কেন্দ্র ও প্রাদেশিক সরকার গঠনে জোট করবে পিটিআই
কেন্দ্র ও পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদে মজলিস-ই-ওয়াহদাত-মুসলিমিনের (এমডব্লিউএম) সঙ্গে এবং খাইবার পাখতুনখোয়ায় জামায়াতে ইসলামীর (জেআই) সঙ্গে জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ (পিটিআই)।
তবে, দেশটির দুটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দল মুসলিম লিগ–নওয়াজ (পিএমএল–এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে দলটি।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দেশটির রাজধানী ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মুখপাত্র রউফ হাসান এসব তথ্য জানিয়েছেন।
রউফ হাসান বলেন, 'তিনি (ইমরান) দুটি দলের সঙ্গে জোট করার অনুমোদন দিয়েছেন। আমরা কেন্দ্র ও পাঞ্জাবে মজলিস-ই-ওয়াহদাত-মুসলিমিনের (এমডব্লিউএম) সঙ্গে এবং খাইবার পাখতুনখোয়ায় জামায়াতে ইসলামীর (জেআই) সঙ্গে জোট গঠন করব।'
তিনি বলেন, তিনি খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আলী আমিন গান্দাপুরের নাম ঘোষণা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, তবে সরকার গঠনে পাকিস্তান মুসলিম লিগ–নওয়াজ (পিএমএল–এন), পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট–পাকিস্তানের (এমকিউএম–পি) সঙ্গে জোট করতে বারণ করেছেন তিনি।
হাসান বলেন, এই তিন দল ছাড়া তিনি আমাকে অন্য সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করার এবং তাদের সঙ্গে আলোচনা করার ম্যান্ডেট দিয়েছেন, যাতে আমরা জোট গঠন করতে পারি। এটি হবে এমন একটি জোট যা ক্ষমতা দখলের জন্য নয়, বরং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করবে।
তিনি বলেন, আমির দোগারকে জাতীয় পরিষদে (এনএ) দলের চিফ হুইপ হিসেবে পুনরায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ইমরান যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অন্তঃদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্দেশনাও জারি করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, যেহেতু তিনি এর জন্য দায়বদ্ধ, তাই তিনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই কাজটি শেষ করার চেষ্টা করবেন।
এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি জেআই, উচ্ছ্বসিত সাড়া এমডব্লিউএম'র
এদিকে, জেআইয়ের কেন্দ্রীয় তথ্য সচিব কায়সার শরিফ জিও নিউজকে বলেছেন,নির্বাচনের পরপরই দুই দল আলোচনা করেছে এবং জেআই তার স্বতন্ত্র প্রার্থীদের 'সুরক্ষা দেওয়া'র শর্তে পিটিআইকে নিঃশর্ত 'সমর্থন' জানিয়েছে।
জেআই প্রতিনিধি বলেন, আজ ইসলামাবাদে এক বৈঠকে খাইবার পাখতুনখোয়ায় জোট সরকার গঠনের জন্য পিটিআইয়ের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
জেআই আলোচনা করে পিটিআইকে চূড়ান্ত জবাব দেবে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে, এমডব্লিউএম প্রধান আল্লামা রাজা নাসির আব্বাস পিটিআইয়ের সঙ্গে তার দলের জোটকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন,২০২২ সালের এপ্রিলে 'সরকার পরিবর্তনের' পর থেকে তার দল ইমরানের পাশে ছিল এবং 'তাদের রক্তের শেষ ফোঁটা পর্যন্ত' তা অব্যাহত থাকবে।
আল্লামা আব্বাস জিও নিউজকে বলেন, 'আমরা পাকিস্তানে ঐক্য চাই এবং এই দেশের অগ্রগতি দেখতে চাই।'
আব্বাস বলেন, তার দলের কোনো লোভ নেই বা পিটিআইয়ের কাছে কোনো দাবি নেই। 'আমাদের নীতিগত অবস্থান, যা ঘটেছে (পিটিআইয়ের সঙ্গে) তা ভুল ছিল।'
এমডব্লিউএম প্রধান পিটিআইকে দমন করার জন্য সম্প্রতি আইন প্রণয়ন করা হয়েছে বলে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে একটি এজেন্ডার মাধ্যমে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে সুবিধা দেওয়া উচিত নয়।
তিনি বলেন, 'আমরা ইমরানকে বলেছি, রক্তের শেষ বিন্দু পর্যন্ত আমরা তার সঙ্গে আছি।'
তিনি আলাদাভাবে এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে বলেন, এমডব্লিউএম ইমরানের নিজের দল এবং 'তিনি এই দলের বিষয়ে যা চান তা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, আমরা তা নিঃশর্তভাবে ও স্বেচ্ছায় গ্রহণ করব।'
