ইসরায়েলের বিচারিক সংস্কার: কী নিয়ে সংকট ?
সম্প্রতি ইসরায়েলে বিচারিক সংস্কারের অংশ হিসেবে বিতর্কিত একটি আইন পাশ করেছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ইসরায়েলের ডানপন্থী কোয়ালিশন সরকার। চলমান সংস্কারের এ উদ্যোগ ঘিরে দেশটি ইতিহাসের অন্যতম অভ্যন্তরীণ সংকটের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। খবর বিবিসির।
গতকাল (সোমবার) পাশ করা নতুন আইনে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতাকে সীমিত করা হয়েছে। এ আইন অনুযায়ী, 'অযৌক্তিক' মনে করে কোন সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করার সুপ্রিম কোর্টের যে ক্ষমতা এতদিন ছিল, সেটি কেড়ে নেয়া হয়েছে।
চলতি বছরের শুরুতেই বিচার বিভাগের সংস্কারের পরিকল্পনার ইস্যুতে ইসরায়েলের জনগণ সপ্তাহব্যপী বিক্ষোভ করেছিল। এবার এ আইনটি পাশের পর যেন বিক্ষোভের মাত্রা আরও বহুগুণে বেড়ে গিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ দেশটির নানা শহরে রাস্তা অবরোধ করছে।
এদিকে পার্লামেন্টে বিলটি পাসের সময়ও ভবনের বাইরে বিক্ষোভ করছিলেন ইসরায়েলি বিক্ষুব্ধ জনতা। বাইরে ফুটপাত অবরোধকারীরা ড্রাম, হুইসেল এবং এয়ার হর্ন বাজিয়ে বিক্ষোভ দেখায়।
বিক্ষোভকারীদের পুলিশ জলকামান ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেছে। এতে একজন আহত হয় এবং পুলিশ ছয়জনকে গ্রেপ্তারও করে বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম।
বিক্ষোভকারীরা বিচারিক সংস্কার আনা নতুন আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। একইসাথে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবি করেছেন।
অনেকটা অনুমিতভাবেই নেতানিয়াহুর বিরোধী পক্ষ বিক্ষোভকারীদের সমর্থন দিচ্ছে। একইসাথে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সাবেক উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা, ইনটিলিজেন্স ও সিকিউরিটি সার্ভিসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, সাবেক প্রধান বিচারপতি, বিশিষ্ট আইনজীবী ও ব্যবসায়ী নেতারাও বিক্ষোভে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
এমনকি ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর পাইলটসহ হাজার হাজার রিজার্ভ সৈন্য প্রতিরক্ষা বাহিনীতে অংশ না নেয়ার হুমকি দিয়েছেন, যা সংকটকে আরও গভীর করে তুলেছে। এ ধরনের অভূতপূর্ব ভিন্নমত দেশটির সামরিক প্রস্তুতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
পাশ করা আইনটি নিয়ে নেতানিয়াহুর বিরোধী পক্ষের দাবি, এটি বিচার বিভাগের ক্ষমতা কমিয়ে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলবে। আইনটিকে সরকারের একচেটিয়া ক্ষমতা ব্যবহারের হাতিয়াররুপে ব্যবহার করা হবে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
বিরোধী পক্ষের এ তীব্র বিরোধিতাকে তীব্র ডানপন্থী সরকার খুব একটা তোয়াক্কা করছে না। সমালোচকেরা মনে করেন, সংস্কারের এ উদ্যোগটি বরং নেতানিয়াহু ঢাল হিসেবে ব্যবহার করবেন।
কেননা বর্তমানে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আদালতে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা চলছে। যদিও তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো তিনি অস্বীকার করেছেন। একইসাথে সংস্কার কার্যক্রম সফল হলে কোনো বাধা ছাড়াই সরকার অন্য যেকোনো নতুন আইন পাশ করতে পারবে।
অন্যদিকে সংস্কারের পেছনে সরকারের যুক্তি এই যে, আইন বিভাগের কাজে বিচার বিভাগ খুব বেশি হস্তক্ষেপ করে থাকে। একইসাথে নানা উদারপন্থী ইস্যুতে বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়াও বর্তমানে বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়াটিও অগণতান্ত্রিক।
বিক্ষোভকারীরা মূলত সরকারের ক্ষমতা বনাম আদালতের ক্ষমতার মধ্যে যে ভারসাম্য থাকা উচিত, সেটি রক্ষায় সচেতন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখানেই শেষ নয়। নতুন এ আইনটির পাশাপাশি ভবিষ্যতে আরও বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে নেতানিয়াহু সরকার।
পরিকল্পনা কার্যকর হলে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সংসদ ও সরকার আরও ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে৷ অর্থাৎ ক্ষমতাকেন্দ্রের পছন্দের প্রার্থীরা বাড়তি সুবিধা পাবেন৷
অন্যদিকে সংসদে অনুমোদিত কোনো আইন তখন সুপ্রিম কোর্ট অবৈধ ঘোষণা করতে পারবে না৷ ১২০ জন সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৬১ জনের সমর্থনের ভিত্তিতেই এমন অনেক রায় বদলে দেওয়া যাবে৷
এখানে উল্লেখ্য যে, ইসরায়েলের কোনো সংবিধান না থাকায় বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টিতে কোনো আইন বৈষম্যমূলক মনে হলে সেটি বাতিল করা সম্ভব৷ এমতবস্থায় চলমান বিক্ষোভ ও আন্দোলন সামনে আরও প্রকট আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানান, পরবর্তী সংস্কারের জন্য তিনি আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত নেসেটের গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে জনসমর্থন আদায়ের চেষ্টা করবেন।
তবে বাস্তবতা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু মন্ত্রীসভার ডানপন্থী মন্ত্রীদের ওপর ব্যপকভাবে নির্ভরশীল। কেননা তাদের সমর্থন ছাড়া তার সরকার টিকে থাকতে পারবে না। আর ডানপন্থী মন্ত্রীরা বিচার বিভাগে সংস্কার আনার পক্ষে জোরালো মত দিয়েছেন।