গাজার উত্তরাঞ্চল ছেড়ে যেতে চিকিৎসকদের অস্বীকৃতি

গাজা শহরের সমস্ত বেসামরিক নাগরিকসহ উত্তর গাজার প্রায় ১১ লাখ মানুষকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দক্ষিণে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। ধারণা করা হচ্ছে যে, শিগগিরই গাজায় স্থল আক্রমণ শুরু করতে যাচ্ছে তারা। খবর বিবিসি।
এমতবস্থায় ক্রমাগত ইসরায়েলি বিমান হামলায় বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। বহু চিকিৎসক এই দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে রোগীদের রেখে গাজার উত্তরাঞ্চল ছেড়ে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
অন্যদিকে জাতিসংঘের পক্ষে থেকে বলা হয়েছে, অল্প সময়ের নোটিশে এতো মানুষকে সরানো অসম্ভব। এই কথার সাথেই সুর মিলিয়েছে ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।
সংস্থাটির গাজা শহরের মুখপাত্র নেবাল ফরসাখও মনে করেন, মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর গাজা থেকে এত বিপুল সংখ্যক মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কোনো উপায় নেই।
নেবাল ফরসাখ বলেন, "সেক্ষেত্রে আমাদের রোগীদের কী হবে? হাসপাতালে আহত অবস্থায় বহু বয়স্ক ও শিশু রয়েছে। এমতবস্থায় বহু চিকিৎসক হাসপাতাল খালি করতে এবং রোগীদের এই অবস্থায় ছেড়ে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।"
অন্যদিকে গাজায় আল জাজিরার প্রতিবেদক জামিলেহ আবু জানুনা বলেছেন, "আল শিফা হাসপাতালের (গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল) বাইরে আমরা সারি সারি মরদেহ রাখার ভিডিও দেখতে পাচ্ছি। কারণ, ভেতরে আর রাখার জায়গা নেই। মর্গ ভরে ওঠায় দুদিন আগেই তারা হাসপাতালের চত্বরে তাবু খাটিয়ে লাশ রাখা শুরু করেছিল। এটা হৃদয়বিদারক দৃশ্য।"
নেবাল ফরসাখ আরও বলেন, "মানুষের যাবার মতো জায়গা নেই; এটাই হচ্ছে আসল কথা। পুরো এলাকা জুড়ে বোমাবাজি চলছে; অবকাঠামো এবং রাস্তাগুলি ধ্বংস হয়ে গেছে, চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এমতবস্থায় মানুষকে অন্য এলাকায় সরে যেতে বলা অবিশ্বাস্য!"
অন্যদিকে মিশরের রাজনীতিবিদ মোস্তফা বাকরি দাবি করেছেন, গাজার বেসামরিক নাগরিকদের উত্তর থেকে দক্ষিণের দিকে সরে যাওয়ার নির্দেশে কূটকৌশল রয়েছে। এতে করে বাসিন্দাদের কৌশলে মিশরে পাঠিয়ে ইসরায়েল গাজা ভূখণ্ড দখল করতে চায়।
সংসদ সদস্য মোস্তফা বাকরি মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্স (প্রাক্তন টুইটার) এ বলেন, "এইভাবে ফিলিস্তিন সম্পূর্ণ খালি হয়ে যাবে। মিশর কখনো ইসরায়েলের এই পরিকল্পনার অংশীদার হবে না। ফিলিস্তিনিদের উচিত, নিজেদের ভূমি না ছেড়ে সেখানেই থাকা। এতে করে তাদের যতই ত্যাগ স্বীকার করতে হোক না কেন।"
গাজায় পাঁচটি গভর্নরেটে প্রায় ২.৩ মিলিয়ন লোক বাস করে। এগুলো হলো- উত্তর গাজা, গাজা শহর, দেইর এল-বালাহ, খান ইউনিস ও রাফাহ।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধের ৭ম দিনে বেড়ে চলেছে নিহতের সংখ্যা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল (বৃহস্পতিবার) জানিয়েছে, অবরুদ্ধ এ এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৫০০ শিশু ও ২৭৬ জন নারীসহ ১,৫৩৭ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৬,৬১২ জন আহত হয়েছে।
অন্যদিকে ইসরায়েলে এখন পর্যন্ত ১৩০০ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন ৩২০০ জন।