৩২ ডলার বিলের সঙ্গে ১০ হাজার ডলার বকশিশ পেলেন ওয়েট্রেস; তারপরেই হারালেন চাকরি!

আন্তর্জাতিক

ডেইলি মেইল
18 February, 2024, 05:20 pm
Last modified: 26 February, 2024, 07:30 pm
ডেট্রয়েট ফ্রি প্রেস অনুসারে, বকশিশ দেওয়া কালো স্যুট পরা মধ্যবয়সী লোকটি তার পরিচয় প্রকাশ করেননি। তবে তিনি বলেছিলেন, তিনি তার এক বন্ধুর শেষকৃত্যের জন্য এই শহরে এসেছিলেন এবং এই বকশিশের মাধ্যমে অন্যদের মাঝে কিছুটা আনন্দ ছড়িয়ে দিতে চান।  

মিশিগানে মাত্র ৩২.৪৩ ডলার খাবার বিলের সঙ্গে ১০ হাজার ডলার বকশিশ পাওয়া এক ওয়েট্রেস চাকরি হারিয়েছেন।

তবে রেস্তরাঁর মালিকেরা জোর দিয়ে বলেছে, ওই নারীর বরখাস্তের সঙ্গে তার মোটা অঙ্কের বকশিশ পাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এটি একটি 'ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত'।

লিনসে বয়েড একজন মিশিগান নারী। তার একটি সন্তান রয়েছে। বেন্টন হারবারের ম্যাসন জার রেস্তরাঁয় চাকরি করতেন তিনি।

মোটা অঙ্কের বকশিশ পাওয়ার পরে তিনি এর অর্থ তার অন্য আট সহকর্মীর সঙ্গে ভাগ করে নেন।

তবে এরপরেই তাকে রেস্তোরাঁ থেকে বরখাস্ত করা হয়। 

বয়েড তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছিলেন, একজন অজ্ঞাত গ্রাহক তার সদ্য প্রয়াত বন্ধুর সম্মানে ১০ হাজার ডলার বকশিশ দিয়ে যাওয়ার পরেই নাটক শুরু হয়েছিল।

পরে অবশ্য তিনি পোস্টটি মুছে ফেলেন। 

ডেট্রয়েট ফ্রি প্রেস অনুসারে, বকশিশ দেওয়া কালো স্যুট পরা মধ্যবয়সী লোকটি তার পরিচয় প্রকাশ করেননি।

তবে তিনি বলেছিলেন, তিনি তার এক বন্ধুর শেষকৃত্যের জন্য এই শহরে এসেছিলেন এবং এই বকশিশের মাধ্যমে অন্যদের মাঝে কিছুটা আনন্দ ছড়িয়ে দিতে চান।  

'বয়েড ডাব্লুএসবিটিকে বলেন, 'আমি শুধু তাকে জড়িয়ে ধরলাম। আমি তখন তার নামও জানতাম না, তবে আমি তাকে জড়িয়ে ধরলাম। তারপরে তিনি আমাকে বলেন যে তিনি তার খুব প্রিয় কারও স্মৃতিচিহ্ন রেখে যাচ্ছেন। তিনি তার স্মৃতির উদ্দেশে কিছু মানবিক ও উদার কাজ করতে চান।'

এই ঘটনা অন্য অনেকের জন্য একটি অনুপ্রেরণামূলক গল্প হওয়ার কথা ছিল, তা না হয়ে বরং একটি নেতিবাচক মোড় নিয়েছে।

কারণ বয়েড তার ভাইরাল পোস্টে জানিয়েছেন, বকশিশ পাওয়ার পর 'বিভিন্ন নাটকীয়তা, শত্রুতা ও প্রতিহিংসার' কারণে তিনি তার চাকরি হারিয়েছেন। 

রেস্তোরাঁ মালিক অ্যাবল মার্টিনেজ ও জেমি কাজিন্স দম্পতি বলেছেন, 'শ্রম আইন' অনুযায়ী জনসম্মখে তারা সব কথা বলতে পারবে না।

তবে তারা দাবি করেছে, বয়েডকে বরখাস্ত করার সঙ্গে ১০ হাজার ডলার বকশিশের কোনো সম্পর্ক নেই।

ওই দম্পতি একটি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, 'শ্রম আইনের কারণে ওই নারীর চাকরি হারানোর কারণ এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের সুরক্ষার জন্য আমরা জনসম্মুখে কোনো মন্তব্য করতে পারি না।' 

