দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় কেন সাপের দংশন বাড়ছে–কী কারণ?

আন্তর্জাতিক

আল জাজিরা
05 March, 2024, 05:50 pm
Last modified: 05 March, 2024, 06:21 pm
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমান হলো, প্রতিবছর বিশ্বে ৫৪ লাখ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হয়, যার অর্ধেকই বিষধর সাপের কামড়ের ঘটনা। এতে অন্তত এক লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। আর এই মৃত্যুর প্রায় ৭০ শতাংশ ঘটনাই দক্ষিণ এশিয়ায়।

১৯৫০ সালে 'পয়জন' নামে একটি ছোটগল্প লিখেছিলেন ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক রোয়াল্ড ডাল। গল্পে সাপের ঘটনা দিয়ে খুব সুন্দরভাবে তিনি বর্ণবাদের বিষয়টি ফুটিয়ে তুলেছিলেন।

তার গল্পটা ছিল এমন- ঘটনাচক্রে গল্পের প্রধান চরিত্রগুলোর মধ্যে একজনের পেটে কমন ক্রেইট (কালনাগ ও শাখিনী) নামের একটি সাপ ঢুকে পড়ে। সেই সাপের কামড় থেকে বাঁচতে শুরু হয় প্রাণপণ চেষ্টা। শেষ পর্যন্ত ঘটনা মোড় নেয় এমন পরিস্থিতিতে, যেখানে স্পষ্ট হয়ে ওঠে- আসল বিষ সাপের নয়, বিষ হলো এই বর্ণবিদ্বেষ।

বর্ণবিদ্বেষ বোঝাতে ক্রেইটের এই উদাহরণ সম্ভবত ওই সময়ে যথাযথ রূপকই ছিল বলা চলে। কারণ, তখন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভারতে বিষধর সাপের ভয় খুবই সাধারণ বা বাস্তব একটি বিষয় ছিল। আর এ কারণেই হয়ত তখনকার পপ সংস্কৃতি, গণমাধ্যম ও লোককাহিনিগুলোতেও সাপের বর্ণনা পাওয়া যায়।

তবে এখন যেটি উদ্বেগের বিষয় তা হলো-  বিষধর সাপ কামড়ানোর ঘটনা বেড়েই চলেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রাক্কলন হলো- প্রতিবছর বিশ্বে ৫৪ লাখ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হয়, যার অর্ধেকই বিষধর সাপের কামড়ের ঘটনা। আর এতে অন্তত এক লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। আর এই মৃত্যুর প্রায় ৭০ শতাংশ ঘটনাই দক্ষিণ এশিয়ায়।

কেবল ভারতের গবেষণাতেই দেখা গেছে যে সেখানে (ভারত) প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হয়। এর মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ৫৮ হাজার।

২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার কেলানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেও সাপে কাটার সম্ভাবনা বাড়ছে।

ডব্লিউএইচও দক্ষিণ এশিয়াকে 'বিষধর সাপের জন্য জীববৈচিত্র্যের হটস্পট' হিসেবে বর্ণনা করে থাকে। গতবছর সংস্থাটি জানিয়েছিল, এ অঞ্চলে সাপে কামড়ানোর ঘটনা প্রতিরোধে তারা কর্মসূচি বাড়াচ্ছে।

ছবি: আলজাজিরা

দক্ষিণ এশিয়ার কোথায় সাপে কামড়ানোর ঘটনা সবচেয়ে বেশি?

দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে সাপে কাটার তথ্যগুলো খুব একটা স্পষ্ট নয়।

যেমন- ডব্লিউএইচওর তথ্যমতে, ২০০৭ সালের পর থেকে পাকিস্তানে সাপে কামড়ানোর ৪০ হাজার ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ২০০ মানুষের। অথচ এ বিষয়ে দেশটির কাছে সরকারি কোনো তথ্য নেই।

নেপালের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে কোনো সময়ই সাপে কামড়ানোর ঘটনার তথ্য ছিল না। তবে কয়েকজন চিকিৎসকের করা গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রতি বছর দেশটিতে ৪০ হাজার মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হয়। মারা যায় তিন হাজার মানুষ।

