যেভাবে ধ্বংসস্তূপকে ক্রীড়াঙ্গনে পরিণত করল গাজার তরুণ পার্কোররা 

আন্তর্জাতিক

আলজাজিরা
09 January, 2024, 12:55 pm
Last modified: 09 January, 2024, 01:24 pm
নাজেম বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে আমরা বিশ্বকে এই বার্তাই দিতে চাই যে আমাদের বেঁচে থাকার ইচ্ছাটা আগের চেয়ে আরো বেশি প্রবল। সেই সাথে ইসরায়েলি বর্বরতার চিত্রও এর মধ্য দিয়ে বিশ্বকে দেখাতে চাই।’

তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা। আর সেই ধ্বংসস্তূপের ওপর দিয়েই নানা ধরনের শারীরিক কসরত দেখাচ্ছিলেন দুই যুবক। সেই কসরত দেখে উচ্ছ্বাস যেন থামছিলই না একদল শিশুর। শুধু শিশুরাই নয়, তাদের এই কসরত দেখে মুগ্ধ পথচারীরাও।

এই দুই যুবক স্পাইডার্স পার্কোর গ্রুপের সদস্য। ইসরায়েলি হামলায় তারা নিজেদের ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। নিহত হয়েছে তাদের দলের পাঁচ সদস্য। তবে বেঁচে থাকা এই দুই যুবকের যেন কোনো ভয় নেই। গাজার এই ধ্বংসস্তূপকেই তারা নিজেদের প্রিয় খেলার অঙ্গনে পরিণত করেছেন। এর মধ্য দিয়ে স্বজন হারানোর বেদনা ভুলে থাকা কিংবা স্বাচ্ছ্যন্দ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছেন তারা।

এই দুই যুবকের একজন নাজেম আম্মার। তিনি আলজাজিরাকে বলছিলেন, 'আমরা বহু বছর ধরে এই খেলাটি অনুশীলন করে আসছি।'

তিনি জানান, তারা সাধারণত উন্মুক্ত জায়গায় সমান মাটিতে ও বালুর টিলায় প্রশিক্ষণ করে থাকেন। তবে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আম্মার ও তার বন্ধুরা ধ্বংসস্তূপের ওপর অনুশীলন শুরু করেন।

নাজেম বলেন, 'এর মধ্য দিয়ে আমরা বিশ্বকে এই বার্তাই দিতে চাই যে আমাদের বেঁচে থাকার ইচ্ছাটা আগের চেয়ে আরো বেশি প্রবল। সেই সাথে ইসরায়েলি বর্বরতার চিত্রও এর মধ্য দিয়ে বিশ্বকে দেখাতে চাই।'

ধ্বংসস্তূপের মধ্য পথের সন্ধান

ওয়ার্ল্ড ফ্রি রানিং ও পার্কোর ফেডারেশনের মতে, পার্কোর এমন এক ধরনের খেলা যেখানে খেলোয়াড়দের পথের নানা বাধা পেরিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়।

গাজার রাফাহ শহরের নির্ভীক এই দুই খেলোয়াড় এসব ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে কখনো বা দৌড়াচ্ছেন, কখনো বা লাফ দিচ্ছেন, কখনো আবার ধ্বংসস্তূপ বেয়ে উপরে উঠছেন।

গত কয়েক দশকে পার্কোর গাজায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তরুণ খেলোয়াড়রা ধ্বংসস্তূপকে তাদের ক্রীড়াঙ্গনে পরিণত করায় এই খেলাটি বিশেষ প্রতীক হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে।

ভিডিও: আলজাজিরা থেকে নেওয়া।

গাজায় ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় স্পাইডার পার্কোর। গ্রুপটির সদস্যরা ইউটিউবে টিউটোরিয়াল দেখে দেখে ধারাবাহিক অনুশীলনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা অর্জন করছেন।

গাজায় ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গ্রুপের সদস্যরা আন্তর্জাতিকভাবে এখনো তাদের দক্ষতা প্রদর্শনের সুযোগ পাননি।

মোহাম্মদ ফওজি বলেন, 'এটি বিশ্বকে জানানোর একটি উপায় যে কিছুই আমাদের থামাতে পারে না কিংবা আমাদের স্বপ্ন, আমাদের খেলা এবং আমাদের পরিচয় ছেড়ে দিতে বাধ্য করতে পারে না।'

স্পাইডার পার্কোরের আশা, একদিন তারা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিত্ব করবেন। আর তাদের এই স্বপ্ন ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব মুক্তির সাথে অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.