এর আগে মঙ্গলবার কারাবন্দি ইমরান খান নিজেও পিএমএল–এন ও পিপিপি'র সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছিলেন।
নির্বাচনের পর তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) অবস্থান নিয়ে এটা ইমরান খানের প্রথম প্রকাশ্য মন্তব্য।
গত বছরের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে আদিয়ালা কারাগারে আছেন ইমরান। জেল থেকে দেওয়া বক্তব্যে তিনি পিএমএল-এন এবং দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) উভয়কেই দুর্নীতির জন্য অভিযুক্ত করেছেন।
রাজধানী ইসলামাবাদের বাইরের এই কারাগারে পদ্ধতিগত শুনানি কভার করতে যাওয়া কয়েকজন সাংবাদিককে তিনি বলেন, 'আমরা পিএমএল-এন বা পিপিপির সঙ্গে বসব না।'
খান বলেন, 'নির্বাচনি কারচুপির বিষয়টিকে আমরা পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানাব এবং আমরা পরে জোটের বিষয়টি বিবেচনা করব।'
২০২২ সালে অনাস্থা ভোটে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। এরপর তিনি তার বিরুদ্ধে কলকাঠি নাড়া সামরিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন প্রচারণা চালান।
ইমরানের বিরুদ্ধে আদালতে কয়েক ডজন মামলা করা হয়েছে, বহু মামলায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং আরও নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তিনি দাবি করেছেন, তার ক্ষমতায় ফেরা ঠেকাতে পরিকল্পিতভাবে এসব করা হয়েছে।
পিটিআইয়ের জ্যেষ্ঠ নেতাদের ব্যাপক গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং দলটিকে ভোটে না দাঁড়াতে দেওয়ার সব চেষ্টা করো হয়েছে।
বিশ্লেষকরা একমত, এসব পরিকল্পনা সামরিক এস্টাবলিশমেন্ট থেকেই করা হয়েছিল।
দেশটির নির্বাচন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে দলটিকে বাতিল ঘোষণা করেছে।
তাদের নির্বাচনী ব্যাট প্রতীক কেড়ে নেওয়া হয় এবং নির্বাচনে ইমরানের দলের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধ্য হন।
এরপরও সদ্য সমাপ্ত সাধারণ নির্বাচনে ইমরান খানের অনুগত স্বতন্ত্ররা পাকিস্তানের পার্লামেন্টের ২৬৬টি নির্বাচিত আসনের মধ্যে প্রায় ৯০টি আসন পেয়েছে।
নির্বাচনের দিন কর্তৃপক্ষ দেশের মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়ার পর এবং ভোট গণনায় ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগার পর ভোট কারচুপি ও ফলাফল পাল্টে দেওয়ার ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে।
পিটিআই জোর দিয়ে বলেছে, কারচুপি না হলে তারা আরও অনেক বেশি আসন পেত।
এরই মধ্যে পিএমএল-এন ও পি একসঙ্গে সরকার গঠনের আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
এর আগে, দুই বছর আগে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে দলগুলো একটি বৃহত্তর জোট গঠন করেছিল।
পিএমএল-এন সভাপতি শাহবাজ শরিফ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, 'সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর, দেশবাসীকে তা জানানো হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'জাতীয় স্বার্থে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।'
ঘোষিত ফল অনুযায়ী, পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে ভোট হওয়া ২৬৫ আসনের মধ্যে ইমরান–সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন ৯২ আসন। এরপরই পিএমএল–এন ও পিপিপি পেয়েছে যথাক্রমে ৭৫ ও ৫৪ আসন।
কোনো দলই জাতীয় পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় সরকার গড়তে জোট গঠনই এখন একমাত্র পথ।
তবে জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে মাত্র একটি আসনে জয় পাওয়া এমডব্লিউএমের সঙ্গে জোট করলে তা পিটিআইয়ের সরকার গঠনের জন্য যথেষ্ট হবে না।
সরকার গঠন করতে ন্যূনতম ১৩৪ আসন দরকার। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পিএমএল–এন ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বাধীন পিপিপি জোট করলে তারাই সরকার গঠন করতে পারবে।