ডব্লিউএইচওর প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় সাপে কামড়ানোর প্রায় ৩৩ হাজার টি ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪০০ জনের।

ধারণা করা হচ্ছে, গবেষণার অভাবের কারণেই দক্ষিণ এশিয়ায় সাপের কামড়ানোর ঘটনাগুলো অনথিভুক্তই থেকে গেছে।

এ বিষয়ে ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হসপিটাল অ্যান্ড বার্মিংহাম অ্যান্ড উইমেন'স হসপিটালের হার্ভার্ড অ্যাফিলিয়েটেড ইমার্জেন্সি মেডিসিন রেসিডেন্সির আবাসিক চিকিৎসক আরমাহ মেমন বলেন, 'সম্ভবত এটিকে (সাপে কামড়ানো) বড় কোনো সমস্যা বলে মনে করা হয় না, আর তাই হয়ত ঘটনাগুলো অনথিভুক্ত রয়ে গেছে।'

কেলানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, শ্রীলঙ্কায় সাপে কামড়ানোর ঘটনা ইতোমধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে। গবেষণাটিতে জলবায়ু পরিবর্তনের পূর্বাভাস তুলে ধরার পাশাপাশি এও বলা হয়েছে, আগামী ২৫ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে দেশটিতে সাপে কামড়ানোর ঘটনার বার্ষিক হার ৩১.৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

ছবি: আলজাজিরা

সচরাচর এ অঞ্চলে যে সাপগুলো দেখা যায়

পাকিস্তান ও ভারতে সাধারণত যেসব প্রজাতির সাপ দেখা যায়, সেগুলোর মধ্যে প্রধান চারটি হলো কমন ক্রেইট, রাসেল'স ভাইপার, স স্কেলড ভাইপার ও ইন্ডিয়ান কোবরা (নাজা নাজা)।

এছাড়াও রয়েছে কিং কোবরা (রাজ গোখরা)। এ সাপগুলোর গড়ে ৩ থেকে ৩.৬ মিটার লম্বা হয়ে থাকে। তবে এটি সর্বোচ্চ ৫.৪ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ভারতের উত্তরাঞ্চল ও নেপালে এই সাপের পাশাপাশি নেপালে কমন ক্রেইট, গ্রিন পিট ভাইপার, চেকার্ড কিলব্যাক ও নেপাল কুকরি সাপগুলোও দেখা যায়।

শ্রীলঙ্কায় রাসেল'স ভাইপার ও কমন ক্রেইট ছাড়াও ইন্ডিয়ান পাইথনেরও বিচরণ রয়েছে।

সাপের কামড় কতটা বিপজ্জনক?

প্রতি বছর সাপে কাটার ৫৪ লাখ ঘটনার মধ্যে ১৮ লাখ থেকে ২৭ লাখই বিষধর সাপে কাটার ঘটনা।

এ বিষয়ে সদানন্দ রাউত নামে এক চিকিৎসক বলেন, 'যদি সময়মতো চিকিৎসা না হয়, তাহলে বিষের কারণে মাত্র কয়েক মিনিট থেকে দুই-তিন ঘণ্টার মধ্যে সাপে কাটা ব্যক্তি মারা যেতে পারেন।'

সদানন্দ রাউত ও তার স্ত্রী পল্লবী রাউত একসঙ্গে ভারতের মহারাষ্ট্রের নারায়ণগাঁও অঞ্চলে সাপের কামড়ে মৃত্যু প্রতিরোধে কাজ করছেন।

সদানন্দ রাউত বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, সাপের প্রজাতি অনুযায়ী এর বিষের ধরনও আলাদা। যেমন- ইন্ডিয়ান কোবরার রয়েছে নিউরোটক্সিক ভেনম (বিষ), যা খুবই মারাত্মক। এই বিষ মানুষকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে তুলতে পারে। আর দংশনের কয়েক মিনিটের মধ্যেই শারীরিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে শুরু করে।

