ইসরায়েল থেকে কোন ফিলিস্তিনি বন্দীরা মুক্তি পেতে যাচ্ছে?
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের প্রায় দেড় মাস অতিবাহিত হওয়ার পর দুই পক্ষ অবশেষে চুক্তিতে পৌঁছেছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ (শুক্রবার) স্থানীয় সময় সকাল ৭টা (বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টা) থেকে গাজায় চারদিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে চুক্তির অধীনে ইসরায়েল ও হামাস বেশ কয়েকজন জিম্মিদেরও মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে। সেক্ষেত্রে ইসরায়েলি জেলে বন্দী থাকা প্রায় ১৫০ জন ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেওয়া হবে। আর অন্যদিকে গাজায় থাকা ৫০ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) ইসরায়েলের থাকা ফিলিস্তিনি কিছু বন্দীদের প্রথম পর্যায়ে মুক্তি কথা ছিল। মোট চার দিনে চার পর্যায়ে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু দেশটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল জানায়, আজ (শুক্রবার) এর আগে কোনো জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে না।
ফিলিস্তিনি যেসব বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হবে, তাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। গত বুধবার হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চুক্তিটির অধীনে মানবিক বিপর্যয়ে ধুঁকতে থাকা গাজার সমস্ত অংশে ত্রাণ, চিকিৎসা সামগ্রী এবং জ্বালানী বহনকারী শত শত ট্রাক বাধাহীনভাবে প্রবেশের কথাও রয়েছে।
মিসর জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির এই সময়ে প্রতিদিন এক লাখ ৩০ হাজার লিটার ডিজেল ও চার ট্রাক গ্যাস এবং ২০০টি ট্রাক ত্রাণসামগ্রী নিয়ে গাজায় প্রবেশ করবে।
এদিকে ইসরায়েল সরকারের পক্ষ থেকে গত বুধবার মুক্তির জন্য সম্ভাব্য ৩০০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীর তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে কমবেশি সকল বয়সী ফিলিস্তিনি নাগরিকই রয়েছেন।
বন্দী থাকা ফিলিস্তিনি নাগরিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোও বেশ ভিন্নরকম। কাউকে দিনের পর দিন আটকে রাখা হয়েছে শুধু পাথর নিক্ষেপের জন্য। আবার কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে 'আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিনষ্ট' করার অভিযোগে।
তালিকায় এমন অনেকের নামই রয়েছে যাদের বিরুদ্ধে হামাসকে সমর্থন করা, অবৈধ অস্ত্র বহন কিংবা হত্যা চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। তবে তালিকায় থাকা অধিকাংশরই কোনো সংগঠনের সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্টটা নেই।
সিএনএন-এর তথ্যমতে, মুক্তির অপেক্ষায় থাকা বন্দীদের বেশিরভাগই ছেলে শিশু, যাদের বয়স ১৮-এর নিচে। আবার এই তালিকায় রয়েছে ৩৩ জন নারীও।
বর্তমানে প্রায় ৮,৩০০ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের জেলে বন্দী রয়েছেন। এমনটাই জানিয়েছেন প্যালেস্টাইন কমিশন ফর ডিটেইনিস এন্ড এক্স-প্রিজনার্স অ্যাফেয়ার্সের প্রধান কাদেরা ফারেস।
এদের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার ফিলিস্তিনিকে ইসরায়েলের 'এডমিনিস্ট্রেটিভ ডিটেনশন' এ আটকে রাখা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে নেই কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ। এমনকি তাদের ক্ষেত্রে কোনো আইনি প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে না।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালায় হামাস। এতে ১২০০ জন নিহত হয়। জবাবে হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনীও। এ হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
এরপর থেকে দখলকৃত পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমের ২,০৭০ জন ফিলিস্তিনিকে গ্রেফতার করেছে ইসরায়েল। অন্যদিকে গাজায় বর্তমানে জিম্মি রয়েছে ২৩৬ জন; যাদের মধ্যে ইসরায়েলি ছাড়াও রয়েছে ২৬ জন বিদেশি নাগরিক।
হামাসের কাছে থাকা জিম্মিদের মধ্যে মাত্র চারজন গত দেড় মাসে মুক্তি পেয়েছে। এদের মধ্যে দুই জন মার্কিন নারী আর দুই জন ইসরায়েলি নারী। এছাড়াও হামাসের কাছে আটক থাকা এক ইসরায়েলি সেনাকে উদ্ধারের দাবি করেছে আইডিএফ।