনসিন অঙ্গরাজ্যের ম্যাডিসনে অবস্থিত উইনকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান। ২০১৯ সালের গ্রীষ্মে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। সেখানে তিনি সনেট, পেত্রার্কীয় সনেট ও শেক্সপেরীয় সনেট সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করেন।

স্নাতক সম্পন্নের পর স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ফেলোশিপ প্রোগ্রামে ভর্তি হন তোলেস। ওই সময়ে তিনি আরও অন্যান্য বিষয় নিয়েও পড়াশোনা করেন। এই সময়ে শতাব্দীজুড়ে ট্রান্সআটলান্টিক দাস বাণিজ্য প্রথা থেকে আজকের অভিবাসন এবং আফ্রিকা ও পশ্চিমার মধ্যে সম্পদের প্রবাহের মতো বিষয়গুলো নিয়ে তার ভাবনা শুরু হয়।

যেই ভাবনার দৃশ্যপটই তোলেস তার '২,০০০ ব্ল্যাকস'র প্রথম অংশ 'রিফিউজি সনেটস'-এ তুলে এনেছেন। তোলেস তার বাবাকে নিয়েও একাধিক কবিতা লিখেছেন।


অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.