কোবরার মতো ক্রেইটের বিষও একই রকম। তবে এ সাপের বিষের প্রতিক্রিয়া শুরু হয় চার থেকে ছয় ঘণ্টা পর। এ সাপে কাটলে আক্রান্ত ব্যক্তি চোখ খুলতে পারেন না, শ্বাসকষ্ট ও হৃদ জটিলতা শুরু হয়।

রাসেল'স ভাইপার ও স স্কেলড ভাইপারে রয়েছে ভাস্কুলোটক্সিক ভেনম। এসব সাপের কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রচণ্ড যন্ত্রণা অনুভব করেন। বিষের প্রতিক্রিয়ায় দেহের টিস্যুগুলো মারা যেতে শুরু করে।

রাউত জানান, ভাস্কুলোটক্সিক বিষের প্রতিক্রিয়া কয়েক মিনিটের মধ্যে শুরু হয়। এ বিষের ফলে রক্ত পাতলা হয়ে যেতে পারে এবং কিডনি বিকল হয়ে পড়তে পারে।

ছবি: আলজাজিরা

কি হয় যখন একটি সাপ আপনাকে কামড়ায়?

দংশনের শিকার হওয়ার পর মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরেছেন এমন ব্যক্তিরা বলছেন, বিষধর সাপের কামড়ের প্রতিক্রিয়া খুবই আতঙ্কের হতে পারে।

এ বিষয়ে ভারতের সীমান্তবর্তী নেপালের সাগরনাথ এলাকার খারেল (৫০) নামে এক কবিরাজের কথা বলা যাক। একবার একটি ক্রেইট তার ডানে হাতে কামড় দিয়েছিল। তখন তার বয়স ছিল ১৮ বছর।

সেই ভয়ানক আতঙ্কের কথা স্মরণ করে খারেল আলজাজিরাকে বললেন, 'আমি ভেবেছিলাম আমি মারা যাচ্ছি।'

খারেলের বাড়ি থেকে সবচেয়ে কাছের হাসপাতালটিরও দূরত্ব ছিল ২৫ কিলোমিটার।

খারেল জানান, হাসপাতালে যাওয়ার পথে মোটামুটি ২০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত তিনি আশে-পাশে কি হচ্ছে, তা বুঝতে পারছিলেন। কিন্তু এর পরই তার চোখ ও জিহ্বা কাঁপতে শুরু করে এবং অসাড় হয়ে যায়। একপর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারান।

হাসপাতালে নেওয়ার পর খারেলের দেহে কয়েক ডোজ অ্যান্টিভেনম পুশ করা হয়। একপর্যায়ে জ্ঞান ফেরে খারেলের। জেগে ওঠার পর তিনি মনে মনে ভেবেছিলেন, 'আমি কোথায়?'

যদি চিকিৎসা না করানো হয়, কিংবা চিকিৎসা নিতে দেরি হয়, তাহলে বিষধর সাপের কামড় মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এতে আক্রান্ত ব্যক্তি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারেন। এছাড়াও নিশ্বাস নিতে না পারা, রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা ও কিডনি বিকল হয়ে পড়তে পারে। এমনকি টিস্যুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে কখনও কখনও দেহের কোনো অঙ্গও কেটে ফেলা প্রয়োজন হতে পারে।

বন্যপ্রাণি বিষয়ক জীববিজ্ঞানী ও উত্তর ভারতের উত্তরাখণ্ড এলাকার সংরক্ষণবিদ জিগনাসু ডলিয়া জানান, সব সাপের কামড়েই বিষক্রিয়া হয় না। মূলত প্রায় অর্ধেক কিং কোবরার কামড় 'ড্রাই বাইটস' বা 'শুকনো কামড়'।

ড্রাই বাইটস বা শুকনো কামড়ের অর্থ হলো- দংশন করলেও সাপ ওই ব্যক্তির দেহে কোনো বিষ ছাড়ে না। করলেও যৎসামান্য, যাতে প্রাণহানির সম্ভাবনা থাকে না।

তবে কোন সাপ কামড়েছে, সেটি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সব সাপের কামড়ই বিষাক্ত বলে বিবেচনা করা এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নেওয়া উচিত।

ছবি: আলজাজিরা

মানুষ কি সহজেই অ্যান্টিভেনম পেতে পারে?

