হামাস কীভাবে লড়াই করে
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2023/11/02/393998523_321648760514120_5154481818216797482_n.jpg)
এক দশকের বেশি সময় ধরে দাঁতে দাঁত চেপে তিক্ত এক স্বীকারোক্তি দিয়ে যেতে হয়েছে ইসরায়েলের সামরিক নেতৃত্বকে; আর তা হলো — হামাস সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে জানে।
গাজার প্রতিরোধ যোদ্ধাদের একজন প্রশিক্ষক এবং যুদ্ধাভিজ্ঞ মাহমুদ আজরামির মূলমন্ত্র একটাই: 'সম্পূর্ণ প্রস্তুত হওয়ার আগপর্যন্ত নিজেকে সম্বরণ করো।'
এই শিক্ষাকে তারা কতটা আত্মস্থ করেছে তার উদাহরণ আছে অজস্র।
২০১৮ সালে হাজার হাজার গাজাবাসী ইসরায়েলের সাথে সীমান্ত বেড়ার কাছে 'গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন' কর্মসূচির আওতায় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করে। কিন্তু, ইসরায়েলি সেনারা নির্বিচারে গুলি চালায় তাদের ওপর। ওই সময়ে ইসরায়েলি সেনাদের অনেককেই স্নাইপার রাইফেল দিয়ে নিশানায় আনতে পেরেছিল হামাস যোদ্ধারা, তবু তারা গুলি চালায়নি। পরে এই ঘটনার ভিডিও প্রকাশ করে হামাস।
ইসরায়েলি সেনাদের বহনকারী একটি বাস করনেট ট্যাংক বিধ্বংসী মিসাইল দিয়ে ধবংস করেছিল হামাস। এই ঘটনারও ভিডিও প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, আগে হামলা চালানোর সুযোগ থাকার পরেও অপেক্ষা করেছে, কিন্তু যখনই বাস থেকে সেনারা নিচে নামে এবং যাত্রাবিরতির সময় বাসচালক সিগারেট ধরায়, তখনই মিসাইল ছোঁড়ে হামাস যোদ্ধারা।
হামাসের এই কৌশলকে ইসরায়েল মনে করেছিল তাদের সংযম, অর্থাৎ তারা পাল্টা-পরিণতির ভয়েই এমনটা করছে বলে ধরে নেয়। এতে তাদের আত্মতুষ্টির সুযোগই ছিল। হামাসও তাই চাচ্ছিল।
কিন্তু, মাহমুদ আজরামির মতে, নিজেদের পছন্দমতো সময়ে ইসরায়েলকে যুদ্ধে জড়ানোর জন্যেই কেবল অপেক্ষা করছিল হামাস।
২০২১ সালে ইসরায়েলের সাথে ১১ দিনের এক যুদ্ধ হয় হামাসের। এ সময় ফিলিস্তিনিরা রকেট নিক্ষেপ করে, অন্যদিকে বিমান হামলা করে ইসরায়েল। তবে কোন স্থল অভিযান পরিচালনা করেনি তেল আবিব। এই যুদ্ধে বিজয় ঘোষণা করেছিল হামাস। বিজয় ঘোষণার পরে নিজের বাসভবনের সামনে উপস্থিত ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে আজরামি শপথ করেন, 'এই জানোয়ারদের আমার কাছে নিয়ে এসো, তারপর সবাই মিলে তাদের হত্যা করব।'
৭ অক্টোবর আসে সেই ক্ষণ, এদিনই পাল্টে যায় সব সমীকরণ। চিরকাল ফিলিস্তিনিরা দখলদারি, অত্যাচারের মুখে খুব বেশি হলে অতর্কিতে গুলি বা রকেট ছুঁড়বে, এমনটাই ধরে নিয়েছিল ইসরায়েল। কখনো ভাবেনি তারা সফল আক্রমণ অভিযান চালাবে ইসরায়েলের সীমানার ভেতর। আর তাতে ১,৪০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলিকে প্রাণ দিতে হবে। জিম্মি হিসেবে ২৩০ জনকে বন্দি করে নিয়ে যায় হামাস ও গাজার অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠী। এই ঘটনা ইসরায়েলের ভিত্তি নাড়িয়ে দেয়। কারণ, ব্রিটিশ ম্যান্ডেটে ইসরায়েল সৃষ্টির পর একদিনে কখনোই এত বেশি ইসরায়েলি নিহত হয়নি।
