টুইটার কি সত্যিই বন্ধ হতে চলেছে?
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম টুইটারের মালিকানা পরিবর্তনের পর থেকেই নিত্যনতুন শঙ্কার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন এর ব্যবহারকারীরা। কখনও নতুন নিয়মের বেড়াজালে, আবার কখনও বিনা নোটিশে ছাঁটাইয়ের সম্মুখীন হচ্ছেন সংস্থাটির কর্মীরা। বিবিসি অবলম্বনে।
ব্যবহারকারীদের ভ্যারিফাইড প্রোফাইলের জন্য সাবস্ক্রিশন ফি নির্ধারণের পাশাপাশি, কিছুদিন আগেই একসঙ্গে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মী ছাঁটাই করে সংস্থাটি। এছাড়া, কাজের নিয়মেও কঠোরতা এনেছেন সংস্থাটির নতুন মালিক ইলন মাস্ক। দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, হোম অফিস বাতিলসহ নানান বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন তিনি কর্মক্ষেত্রে। এতে অনেকেই অতিষ্ট হয়ে ছাড়ছেন টুইটার। কর্মীরা খুঁজছেন অন্য কর্মসংস্থান, আর ব্যবহারকারীরা অ্যাকাউন্ট খুলছেন টুইটারের বিকল্প সাইটে।
তবে, কর্মী ছাঁটাইয়ের কিছু সময় পরেই আবার ছাঁটাইকৃতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে কাজে ফিরে আসার অনুরোধ জানিয়েছিল টুইটার। হঠাৎ এতসব পরিবর্তনের ধাক্কায় বর্তমানে বন্ধ রয়েছে টুইটারের অফিস। আগামী সোমবার (২১ নভেম্বর) অফিস খোলা হবে বলে জানানো হয়েছে কর্মীদের। সব মিলিয়ে নেটিজেনদের কাছে এখন অনেকটা মজার বিষয়ে পরিণত হয়েছে ইলন মাস্কের টুইটার। এমনকি, নিজের কর্মকাণ্ড নিয়ে নিজেও টুইটারে মজা করে চলেছেন মাস্ক।
সম্প্রতি টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হ্যাশট্যাগ 'রিপটুইটার' লিখতে দেখা যাচ্ছে ব্যবহারকারীদের। অনেকেই সাইটটি থেকে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ডাউনলোড করে নিচ্ছেন, অ্যাকাউন্ট খুলছেন টুইটারের বিকল্প সাইটে, গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা কর্মীরাও স্বেচ্ছায় সংস্থা ছাড়ছেন বা তাদেরকে ছাঁটাই করা হচ্ছে। আর এতে শঙ্কা তৈরি হয়েছে, আসলেই কি বন্ধ হতে চলেছে টুইটার?
সম্প্রতি বিবিসির এক প্রতিবেদনে টুইটারের পরিণতির বিষয়ে দুটি সম্ভাব্য চিত্র তুলে ধরা হয়েছে-
হ্যাক হতে পারে টুইটার?
টুইটারে প্রথম এবং সবচেয়ে সুস্পষ্ট যে বিপর্যয়টি ঘটতে পারে তা হলো ওয়েবসাইট হ্যাক।
বিবিসিসহ অন্যান্য বড়মাপের ওয়েবসাইটগুলোর মতোই একটি টুইটার। নানান ধরনের বিশৃঙ্খলা, এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে হ্যাক হতে পারে এই ওয়েবসাইট। বিশ্ব নেতা, রাজনীতিবিদ এবং সেলিব্রিটিদের প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত টুইটার অ্যাকাউন্ট রয়েছে; লক্ষ লক্ষ অনুসরণকারী রয়েছে এসব অ্যাকাউন্টের। এগুলো হ্যাক করে বিশৃঙ্খলা চালানোর সম্ভাবনাকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আর মিথ্যা কেলেঙ্কারি যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ঝড়ের গতিতে ছড়ায় তা আমরা আগেও দেখেছি।
একাবিংশ শতকে সাইবার-নিরাপত্তা যেকোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতিদিনের কার্যক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গেলো সপ্তাহে টুইটারের সাইবার-নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান, লিয়া কিসনার, টুইটার ছেড়েছেন। তাকে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল কিনা তা জানা যায়নি। যেহেতু এই মুহূর্তে টুইটারের অফিস বন্ধ এবং সংস্থাটির সঙ্গে যোগাযোগের কোনো উপায় নেই, তাই বিবিসি এ ব্যাপারে কারও কাছ থেকে নিশ্চিত হতে পারেনি।
হতে পারে টুইটারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ শক্তিশালী। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠানে এ ব্যবস্থা যতই শক্তিশালী হোক না কেনো, এর রক্ষাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজন নিয়মিত তত্ত্বাবধান।
নিজের মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপের কথা চিন্তা করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। গ্যাজেটস বা ডিভাইসগুলোকে সচল রাখতে নিয়মিত নিরাপত্তা আপডেট ইনস্টল করতে হয়। নাহলে নানান ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে পুরনো ডিভাইসে। ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থাটিও ঠিক একইভাবে কাজ করে।
সার্ভারে হুমকি
দ্বিতীয় সম্ভাব্য বিপর্যয়টি হল, টুইটারের সার্ভার যদি ছিটকে যায়। সংস্থাটির ওপর ক্ষোভে পড়ে যে কেউ এই কাণ্ড ঘটাতে পারে, অথবা যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেও হতে পারে এমনটি।
সার্ভার ছাড়া টুইটারের অস্তিত্ব থাকবে না। কেবল টুইটার কেনো, ফেসবুক, ইন্টাগ্রামও থাকবে না যদি এধরনের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর সার্ভারে ঘটে।
শক্তিশালী কম্পিউটারের মাধ্যমে গঠিত সার্ভার প্ল্যাটফর্মগুলোর শারীরিক অবকাঠামোর মতোই কাজ করে। ডেটা সেন্টার হিসেবে ভূমিকা রাখে এটি। অনলাইন ব্যবসার সমস্ত কার্যক্রমের ওয়্যারহাউজ হিসেবে কাজ করে সার্ভার। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, যেকোনো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সার্ভার কতোটা গুরুত্বপূর্ণ।
এই সার্ভারগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। নয়তো এখানেও ঘটতে পারে বিপর্যয়।
আরেকটি যা ঘটতে পারে টুইটারে তা হলো ইলন মাস্কের 'ইচ্ছা'। এখন পর্যন্ত অবশ্য এটিই ঘটছে সংস্থটিতে। অর্থাৎ, নতুন মালিক ইলন মাস্ক যা চাইবেন, তাই ঘটবে টুইটারে। তিনি চাইলে সংস্থাটিকে দেউলিয়াও ঘোষণা করতে পারেন, এতে বন্ধ হয়ে যেতে পারে টুইটার।
নিজের খামখেয়ালী সিদ্ধান্তের জন্য বেশ পরিচিতি রয়েছে মাস্কের। শুরু থেকেই টুইটার কেনার ব্যাপারে হুটহাট নিজের সিদ্ধান্ত অদলবদল করেছেন তিনি। তাই টুইটারের ভাগ্য আসলে কী ঘটতে চলেছে, তা এখনি নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।