এক্ষেত্রে সচেতনতা একটি জরুরি বিষয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ২০০০ সালের একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে চিকিৎসক আরমাহ মেমন জানান, অ্যান্টিভেনম যে আছে, তা সিন্ধুর প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৪৪.৫ শতাংশ মানুষই জানত না।

এছাড়াও পাকিস্তান ও ভারতে, বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে সাপের কামড় ও দংশনের শিকার ব্যক্তির চিকিৎসা নিতে যাওয়ার মধ্যে প্রায়ই উল্লেখযোগ্য বিলম্ব দেখা যায়।

মেমন জানান, ভারত ও পাকিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকেরা সাপে কাটার পরও মাঝে মাঝে হাসপাতালে যেতে দেরি করেন। এর চেয়ে তারা স্থানীয় ওঝাদের কাছে যাওয়া প্রাধান্য দেন। কিন্তু সেই ওঝাদের কাছে তো অ্যান্টিভেনম নেই।

মেমন মনে করেন, সাপে কাটার ঘটনা নথিভুক্ত না হওয়ার পেছনে এটি অন্যতম একটি কারণ।

তিনি যোগ করেন, দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে অ্যান্টিভেনম উৎপাদন বাড়াতে হবে।

পাকিস্তানে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ (এনআইএইচ) নামে মাত্র একটি অ্যান্টিভেনম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এটি দেশটির রাজধানী ইসলামাবাদে অবস্থিত। 

মেমন বলেন, 'অ্যান্টিভেনম অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এটিকে আরও সাশ্রয়ী করাও এক্ষেত্রে সঠিক পদক্ষেপ হবে।'

জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে সাপে কামড়ানোর ঘটনা প্রভাবিত করছে?

বিজ্ঞানীরা গবেষণায় জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সাপে কামড়ানোর ঘটনার এক ধরনের সম্পর্ক তুলে ধরেছেন।

২০২৩ সালের জুলাইয়ে ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রতি এক ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সাপের কামড়ের শিকার হওয়ার সম্ভাবনাও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ছে।

গবেষকরা বলছেন, সাপের বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে। তাদের প্রত্যেকের জীবনযাত্রার ধরনও ভিন্ন। ঠিক এ কারণেই সর্বজনীনভাবে সাপের ওপর বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব এবং সে সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী কিংবা সাধারণ কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোটা কঠিন।

ছবি: আলজাজিরা

ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক সংগঠন সেইভ দ্য স্নেকের প্রতিষ্ঠাতা ও জীববিজ্ঞানী মাইকেল স্টারকি বলছিলেন, সাপের এমন কিছু প্রজাতি রয়েছে, যেগুলোর বাসস্থান তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বসবাস অনুপযোগী হয়ে ওঠে। এমনকি পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হতে পারে যেখানে সাপের টিকে থাকাটাই কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণে সাপেরা সেখান থেকে নিজেদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ বা এলাকায় চলে যায়। হতে পারে জনবসতিপূর্ণ এলাকাও। আর এর মধ্য দিয়ে সাপ মানুষের কাছাকাছি চলে আসছে।

কিছু সাপ পরিবর্তিত আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। আবার কিছু সাপ তা পারে না। এ কারণে তারা সেখান থেকে অন্যত্র চলে যায়, এমনকি শেষ পর্যন্ত বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সাপ কেবল মানুষের কাছাকাছিই আসছে না, বরং এর সঙ্গে সঙ্গে দংশনের ঘটনাও বাড়ছে।

উদাহরণস্বরূপ সেইভ দ্য চিলড্রেনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে পাকিস্তানে রেকর্ডভাঙা বৃষ্টিপাতের পর বন্যা কবলিত পরিবারগুলোর ৫৪ শতাংশ ঘর ছেড়ে বাইরে তাঁবুতে কিংবা অস্থায়ী কোনো শিবিরে আশ্রয় নেয়। অনেক আশ্রয়কেন্দ্রও ছিল জলাবদ্ধ। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ঘুমিয়ে থাকা শিশুদের বিষধর সাপের কামড়ের শিকার হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল অনেক বেশি। কারণ বিষধর সাপগুলো স্থির পানি বা জলাবদ্ধ স্থানের আশে-পাশে থাকতে পছন্দ করে।