ওই আক্রমণের প্রতিশোধ নিতেই গাজায় নজিরবিহীন ধবংসযজ্ঞ শুরু করে ইসরায়েল। শুরু হয় গাজায় তাদের এযাবৎকালের সর্ববৃহৎ অভিযান। বিমান থেকে বোমা ফেলে ও কামানের গোলা দেগে গাজার বিশাল এলাকা ধবংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানান, এ পর্যন্ত আট হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
বিরামহীন গোলাবর্ষণ অব্যাহত রেখেই ইসরায়েল গাজায় তাদের প্রথম স্থল অভিযান শুরু করেছে। জায়নবাদি সেনাবাহিনীর আছে প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব, বিপুল রণসম্ভার, পশ্চিমা মিত্রদের থেকে মুক্তহস্তের সামরিক সহায়তা। এসব কিছু নিয়েই প্রায় এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো গাজায় প্রবেশ করেছে ইসরায়েলি সেনারা। গত শুক্রবার রাতেই অগ্রবর্তী ইসরায়েলি বাহিনী মার্কাভা ট্যাংক নিয়ে উত্তর গাজায় প্রবেশ করে।
ইসরায়েলি বাহিনীর সামনে এরপর আল-শাতি ও জাবালিয়া শরণার্থী শিবির। সেখান থেকে কিছু মিনিটের দূরত্বে হামাসের রাজনৈতিক ও সামরিক গতিবিধির প্রাণকেন্দ্র গাজা সিটি। কিন্তু, প্রচণ্ড শক্তিশালী হলেও হামাসের মতো শত্রুকে সমীহ করতেই হচ্ছে ইসরায়েলকে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চিন্তক সংস্থা ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসির জ্যেষ্ঠ ফেলো ব্লুমেনস্টেইন-রজেনব্লুম বলেন, 'আইডিএফ (ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী) যখন গাজায় ঢুকছে, তাদের এটা মাথায় রাখতেই হচ্ছে যে, হামাস নিজের ঘরে লড়াইয়ের সুবিধা পাচ্ছে। তারা প্রস্তুত আছে।'
তাছাড়া, খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, গত আগস্টে মাসেই ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাবেক একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ইতজাক ব্রিক সতর্ক করে বলেন, ইসরায়েল 'যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নয়'। সবশেষ ২০১৪ সালের যুদ্ধে গাজার সীমানার ভেতর ইসরায়েলি সেনাদের মোতায়েন করা হয়েছিল। তারপর থেকে আইডিএফ সেনারা বড় কোন স্থলযুদ্ধে অংশ নেয়নি। তার ওপর বর্তমানে ইরানের হুমকি নিয়েই বেশি চিন্তাগ্রস্ত ইসরায়েলের জ্যেষ্ঠ সামরিক নেতৃত্ব।
২০০৮-০৯ সালে প্রথম ইসরায়েলি সেনাদের একটি স্থল আগ্রাসন মোকাবিলা করে হামাস। তারপর থেকে তারা সামরিকভাবে আরও শক্তিশালী হয়েছে বলে মনে করেন সামরিক কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকরা।
