'ছেলেমেয়েরা জানতে চাইছে, কোথায় যাব আমরা?' বলেছি, 'জানি না'

গাজা শহরের সমস্ত বেসামরিক নাগরিকসহ উত্তর গাজার ১১ লাখ মানুষকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দক্ষিণে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এতে করে বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গাজা থেকে আল জাজিরার কাছে ঠিক সেই অভিজ্ঞতাই বর্ণনা করেছেন সাফওয়াত আল-কাহলুত। জানিয়েছেন অঞ্চলটির বাসিন্দাদের বর্তমান দুরবস্থার কথা।
সাফওয়াত বলেন, "আমি আমার বাবা, ভাই ও বন্ধুদের কাছ থেকে প্রচুর ফোন পাচ্ছি। তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করছে, 'আমরা এখন কী করবো? কোথায় যাবো? আমাদের যাওয়ার মতো সুনির্দিষ্ট কোনো জায়গা আছে?"
অন্যদিকে ইসরায়েলের দেওয়া আল্টিমেটাম বাতিলের জোরালো আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। কেননা এতে করে পরিস্থতি আরও খারাপের দিকে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সাফওয়াত বলেন, "এটা সত্যিই অসম্ভব ব্যাপার। গতকাল রাতেও মানুষজন পানি ও খাবারের খোঁজ করছিল। এখন আবার তাদের নিজেদের বাসাবাড়ি ছেড়ে কোথায় যাবে, সেটা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। এটা আমাদের ১৯৪৮ সালের সেই ভয়াল সময়ের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। যখন ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হয়েছিল।"
ইসরায়েলের এমন ঘোষণার মাধ্যমে স্থলাভিযান শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছে বলে আন্দাজ করছে জাতিসংঘ। এদিকে জাবালিয়া শরণার্থী ক্যাম্প ছাড়াও বেইত লাহিয়া ও বেইত হানুন এলাকায় বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনির বসবাস।
সাফওয়াত জানান, বাস্তবতা চিন্তা করলে, বর্তমানে ১১ লাখ মানুষের যাতায়াত করার মতো অবস্থা গাজাতে নেই। তারা কীভাবে চলাচল করবে? গাধায় চড়ে? তাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ গাধাও নেই। গাড়িতে করে? তাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ গাড়িও নেই। যে গাড়িগুলো রয়েছে, সেগুলোতে চলাচল করার মতো তেলও নেই।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত ৬ হাজার বোমাবর্ষণের কথা জানিয়েছে। গত ছয়দিনে এসব বোমা ফেলা হয়েছে। এ ধরনের হামলা চলতে থাকলে, অত্যন্ত ঘনবসতির গাজা উপত্যকায় বিপুল প্রাণহানি হবে, এতে হাসপাতালগুলোর মর্গে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সাফওয়াত বলেন, "১০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি আতঙ্কিত, বিভ্রান্ত, এবং তাদের কাছে কোন পরিকল্পনা নেই। তারা বুঝতে পারছে না যে, কী করা উচিত। এখন আমার ছেলেমেয়েরা জানতে চাইছে, 'কোথায় যাব আমরা?' বলেছি, 'জানি না'।"
অন্যদিকে গাজায় আল জাজিরার প্রতিবেদক জামিলেহ আবু জানুনা বলেছেন, "আল শিফা হাসপাতালের (গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল) বাইরে আমরা সারি সারি মরদেহ রাখার ভিডিও দেখতে পাচ্ছি। কারণ, ভেতরে আর রাখার জায়গা নেই। মর্গ ভরে ওঠায় দুদিন আগেই তারা হাসপাতালের চত্বরে তাবু খাটিয়ে লাশ রাখা শুরু করেছিল। এটা হৃদয়বিদারক দৃশ্য।"