১ বছর আগেই হামাসের হামলার পরিকল্পনার কথা জানত ইসরায়েল: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস
হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার পরিকল্পনার কথা এক বছরেরও বেশি আগেই জানতে পেরেছিল ইসরায়েলি সশস্ত্রবাহিনী ও গোয়েন্দাসংস্থাগুলো। তবে তা সত্ত্বেও হামলার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তর থেকেই এ হামলার বিষয়ে বারবার সতর্ক করা হয়। কিন্তু এমন কোনো হামলাকে উচ্চাকাঙ্ক্ষা, কঠিন তথা অসম্ভব হিসেবে বিবেচনা করেছিল ইসরায়েলি সশস্ত্রবাহিনী ও গোয়েন্দারা। এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।
হামাসের আক্রমণের ৪০ পৃষ্ঠার অনুবাদকৃত একটি পরিকল্পনাও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের হাতে এসেছিল। ইসরায়েলের দেওয়া 'জেরিকো ওয়াল' কোডনেমের এ পরিকল্পনায় ৭ অক্টোবরের হামলার প্রতিটি ধাপের রূপরেখা তৈরি করেছিল হামাস।
হামাসের ওই হামলায় ১,২০০ মানুষ নিহত হন। এছাড়া হামাস অনেককে জিম্মিও করে।
আজ ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইসরায়েলের পালটা হামলায় ১৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের প্রায় অর্ধেক নারী ও শিশু। এছাড়া ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও কয়েক হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
হামাস এর আক্রমণ পরিকল্পনা খুব সূক্ষ্ম ও যথাযথভাবে তৈরি করেছিল। আর আক্রমণের সময় ওই পরিকল্পনাই সুনির্দিষ্টভাবে অনুসরণ করেছিল।
ওই পরিকল্পনায় ইসরায়েলি সশস্ত্রবাহিনীর অবস্থান ও আকার, যোগাযোগকেন্দ্রের বিস্তারিত এবং অন্যান্য সংবেদনশীল তথ্য উল্লেখ ছিল। হামাস কীভাবে এসব গোয়েন্দাতথ্য সংগ্রহ করল এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তাব্যবস্থার অভ্যন্তর থেকেই এগুলো ফাঁস করা হয়েছিল কি না তা নিয়ে বর্তমানে প্রশ্ন উঠেছে।
ইসরায়েলি সশস্ত্র ও গোয়েন্দা বাহিনীগুলোর শীর্ষ নেতাদের কাছেও পৌঁছেছিল হামাসের এ পরিকল্পনা। কিন্তু ইসরায়েলি নথিপত্র ও কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে, এই মাত্রা ও লক্ষ্যের কোনো হামলা বাস্তবায়ন করা হামাসের সক্ষমতার বাইরে বলে বিশেষজ্ঞরা রায় দিয়েছিলেন।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বা অন্য শীর্ষ নেতারা এ পরিকল্পনা রূপরেখা দেখেছিলেন কি না তা স্পষ্ট নয়।
ইসরায়েলের সঙ্গে গাজার সীমান্তে নিরাপত্তার দায়িত্ব ইসরায়েলি সশস্ত্রবাহিনীর গাজা ডিভিশন-এর। গত বছর হামাসের পরিকল্পনা হাতে আসার অল্প কিছুদিন পরেই এ ডিভিশন বলেছিল, হামাসের উদ্দেশ্য অস্পষ্ট।
এরপর হামলার তিনমাস আগে জুলাইয়ে ইসরায়েল সিগন্যালস ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি ইউনিট ৮২০০-এর একজন জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক সতর্ক করে দিয়ে জানান, হামাস তাদের হামলার রূপরেখার মতো দিনব্যাপী এক ঘামঝরানো প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেছে।
তবে দ্য টাইমস-এর দেখা এনক্রিপটেড ইমেইলের তথ্য অনুসারে গাজা ডিভিশন-এর একজন কর্নেল ওই বিশ্লেষকের উদ্বেগকে উড়িয়ে দেন।
তবে এখন ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ স্বীকার করছে, যদি সশস্ত্রবাহিনী আগের সতর্কতাগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে নিত এবং দক্ষিণ ইসরায়েলে নিরাপত্তা শক্তিশালী করত, তাহলে ইসরায়েল হামলা ঠেকাতে এমনকি প্রতিরোধও করতে পারত।
কিন্তু তার বদলে হামলার সময় ইসরায়েলি বাহিনী অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল এবং ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস দিনে পরিণত হলো।