তখন হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেডের ছিল ১৬ হাজার যোদ্ধা। এদের মধ্যে ২ হাজার যোদ্ধা ছিল সম্মুখ লড়াইয়ের জন্য। আইডিএফ-এর ধারণা, বর্তমানে এই ব্রিগেডে আছে ৪০ হাজার সুদক্ষ যোদ্ধা, ড্রোন অস্ত্র এবং ৩০ হাজার রকেটের ভাণ্ডার।
এর মধ্যে গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে সাড়ে ৮ হাজার রকেট নিক্ষেপ করেছে হামাস। সেগুলো প্রতিহত করতে গিয়ে ইসরায়েলের আয়রন ডোম আকাশপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ইন্টারসেপ্টর মিসাইলের মজুত শেষ হওয়ার উপক্রম হয়। তখন জরুরিভিত্তিতে মিসাইলের চালান পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র।
লন্ডন-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ-এর আঞ্চলিক নিরাপত্তা অধ্যয়ন শাখার পরিচালক এমিলি হোকায়েম বলেন, 'হামাস সেরাদের থেকে প্রশিক্ষণ পেয়েছে।' এ কথার মাধ্যমে তিনি ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী ও লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর প্রতি ইঙ্গিত দেন।
হোকায়েম বলেন, 'ইসরায়েলের সাথে বেশ কয়েকবার করা যুদ্ধ থেকেও এই সংগঠনটি অনেক কিছু শিখেছে। হামাস গাজার ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানে, এবং এই ভূমি রক্ষায় তারা উদ্ভাবনী কৌশল কাজে লাগিয়ে মারাত্মকভাবে লড়বে।'
গত ৭ অক্টোবরের হামলার ঘটনাতেই নিজ দক্ষতার পরিচয় দেন হামাসের যোদ্ধারা। এদিন প্রায় দেড় হাজার যোদ্ধা জল, স্থল ও আকাশপথে ইসরায়েলে প্রবেশ করেন। এ ধরনের আক্রমণ অভিযানে বাহিনীর মধ্যে যে সমন্বয় থাকা দরকার, সেটি যে তাদের আছে — সেদিনই প্রমাণ হয়েছে। অপরদিকে, ইসরায়েলকে অন্যদিকে ব্যস্ত রাখতে একসাথে তিন হাজারের বেশি রকেট নিক্ষেপ করে হামাস। এতগুলো রকেট ঠেকাতে আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিমশিম খায়, ফলে অনেক রকেটই ইসরায়েলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।
গাজায় গভীর করে বোমা হামলা থেকে সুরক্ষিত সুড়ঙ্গ নির্মাণ করেছে হামাস। সেখানে কয়েক মাস-ব্যাপী ইসরায়েলি অবরোধ মোকাবিলার মতো রসদ মজুত করেছে।
গেল সপ্তাহে হামাসের রাজনৈতিক শাখার নির্বাসনে থাকা জ্যেষ্ঠ এক নেতা আলি বারাকেহ ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছিলেন, '(৭ অক্টোবর) আক্রমণ চালানোর অনেক আগেই আমরা ইসরায়েলি স্থল আগ্রাসন মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়েছি। শত্রুকে চমকে দেওয়ার কিছু ব্যবস্থা আমাদের রয়েছে। ইসরায়েলের মতো আকাশযুদ্ধের সক্ষমতা না থাকলেও, অনায়সেই নগরযুদ্ধ লড়তে সক্ষম আমরা — যার কোনো তুলনা পাবেন না।'
১৯৯২ সালে হামাসের বেশকিছু নেতাসহ ৪০০ ফিলিস্তিনিকে লেবাননে বহিস্কার করে ইসরায়েল। হিজবুল্লাহর থেকে হামাসের শিক্ষা নেওয়ার সেটাই ছিল শুরু।
