ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে রুশ কূটনীতিকের খসড়া প্রস্তাব প্রচার
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2023/10/14/capture_0.png)
জাতিসংঘে মস্কোর পক্ষ থেকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ বন্ধে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে সংস্থাটিতে নিযুক্ত রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি খসড়া প্রস্তাব প্রচার করছে।
একইসাথে নেবেনজিয়া মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাত কমিয়ে আনার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি জানান, খসড়া প্রস্তাবটির বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যভুক্ত বাকি ১৪ টি দেশের পক্ষ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গিয়েছে।
তবে প্রস্তাবে ইসরায়েলের সাথে মূল লড়াই চলতে থাকা স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। এই বিষয়ে জানতে চাইলে এই কূটনৈতিক জানান, প্রস্তাবটি একটি মানবিক সমাধানের উদ্দেশে করা হয়েছে।
নেবেনজিয়া বলেন, "রাশিয়া স্পষ্টভাবে ইসরায়েল এবং গাজার বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে যে কোনো সহিংসতার নিন্দা করে। ইসরায়েলের তার ভূখণ্ড রক্ষা করার অধিকার আছে। কিন্তু দেশটির গাজায় দিনের পর দিন গোলাবর্ষণের ঘটনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেনিনগ্রাদের অবরোধের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।"
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতা করার জন্য ২০০২ সালে 'কোয়ার্টেট অন দ্য মিডল ইস্ট' গঠন করা হয়েছিল। এতে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াকে যুক্ত করা হয়েছিল।
কিন্তু বছরের পর বছর অতিবাহিত হলেও গ্রুপটি কার্যকরী তেমন কোনো ভূমিকা পালন করতে পারেনি। এই ব্যর্থতার জন্য নেবেনজিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন।
অন্যদিকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত বন্ধে স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে মস্কো। গতকাল (শুক্রবার) রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিখাইল বোগদানভ গণমাধ্যমে বলেন, "আমরা সকলের সাথে যোগাযোগ করছি। আমাদের হামাসের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সাথেও যোগাযোগ রয়েছে।"
সম্প্রতি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত শুরুর পর থেকেই বেশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া। একইসাথে চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনে মস্কোর একটি প্রতিনিধিদলের মধ্যপ্রাচ্যে সফরের সদিচ্ছা প্রকাশ করেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বোগদানভ মনে করেন, গাজা উপত্যকায় জিম্মি অবস্থায় থাকা ইসরায়েলি নাগরিকদের মুক্তির বিষয়টি 'খুব সাবধানে' এবং সহিষ্ণুতার সাথে' সমাধান করতে হবে। একইসাথে ১১ লাখ ফিলিস্তিনিকে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে সরে যাওয়ার ইসরায়েলের ঘোষণাকে 'মানবধিকারের লঙ্ঘন' বলে অভিহিত করেছেন তিনি।
আবার মধ্যপ্রাচ্যে চলমান রক্তপাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। একইসঙ্গে, গাজায় ইসরায়েল স্থল অভিযানে গেলে অনেক বেসামরিক মানুষ হতাহত হতে পারে, যা হবে 'একেবারেই অগ্রহণযোগ্য' বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
গতকাল (শুক্রবার) গাজা সিটির ১০ লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে সরে যেতে বলে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। গাজার সীমান্তজুড়ে বিপুল সংখ্যক ট্যাংক ও অন্যান্য ভারী যুদ্ধাস্ত্র সমবেত করেছে তারা।
গাজায় প্রচণ্ড অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় গত শুক্রবার কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে এক সম্মেলনে এসব কথা বলেন পুতিন।
পুতিন বলেন, "রাশিয়া গঠনমূলকভাবে সব পক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করতে প্রস্তুত। ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাত বন্ধে দুই রাষ্ট্র সমাধানের পথে এগোতে হবে। পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন হানাহানির অবসান করতে পারবে।"
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধে ক্রমেই বেড়ে চলেছে নিহতের সংখ্যা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, অবরুদ্ধ এ এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৫০০ শিশু ও ২৭৬ জন নারীসহ ১,৫৩৭ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৬,৬১২ জন আহত হয়েছে।
অন্যদিকে ইসরায়েলে এখন পর্যন্ত ১৩০০ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন ৩২০০ জন।