পৃথিবীতে এসেছে 'মহাজাগতিক বার্তা', চাইলে আপনিও অর্থ উদ্ধারে অংশ নিতে পারেন
আন্তর্জাতিক
এলিয়েন যদি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তাহলে কী হবে? এ প্রশ্নের খানিকটা উত্তর পাওয়ার জন্য ভিন্নধর্মী এক পরীক্ষা চালাচ্ছে এসইটিআই ইনস্টিটিউট নামক একটি মার্কিন সংস্থা।
এ লক্ষ্যে সংস্থাটি একটি ইভেন্টের আয়োজন করেছে। এটির আওতায় মঙ্গলের কক্ষপথ থেকে পৃথিবীতে একটি বার্তা পাঠানো হয়েছে। আর এ বার্তাটি এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যা সৌরজগতের বাইরের কোনো সভ্যতা থেকে পাঠানো বার্তার অনুরূপ মনে হবে।
এসইটিআই-এর লক্ষ্য হচ্ছে পৃথিবীর বাইরে মহাজাগতিক প্রাণের অস্তিত্ব অনুসন্ধান এবং মহাবিশ্বে প্রাণের উৎপত্তি কীভাবে হলো তা গবেষণা করা।
তাদের এ মহাজাগতিক বার্তা একইসঙ্গে শৈল্পিক প্রকল্প ও কারিগরি প্রশিক্ষণের অংশ। কোনো এলিয়েন বার্তার অর্থ উদ্ধার করা, তার ব্যাখ্যা করা এবং এমন বার্তা কখনো পৃথিবীতে এলে তা মানব সভ্যতার ওপর কী প্রভাব ফেলবে — এসব বিষয়েই জানতে আগ্রহী এসইটিআই।
গত ২৪ মে এক্সোমার্স ট্রেস গ্যাস অরবিটার থেকে ওই বিশেষ বার্তাটি পাঠানো হয়েছে। এই গ্যাস অরবিটারটি ২০১৬ সালে পৃথিবী থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। এটি বর্তমানে মঙ্গলের চারদিতে পাক খাচ্ছে গ্রহটির বায়ুমণ্ডল নিয়ে নতুন তথ্য জানার উদ্দেশ্যে।
পাঠানোর পর পৃথিবী পর্যন্ত পৌঁছাতে বার্তাটির সময় লাগে ১৬ মিনিট। এরপর পৃথিবীতে অবস্থিত তিনটি অবজারভেটরি — নর্দার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যালেন টেলিস্কোপ অ্যারে, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্রিন ব্যাংক টেলিস্কোপ, ও ইতালির মেডিসিনা রেডিও অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল স্টেশন — পাঠানো বার্তাটি শনাক্ত করে।
বার্তাটি গ্রহণের পর এটিকে ইন্টারনেটে প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ এ বার্তাটির অর্থ উদ্ধার ও তার ব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ যে কারওরই রয়েছে। এটি নিয়ে আলোচনা করার জন্য ডিসকর্ডে একটি চ্যানেলও তৈরি করা হয়েছে।
এসইটিআই-এর সদস্য ড্যানিয়েলান ডে পলিস বলেন, তারা এমনিতে বার্তাটির বিষয়ে কিছু জানাবেন না। তবে মানুষজনের কাছে যদি এটির অর্থ উদ্ধার বেশি জটিল মনে হয়, তাহলে সংস্থাটি কিছু ইঙ্গিত দিয়ে সহায়তা করবে।
তিনি আরও জানান, এ বার্তাটির অর্থ উদ্ধারে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হবে, কারণ তার জন্য বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মানুষদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
২০২১ সাল থেকে 'আ সাইন ইন স্পেস' নামক এ প্রকল্পটিতে কাজ শুরু করেন ডে পলিস।
'আমি জ্যোতির্বিজ্ঞানী, নৃতাত্ত্বিক, ও অন্যান্য বিজ্ঞানীর সঙ্গে কাজ করেছি। বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের মানুষ আমাদের সঙ্গে কাজ করেছেন,' বলেন তিনি।
প্রকল্পটিতে বিভিন্ন বিষয়ের একাধিক শিল্পীও কাজ করেছেন বলে জানান তিনি।
এ দলটি কয়েক মাস ধরে মহাজাগতিক বার্তা কী হতে পারে, তা নিয়ে কাজ করেন। এরপর ধীরে ধীরে দলটি ছোট করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত মাত্র তিনজনের চূড়ান্ত দলে পরিণত হয় এটি।
'কারণ বার্তাটির আধেয় যেন বেশি মানুষ জানতে না পারে, সে ব্যাপারটি আমাদেরকে গুরুত্বের সঙ্গে খেয়াল রাখতে হয়েছিল,' বলেন ডে পলিস।
বার্তাটি আকারের দিক থেকে মাত্র কয়েক কিলোবাইট। তবে মঙ্গল থেকে সম্প্রচারের সময় এটির সঙ্গে আরও অনেক অপরিশোধিত তথ্য (র ডেটা) ছিল।
এসব র ডেটার মধ্যে ছিল ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ, টেলিমেট্রি তথ্য ও মিথ্যা তথ্য। এসব থেকে মূল বার্তাটি আলাদা করার প্রথম ধাপটির জন্য বেশ কারিগরি জ্ঞান প্রয়োজন বলে জানান ডে পলিস।
'কিন্তু এরপর সবাই এ বার্তার সাংস্কৃতিক ব্যাখ্যার কাজে অংশ নিতে পারবেন, এবং সেটাই সবচেয়ে রোমাঞ্চকর কাজ,' বলেন তিনি।
তবে মহাকাশে বিভিন্ন বার্তা আদানপ্রদানের কাজটি খুব একটা সহজ নয়। নাসা বা ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার তাদের মহাকাশযানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সুনির্দিষ্ট বেশকিছু যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে।
এসইটিআই-কে এ বার্তা পৃথিবীতে পাঠানোর জন্য কারিগরিভাবে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল বলে জানান সংস্থাটির একজন ডেটা বিশ্লেষক ওয়ায়েল ফারাহ।
'মহাজাগতিক কোনো বার্তা পৃথিবীতে আসার পর সেটি যে আদতেই এলিয়েন সভ্যতা থেকে পাঠানো বার্তা, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য বার্তাটি মানবনির্মিত কোনো মহাকাশযান থেকে যে আসেনি তা আমাদেরকে পরখ করে দেখতে হয়,' বলেন ফারাহ।
'আরেকটি বিষয়ও দেখতে হয়। সেটি হলো, ওই বার্তাটি যেন একাধিক টেলিস্কোপ হুবহু একইভাবে শনাক্ত করতে পারে। সেজন্যই বর্তমান পরীক্ষায় একটির বদলে তিনটি টেলিস্কোপ দিয়ে বার্তাটি শনাক্ত করা হয়েছে,' বলেন তিনি।
এসইটিআই ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এটির লক্ষ্য মহাবিশ্বের অন্য কোনো সভ্যতা থেকে পাঠানো কোনো বার্তা শনাক্ত করা। যদিও এসইটিআই বা এর মতো অন্য কোনে সংস্থা এখনো কোনো বুদ্ধিমান এলিয়েনের পৃথিবীতে কোনো বার্তা পাঠানোর কথা জানাতে পারেনি।
Comments
While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.