সুন্নি সংগঠন হামাসের সাথে সহাবস্থান তৈরির সুর্বণ সুযোগ হিসেবে এই ঘটনাকে দেখেছিল শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ হিজবুল্লাহ।
এর আগে আরেকটি সুন্নি ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদকে প্রশিক্ষণ দেয় হিজবুল্লাহ। এবারের গাজা যুদ্ধে হামাসের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছে এমন একটি সংগঠন এই ইসলামিক জিহাদ।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলছেন, হিজবুল্লাহ তাদের রকেট প্রযুক্তি দিয়েছে হামাসকে, দিয়েছে প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে ধ্যান-ধারণা।
১৯৯২ সালের পর থেকেই লেবাননের রাজধানী বৈরুতে হামাসের প্রধান নেতারা অবস্থান করেছেন, এমনকি লেবাননে হামাসের সামরিক উপস্থিতিও আছে। ২০২১ সালের শেষদিকে একটি অস্ত্রাগারে বিস্ফোরণ ঘটে, তখন সন্দেহ করা হয়েছিল এটি ছিল হামাসের অস্ত্র গুদাম।
সময়ের পরিক্রমায় হামাস তার অস্ত্রশস্ত্রের মান আরও উন্নত করেছে, দরকারি উপকরণ চোরাচালানের মাধ্যমে এনে ডাম্ব রকেটকে গাইডেন প্রিসিশান ক্ষেপণাস্ত্রে রূপ দিয়েছে। এমনকি তারা এখন পানির তলায় চলতে সক্ষম ড্রোন নির্মাণ করছে।
হামাস জানিয়েছে, তারা এখন স্থানীয়ভাবে মুতাবার-১ নামক কাঁধ থেকে নিক্ষেপযোগ্য বিমান-বিধ্বংসী মিসাইল তৈরি করছে। তাদের দাবি, এটি দিয়ে অপেক্ষাকৃত নিচু দিয়ে ওড়া ইসরায়েলি ড্রোন বা হেলিকপ্টার ভূপাতিত করা সম্ভব। আল-ইয়াসিন নামক ট্যাংক-বিধ্বংসী রকেটও তৈরি করেছে হামাস; তাদের দাবি, এটি ইসরায়েলি মার্কাভা ট্যাংকের এক্সপ্লোসিভ রিয়্যাক্টিভ আর্মার ভেদ করতে সক্ষম।
একইসময়ে, ইসরায়েলের প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব ও বিমানশক্তির একচ্ছত্র আধিপত্য মোকাবিলায় নিজস্ব নগর-যুদ্ধের কৌশল রপ্ত করেছে হামাস, প্রতিপক্ষকে শহরে ঢুকে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে অংশ নিতে বাধ্য করে এ কৌশল।
হামাসের যুদ্ধ-কৌশলকে ভিয়েতনামের মুক্তিসংগ্রামের গেরিলা সংগঠনের সাথে তুলনা করে হোকায়েম বলেন, 'হামাসকে আইএসআইএস নয়, বরং ভিয়েতকং বলা যায়।' প্রসঙ্গত, পশ্চিমা বিশ্ব ও ইসরায়েল হামাসকে চরমপন্থী ইসলামিক জঙ্গি সংগঠন আইএসআইএসেরই আরেক রূপ বলে দাবি করে।
ভিয়েতকং যেমনটা ভিয়েতনামে করেছিল, তেমনিভাবেই গাজাকে ব্যারিকেড ও গুপ্ত সুড়ঙ্গ বেষ্টিত এক দুর্গে পরিণত করেছে হামাস। এর মধ্যে রয়েছে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গের জাল, যেখানে ইসরায়েলি বিমান হামলার সময় আশ্রয় নিতে পারে হামাস যোদ্ধারা এবং ইসরায়েলের স্থল সেনাদের পেছন গিয়ে হামলা চালানোর সুযোগ পায়।
