চাঁদে বসবাসের জন্য শক্তির উৎস তৈরি করছেন ব্যাংগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2023/09/05/_130974165_mediaitem130974164_0.jpg)
চাঁদে দীর্ঘ সময় ধরে বসবাসের জন্য একটি শক্তির উৎস তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার নেতৃত্বাধীন আর্টেমিস প্রোগ্রাম ২০৩০ সালের মধ্যেই চাঁদে ঘাঁটি গড়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
যুক্তরাজ্যের ওয়েলসের ব্যাংগর বিশ্ববিদ্যালয় চাঁদের বুকে জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করতে পারমাণবিক জ্বালানি কোষের নকশা করেছে। এগুলোর আকার হবে খুবই ছোট, পোস্তদানার মতো।
ব্যাংগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইমন মিডলবার্গ জানান, কাজটি খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল, তবে 'বেশ মজারও ছিল'।
চাঁদকে কেউ কেউ মঙ্গলগ্রহের প্রবেশপথ হিসেবে দেখেন; আধুনিক প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় অনেক মূল্যবান সম্পদ রয়েছে চাঁদে। আশা করা হচ্ছে যে, দূরের অন্যান্য গ্রহে পৌঁছানোর জন্য এটিকে একটি ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
বর্তমানে মহাকাশ প্রযুক্তি দ্রুতগতিতে অগ্রসর হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে ব্যাংগর ইউনিভার্সিটির নিউক্লিয়ার ফিউচারস ইনস্টিটিউটের গবেষণাগারের কাজ দেখার জন্য বিশেষভাবে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে।
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/09/05/_130976862_middleburgh_0.jpg)
ব্যাংগরের গবেষক দলটি জ্বালানি সংক্রান্ত উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বিশ্বে নেতৃস্থানীয়। তারা রোলস রয়েস, ইউকে স্পেস এজেন্সি এবং যুক্তরাষ্ট্রে নাসা ও লস আলামোস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ করে।
অধ্যাপক মিডলবার্গ বলেন, 'আগামী কয়েক মাসের মধ্যে' পারমাণবিক জ্বালানির পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা চালানোর আশা করছে তাদের দলটি।
চাঁদের কিছু কিছু অংশে তাপমাত্রা বিস্ময়কর পর্যায়ের নিচুতে নেমে আসে- মাইনাস ২৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়ায়, কারণ চাঁদের পৃষ্ঠকে উষ্ণ রাখার মতো বায়ুমন্ডল নেই।
চাঁদের বুকে জীবনধারণের জন্য জ্বালানি ও তাপ উৎপাদনের নতুন উপায় আবিষ্কারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে ব্যাংগর ইউনিভার্সিটি।
গবেষকরা 'ট্রাইসোফুয়েল' নামক ক্ষুদ্র পারমাণবিক জ্বালানি কোষ পরীক্ষার জন্য তাদের অংশীদারদের কাছে পাঠিয়েছেন। এই ট্রাইসোফুয়েল সেল রোলস রয়েসের তৈরি একটি মাইক্রো নিউক্লিয়ার জেনারেটর চালানোর জন্য ব্যবহার হতে পারে।
জেনারেটরটি একটি পোর্টেবল ডিভাইস, আকারে ছোট একটা গাড়ির সমান- যেটিকে রকেটের সঙ্গে সংযুক্ত করা যাবে বলে জানান অধ্যাপক মিডলবার্গ।
তবে এখন এটি পূর্ণাঙ্গভাবে পরীক্ষা করা হবে। মহাকাশযানে পরীক্ষা করার পরেই বোঝা যাবে এটি ২০৩০ সালে চাদের ঘাঁটির জন্য প্রস্তুত কিনা। মিডলবার্গ আরও বলেন, "আপনি চাইলে এগুলোকে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করতে পারেন, সর্বশক্তি দিয়ে উৎক্ষেপণ করলেও চাঁদে পৌঁছানোর পর ঠিকঠাক কাজ করবে।"
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/09/05/_130879344_whatsappimage2023-08-23at7.24.29pm.jpg)
গত ২৩ আগস্ট প্রথম কোনো দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে ভারতের চন্দ্রযান-৩। চন্দ্রযান-৩ এর এই অভিযানের একটি মূল লক্ষ্য ছিল চাঁদে পানি থেকে জমাটবাধা বরফ অনুসন্ধান করা, যা ভবিষ্যতে চাঁদে মানুষের বসতি স্থাপনের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করতে পারে।
ব্যাংগর ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশা, মাইক্রো জেনারেটরটি পৃথিবীতেও কাজে লাগতে পারে; যেমন দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চলে যখন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এছাড়াও, ড. ফিলিস মাকুরঞ্জের নেতৃত্বে রকেটে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার নিয়ে কাজ করছে। তিনি বলেন, "এটা খুবই শক্তিশালী, এটি রকেটকে বিশাল শক্তির যোগান দেবে। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি রকেটকে দূরতম গ্রহগুলোতে পৌঁছাতে সক্ষম করবে।"
ডা. মাকুরঞ্জে বলেন, নতুন প্রযুক্তিটি মঙ্গলগ্রহে যাওয়ার সময় প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পারে।
"পারমাণবিক থার্মাল প্রপালশনের সাহায্যে মঙ্গলগ্রহে পৌঁছাতে সময় লাগবে চার থেকে ছয় মাস। বর্তমান প্রযুক্তিতে লাগবে ৯ মাসের বেশি", বলেন তিনি।
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/09/05/_130974171_mediaitem130974170_0.jpg)
ভূ-রাজনীতি বিষয়ক লেখক ও সাংবাদিক টিম মার্শাল বলেছেন, জ্বালানির ক্ষেত্রে এ অগ্রগতি মানবজাতিকে চাদের দক্ষিণ মেরু জয়ের পথে আরও অগ্রসর করবে।
তিনি বলেন, "আমি এ ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী যে ২০৩০'র দশকেই চাঁদে ঘাঁটি স্থাপন সম্ভব হবে। হয়তো চীন, নাহয় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে- কেউ একজন করবেই।"
'চীন ২০২৮ সালকে লক্ষ্য করে কাজ করছে; হয়তো তারাই প্রথম হবে। তবে আমার বিশ্বাস, ২০৩০ এর দশকে দুই দেশই সেখানে ঘাঁটি গড়তে পারবে", যোগ করেন তিনি।
মার্শাল আরও বলেন, "সেখানে টাইটানিয়াম, লিথিয়াম, সিলিকন, আয়রনসহ আরও অনেক খনিজ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে- যেগুলো একবিংশ শতাব্দীর সকল প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত হয়। কী পরিমাণে রয়েছে তা এখনও অজানা... তবে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই মনে করে সেখান থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব।"
কিন্তু তিনি সতর্ক করে বলেন যে, মহাকাশের বাণিজ্যিকীকরণ হলে সবকিছু অনেক জটিল হয়ে যেতে পারে।