স্টারকি বলেন, যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাপেরা এক এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে যাচ্ছে, 'বিশ্বাস করুন বা নাই করুন, এতে বেঁচে থাকা নিয়ে সাপগুলো এক ধরনের উদ্বেগ বা চাপে পড়েছে।' এর ফলে আরও অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যেতে পারে, যার কারণে বিষধর সাপের কামড়ানোর ঘটনাও বাড়তে পারে।

এছাড়াও নগরায়ণের ফলে সাপের বসবাসের জায়গা সংকুচিত হয়ে আসছে বলে জানান স্টারকি। এগুলো সাপের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ।

সাপ আমাদের কেন প্রয়োজন?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের নিজের সুবিধার জন্যই সাপসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণির সঙ্গে আরও ভালোভাবে সহাবস্থান করতে শেখা জরুরি।

সাপ আসলে মানুষের জন্য খুবই সহায়ক। সাপ সাধারণত ইঁদুর বা ইঁদুর জাতীয় প্রাণি খায়। অন্যদিক থেকে বাজপাখি, প্যাঁচা ও এমনকি বড় বড় সাপের খাদ্যও সাপ। সাপ না থাকলে খাদ্যশৃঙ্খল ও বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য ভেঙে পড়বে।

স্টারকি বলেন, 'সাপ কীটপতঙ্গ খেয়ে মানুষের উপকার করছে এবং বাস্তুতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে ভূমিকা রাখছে।'

ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, বিশ্বে প্রতিবছর মোট উৎপাদিত ফসলের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ইঁদুর জাতীয় প্রাণির কারণে নষ্ট হয়। এছাড়াও এসব প্রাণি লাইম রোগের ব্যাকটেরিয়া বহন করে। যার ফলে এসব প্রাণির কামড়ে মানুষের জ্বর, ফুসকুড়ি অস্থিসন্ধিতে ব্যথা ও মাথা ব্যথা হতে পারে।

২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা র‌্যাটেল স্নেকের সংখ্যা কমে যাওয়া ও লাইম রোগের বেড়ে যাওয়ার মধ্যে এক ধরনের যোগসূত্র খুঁজে পান।

গবেষকরা বলছেন, সাপ মেরে ফেলাও মানুষের দংশনের ঝুঁকি বাড়ায়। কারণ, কোনো সাপ মারার জন্য মানুষ সাপের যত কাছাকাছি যায়, আত্মরক্ষার জন্য ওই ব্যক্তিকে সাপ কামড় দেওয়ার সম্ভাবনাও তত বাড়ে।

আমরা কীভাবে সাপ রক্ষা করব ও এর কামড় প্রতিরোধ করব?

স্টারকি বলেছেন, এক্ষেত্রে সাধারণ কিছু বিষয়ে সচেতনতার মাধ্যমে ঘরে কিংবা ফসলের ভেতর সাপ আসা ঠেকানো সম্ভব। যেমন- বায়ুরোধী পাত্রে শস্য রাখা, যাতে সেখানে কোনো ইঁদুর ঢুকতে না পারে। ঘরবাড়ির চারপাশে কীটপতঙ্গ রোধে কার্যকর পেস্ট বা বিষ ব্যবহার করা।

এ বিষয়ে সদানন্দ রাউত বলেন, সাপে কাটার পর চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার অধিবাসীরা ওঝার কাছে আগে ছুটে যান। এতে 'অত্যন্ত মূল্যবান সময়' নষ্ট হয়। এজন্য মানুষের সচেতনতা বাড়াতে হবে। স্কুল, গ্রামীণ কেন্দ্র, উপজাতীয় প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো থেকে সচেতনতা প্রচার করতে হবে।


অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক  
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.