ইসরায়েলি সেনারা গাজার যত অভ্যন্তরে প্রবেশ করবে, ততই মাটির ওপরে তাদের ওপর চোরাগুপ্তা হামলা বাড়াবে হামাস। দ্রুত আক্রমণ এবং লুকানো বোমার আঘাতে ইসরায়েলি সেনাদের আতঙ্ককিত, বিভ্রান্ত করবে, তাদের হতাহত বাড়িয়ে মনোবলে চিড় ধরাতে চাইবে। কারণ, ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর অধিকাংশই রিজার্ভিস্ট' – অর্থাৎ সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বেসামরিক নাগরিক, যারা নির্দিষ্ট সময় বাধ্যতামূলকভাবে সেনা সার্ভিসে থাকার পর আবারো বেসামরিক জীবনে ফিরে যান। তবে যেকোন জরুরি অবস্থায় তাদের তলব করা হয়। এই নগর-যুদ্ধের নির্মম বাস্তবতা, শক্ত প্রতিরোধ এই সেনাদের দিশেহারা করতে পারে।
লন্ডনভিত্তিক চিন্তক সংস্থা চ্যাথাম হাউজের সহযোগী ফেলো বিলাল ওয়াই সাব বলেন, 'হামাসের কোনো ছকবাঁধা ডকট্রিন (রণকৌশলের) নেই। যতবেশি সম্ভব ইসরায়েলিদের ক্ষতি করা ও তাদের হতাহত বাড়ানোর দিকেই তাদের মনোযোগ। এজন্য তারা হাইব্রিড ও প্রচলিত পদ্ধতি সবই কাজে লাগায়।'
তিনি বলেন, 'তাদের সামরিক কার্যক্রমও উচ্চ মাত্রায় বিকেন্দ্রীয়ভূত। অর্থাৎ, ছোট ছোট সেল বা দলে ভাগ করা আছে তাদের সামরিক সংগঠন, যেখানে যোদ্ধাদের প্রতিটি কোম্পানি পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারে।'
হামাসের যুদ্ধ-কৌশলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ তাদের প্রোপাগান্ডা কার্যক্রম। আগামী দিনগুলোতে ভূপাতিত ইসরায়েলি হেলিকপ্টার, ধবংস হওয়া ট্যাংক বা বন্দি সেনাদের ভিডিও প্রকাশ করে তারা বিজয়ের চিত্র ফুটিয়ে তুলতে পারে বলে জানান সামরিক বিশ্লেষকরা।
একইসময়ে, লুকিয়ে রাখা লঞ্চার থেকে ইসরায়েলের সীমানার অনেক ভেতরে তারা রকেট হামলা চালাবে, এতে ইসরায়েলি জনসাধারণ অনুধাবন করবে, তারাও লড়াইয়ের আওতায় আছে। এতে হামাসের সমর্থনের ভিত্তি আরও মজবুত হবে।
বিশ্বের বিভিন্ন গেরিলা গোষ্ঠীর অতীত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজ সদস্যদের মধ্যে নিরাপদ যোগাযোগকে গুরুত্ব দেয় হামাস। হিজবুল্লাহর আছে নিজস্ব ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক। হামাসের সেই সুবিধা না থাকায়, তারা তারের মাধ্যমে সংযুক্ত টেলিফোন ব্যবহার করে। একইসঙ্গে এড়িয়ে চলে হ্যাকযোগ্য এবং ইলেকট্রনিক সিগনেচ্যার নির্গতকারী ডিভাইস।
'ভুল লাইনগুলোয় আড়ি পাতার ফলেই' গত ৭ অক্টোবরের হামলা ঠেকাতে পারেনি ইসরায়েল। অর্থাৎ হামাস সদস্যরা ইসরায়েলকে ধোঁকা দিতে হ্যাকযোগ্য ডিভাইসে বিভ্রান্তিকর তথ্য বিনিময় করে। অন্যদিকে, গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পরিকল্পনার তথ্য শেয়ার করা হয় 'এনালগ' ব্যবস্থায়, অথবা ইরান থেকে আনা এমন কোন ইনক্রিপ্টেড ডিভাইসে, যা ইসরায়েলের কাছে অজ্ঞাত।
হামাসের প্রযুক্তিগতভাবে ধোঁকা দেওয়ার এই সক্ষমতাই আগ্রাসী ইসরায়েলি স্থল সেনাদের জন্য আগাম এক সতর্কবার্তা।
'তারা আর কী লুকিয়ে রাখতে পারে?' জানতে চাইলে একজন ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা বলেন, 'আমরাও নিজদেরকে এই প্রশ্নই করছি।'