তারা লেখেন, 'তবে আমরা বলছি বকশিশের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি পুরো বকশিশ পেয়েছিলেন, তিনি এর উপর কোনো কর দেননি। হ্যাঁ, যে লোকটি এটি রেখে গেছে তার অনুরোধে তিনি বকশিশের অর্থ অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন।' 

তবে বয়েড বলেছেন, মোটা অঙ্কের বকশিশ পাওয়ার কারণে রেস্তরাঁর ভিতরে 'নাটক' শুরু হয়। এমনকি তাকে মানসিক চিকিৎসা নিতেও বলা হয়েছিল।

তিনি লিখেছেন, 'নাটক শুরু হয়েছিল। পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে, তাই বিভিন্ন গুজব সমাধানের চেষ্টা করায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়।' 

তবে তিনি নির্দিষ্ট করে বলেননি সেদিন কী ঘটেছিল।

অবশ্য এরপরই তিনি পোস্টটি মুছে ফেলেছেন।

তবে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে, রেস্তোরাঁর কর্মীরা সেদিন কাজ না করে বসেছিলেন। তারা সম্ভবত বকশিশের অর্থ ভাগ করে নেওয়ার আশায় ছিলেন। 

এক পোস্টে বলা হয়, '১০ হাজার ডলার বকশিশ পাওয়ার দিন কর্মীরা কাজ না করে বসেছিলেন, তারা এটি ভাগ করে নেওয়ার আশায় ছিলেন এবং রেস্তোরাঁর ভেতরে একটি অত্যন্ত নাটকীয় পরিবেশ তৈরি করেছিলেন।'

বয়েডের মতে, ম্যানেজমেন্ট তাকে 'বরখাস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য' আরও একদিন ছুটি নিতে বলেছিল এবং তাকে 'পেশাদার উপায়ে চাকরি ছাড়ার কথা বলার অনুরোধ জানিয়ে ' তার পাঠানো ম্যাসেজের কোনো জবাব দেয়নি।

মঙ্গলবার একটি ফোন কলে বয়েডকে বরখাস্ত করা হয়।

বয়েড তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অভিজ্ঞতার কথা ফেসবুকে পোস্ট করার সঙ্গে সঙ্গে নেটিজেনরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।

সবাই রেস্তরাঁর ফেসবুক পেজ ও গুগল ম্যাপে নেগেটিভ রিভিউ দিয়েছে। 

ক্ষুব্ধ এক ব্যবহারকারী বয়েডের পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করে লিখেছেন, 'লিনসে বকশিশদাতার ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়েছিলেন এবং মানবিকতা নিয়ে অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন। যেখানে অন্য অনেকেই হয়ত এই পুরো অর্থ নিজের কাছে রেখে দেওয়ার কথা ভাবতেন।'

আরেকজন লিখেছেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে তার সঙ্গে কাজ করেছি এবং তিনি আমার দেখা সবচেয়ে দয়ালু ও উদার মানুষদের একজন। 

একজন লিখেছেন, 'আপনাদের প্রতি এবং সেসব কর্মচারীদের প্রতি ঘৃণা, যারা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। আপনারা কতটা স্বার্থপর হতে পারেন?! '

রেস্তোরাঁ মালিকেরা বয়েডের দাবি অস্বীকার করলেও কেন তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত বলতে রাজি হননি। 

রেস্তোরাঁর মালিকেরা উড-টিভিকে বলেন, 'আমরা জানি আপনারা ভাবছেন বকশিশ নেওয়ার কারণে তাকে বরখাস্ত করেছি, কথাটি সত্যি না।' 

তারা বলেন, 'আমাদের এমনও কর্মী রয়েছে যারা বহু বছর ধরে আমাদের এখানে কাজ করছে। এমনকি কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতি গ্রীষ্মে আমাদের এখানে কাজে আসে। আমরা আমাদের কর্মীদের একের পর এক সুযোগ দিই, তাই আমরা স্পষ্টতই কাউকে বিনা কারণে যেতে দেই না।'

মালিকপক্ষ সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছে, এটি সম্পূর্ণরূপে একটি ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত ছিল।

তারা জোর দিয়ে বলেছে, এই ধরনের সিদ্ধান্ত 'হালকাভাবে বা তাড়াহুড়ো করে নেওয়া হয় না'।

মালিকেরা তাদের ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, 'আমরা তাদের জন্য কলেজের তহবিলে অনুদান দিই, আমরা কোভিডের সময় তাদের কাজে রেখেছি, আমরা আমাদের ক্ষমতার মধ্যে সবকিছু করি যাতে কর্মীরা না চলে যায়।'

 

 

ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.