যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করতে কংগ্রেসে বিল পাশ

আন্তর্জাতিক

আল জাজিরা
14 March, 2024, 11:40 am
Last modified: 14 March, 2024, 11:43 am
বাইটড্যান্স চীন সরকারের হয়ে টিকটক দিয়ে ১৭০ মিলিয়ন আমেরিকান ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে, এমন উদ্বেগ থেকেই টিকটক নিষিদ্ধের আইন পাশ করতে যাচ্ছে বাইডেন সরকার।

ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটক নিষিদ্ধ করতে মার্কিন কংগ্রেসে একটি বিল পাশ হয়েছে। বুধবার (১৩ মার্চ) মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসে ৩৫২-৬৫ ভোটে বিলটি পাশ হয়। 

তবে বিলটির এখনও সিনেটের অনুমোদন পাওয়া বাকি। তারপরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্বাক্ষর করলেই এটি আইনে পরিণত হবে।

বিলটি পাশ হলে টিকটকের চীনা মালিক বাইটড্যান্সকে ছয় মাসের মধ্যে তাদের মার্কিন সম্পদ বিক্রি করতে হবে, অন্যথায় নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হবে।

বাইটড্যান্স চীন সরকারের হয়ে টিকটক দিয়ে ১৭০ মিলিয়ন আমেরিকান ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে, এমন উদ্বেগ থেকেই টিকটক নিষিদ্ধের আইন পাশ করতে যাচ্ছে বাইডেন সরকার। তবে বাইটড্যান্স জোর দিয়ে বলছে যে, তারা স্বাধীনভাবে কাজ করে, কারও অধীন নয়।

চীনে সাম্প্রতিক জাতীয় নিরাপত্তা আইন পাস হয়েছে, যা সংস্থাগুলোকে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে সহায়তা করতে বাধ্য করতে পারে, এটি এই উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

বুধবার মার্কিন প্রতিনিধি ক্যাথি ম্যাকমরিস রজার্স বলেন, 'এই আইনের কারণে টিকটকের সামনে দুটি পথ খোলা আছে। হয় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) সাথে আবদ্ধ চীনা প্যারেন্ট কোম্পানি বাইটড্যান্স থেকে পৃথক হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া, অথবা সিসিপির সাথে জোটবদ্ধ হওয়া এবং প্রতিক্রিয়াগুলো মোকাবেলা করা।'

বিলটির সমালোচকরা যুক্তি দিয়েছেন যে, আইনটি বাক স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করে এবং এর উল্লেখযোগ্য সংস্কারের অভাব রয়েছে।

প্রতিনিধি বারবারা লি পরামর্শ দিয়েছিলেন যে তাড়াহুড়ো করে এবং গোপনীয়ভাবে একটি সংস্থাকে একঘরে করার পরিবর্তে, কংগ্রেসের উচিত ব্যাপক ডেটা গোপনীয়তা সুরক্ষা পাস করা এবং এই জাতীয় সংস্থাগুলোর দ্বারা সৃষ্ট জাতীয় সুরক্ষা ঝুঁকি সম্পর্কে জনসচেতনতা উন্নত করার দিকে মনোনিবেশ করা।

প্রতিনিধি পরিষদে ভোটাভুটির আগে বাইডেন প্রশাসনের একজন শীর্ষ জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা টিকটক ও এর জাতীয় নিরাপত্তার প্রভাব নিয়ে আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।

রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটিক উভয় দলের আইনপ্রণেতারা টিকটক প্ল্যাটফর্মের ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে প্রচুর ফোন কল পেয়েছেন যারা প্রস্তাবিত আইনটির সাথে তাদের অসম্মতি প্রকাশ করছেন। 

ভোটাভুটির আগে বুধবার প্ল্যাটফর্মের বিশিষ্ট কনটেন্ট ক্রিয়েটরসহ বেশ কয়েকজন টিকটক সমর্থক ইউএস ক্যাপিটালের সামনে জড়ো হয়েছিলেন। 

সংস্থাটি ভোটের বিরোধিতা করে একটি বিবৃতিও জারি করেছে। টিকটকের মুখপাত্র অ্যালেক্স হাউরেক এক বিবৃতিতে বলেন, 'এই প্রক্রিয়াটি গোপন ছিল এবং বিলটি নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য নিয়েই তাড়াহুড়ো করে পাশ করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী যে সিনেট ঘটনাগুলো বিবেচনা করবে, তাদের ভোটারদের কথা শুনবে এবং এবং বুঝতে পারবে যে এটি ৭০ লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসা এবং আমাদের প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভরশীল ১৭ কোটি আমেরিকানকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে।'

সিনেটে টিকটকের ভাগ্য এখনও স্পষ্ট নয়। সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা চাক শুমার বলেছেন, বিলটির পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে তিনি সংশ্লিষ্ট কমিটির চেয়ারম্যানদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। মার্কিন সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান উভয় দলের নেতারা হাউসে বিলটি পাসের পক্ষে সমর্থন প্রকাশ করেছেন এবং এটি সিনেটে পাস হওয়া এবং আইনে পরিণত হওয়া নিশ্চিত করতে সহযোগিতা করতে তাদের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন।

বিলটি আইনে পরিণত হলে নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হওয়ার আগে টিকটকের মালিক বাইটড্যান্স ছয় মাস সময় পাবে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে কার্যক্রম বিক্রি করার জন্য। এই সময়সীমা পূরণ করতে ব্যর্থ হলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অ্যাপ স্টোরগুলো টিকটক বা বাইটড্যান্স-নিয়ন্ত্রিত অ্যাপ্লিকেশন হোস্ট করতে পারবে না।

তবে, ইচ্ছেপূর্বক বিক্রয় প্রক্রিয়া বিলম্ব করলে সম্ভবত দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হবে। বিল স্বাক্ষরের ১৬৫ দিনের মধ্যে বাইটড্যান্সকে আপিল করতে হবে। 

গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের এক বিচারক মন্টানা অঙ্গরাজ্যে টিকটক ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে আইনি আদেশ জারি করেন। টিকটক এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আপিল করে এবং আদালত টিকটকের পক্ষে রায় দিয়ে নিষেধাজ্ঞাটি কার্যকর করা থেকে বিরত রাখেন। 

টিকটকের সিইও শো জি চিউ বুধবার ক্যাপিটল হিলে গিয়ে সিনেটরদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।


অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.