হিজাববিরোধী আন্দোলন: তেহরানের ফোয়ারা জুড়ে 'রক্তরাঙা পানি'  

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
09 October, 2022, 01:35 pm
Last modified: 09 October, 2022, 03:25 pm
অজ্ঞাত শিল্পীর ফোয়ারা রাঙিয়ে তোলার এই পদক্ষেপকে আখ্যায়িত করা হচ্ছে 'প্রতিবাদের শিল্পকর্ম' হিসেবে।

পুলিশি হেফাজতে তরুণী মাহসা আমিনের মৃত্যুর পর থেকে ফুঁসে উঠেছে ইরান। বিক্ষোভের আঁচ লেগেছে পুরো দেশে। এরই মধ্যে এবার রাজধানী তেহরানের একাধিক ফোয়ারার পানি 'রক্ত লাল' করে তুলেছেন দেশটির অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি। শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া সে ছবি দেখে মনে হয়েছে যেন ফোয়ারা ভেসে গেছে রক্তরাঙা পানিতে!       

ইরানি টুইটার অ্যাকাউন্ট '১৫০০তাসভির' প্রকাশ করেছে রঙিন ফোয়ারার ছবিগুলো। শুরু থেকেই ইরানের হিজাববিরোধী বিক্ষোভে নজর ছিল অ্যাকাউন্টটির। অজ্ঞাত শিল্পীর ফোয়ারা রাঙিয়ে তোলার এই পদক্ষেপকে তারা আখ্যায়িত করেছে প্রতিবাদের শিল্পকর্ম হিসেবে। ছবির ক্যাপশনে লেখা 'রক্তে ভেসে যাচ্ছে তেহরান'।  

রঞ্জিত ফোয়ারা দুটোর অবস্থান ইরানের সাংস্কৃতিকভাবে উল্লেখযোগ্য দুই স্থানে। একটি আছে সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন সিটি থিয়েটারের কাছে দানেশজু পার্কে; আরেকটি ইরানিয়ান আর্টিস্ট ফোরামের সামনে, যা সাবেক রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ খাতামির শাসনামলে নির্মিত হয়।  

গেল সেপ্টেম্বরের ১৩ তারিখ দেশের হিজাব আইন ভাঙার দায়ে ইরানের নৈতিকতা বিষয়ক পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন ২২ বছরের মাহসা আমিনি। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের হেফাজতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ১৬ সেপ্টেম্বর সেখানেই তার মৃত্যু হয়। কর্তৃপক্ষের দাবি, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আমিনি। অন্যদিকে পরিবারের দাবি, কখনোই হৃদরোগ ছিল না তার।

মাহসার মৃত্যুর প্রতিবাদে ইরানজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ। এ বিক্ষোভে নারীরা নিজেদের মাথার হিজাব খুলে সংহতি প্রকাশ করেন। নারী, পুরুষ নির্বিশেষে বহু মানুষ বর্তমানে ইরানের এই বিক্ষোভে নিজেদের সমর্থন জানিয়ে আসছেন।     

ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস ডার্টমাউথের শিল্প বিষয়ক ইতিহাসবিদ পামেলা কারিমি সম্প্রতি 'অলটারনেটিভ ইরান' নামে ইরানের সমসাময়িক শিল্প সম্পর্কে একটি বই প্রকাশ করেছেন। তার মতে, শিল্পীরা এই প্রতিবাদ আন্দোলনের কেন্দ্রে রয়েছেন।

ইরানের ব্যর্থ প্রগতিশীল আন্দোলনের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, "দুর্ভাগ্যবশত গত ৪০ বছরে তারা এমন কোনো রাজনৈতিক দল তৈরি করতে পারেনি যা সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে।"

"ফলত সরকারি সিস্টেমের সাথে নিরানন্দ যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে শিল্প মানুষের কাছে একটি হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।"

"কিন্তু এবারের প্রতিবাদের সময় যে শিল্পের আবির্ভাব হয়েছে- উদাহরণস্বরূপ নারীদের চুল কেটে ফেলার যেসব অলংকরণ দেখানো হয়েছে- সেসব স্পষ্টতার জন্য টিকে গেছে।"

কারিমি বলেন, "ইরানি শিল্প খুবই জটিল। আপনি এটিকে নিছক সাদা-কালো বা সহজ উপায়ে বর্ণনা করতে পারবেন না।"

"ইরানি শিল্পীদের সাথে কথা বললে বুঝবেন তারা কখনোই সরাসরি আপনাকে নিজেদের রাজনৈতিক মতাদর্শ বুঝতে দেবে না। আপনাকেই অনেক কিছু বুঝে নিতে হবে।" 

"বিক্ষোভ নিয়ে এখন আমরা ইন্টারনেটে যে সমস্ত ছবি দেখতে পাচ্ছি সেগুলো সাহসী, বিপ্লবী এবং স্পষ্টভাষী। এ ধরনের শিল্প এই আন্দোলনের জন্য অনন্য", যোগ করেন কারিমি।

  • সূত্র- ওয়াশিংটন পোস্ট 

 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.