কেন ভারতে নারী ও মুসলিমরা কম উপার্জন করে

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
15 September, 2022, 08:15 pm
Last modified: 16 September, 2022, 11:01 am
ভারতে নারীদের তুলনায় পুরুষরা মাসে গড়ে ৪ হাজার রুপি বেশি আয় করে। মুসলমানদের চেয়ে অমুসলিমরা মাসে গড়ে ৭ হাজার রুপি বেশি আয় করে। আর জাতিগত ব্যবস্থার নিচের স্তরে থাকা গোষ্ঠী ও উপজাতির মানুষ অন্যদের তুলনায় মাসে গড়ে ৫ হাজার রুপি কম উপার্জন করে।

নতুন এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ভারতীয় নারীরা চাকরির বাজারে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এছাড়া সমান যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও নারীরা পুরুষদের তুলনায় কম বেতন পান।

অক্সফাম ইন্ডিয়াস ডিসক্রিমিনেশন রিপোর্ট ২০২২–এ নারীদের কম মজুরির জন্য 'সামাজিক ও নিয়োগদাতাদের কুসংস্কার'কে দায়ী করা হয়েছে।

অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও চাকরির বাজারে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বলে অক্সফামের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

এর মধ্যে বর্ণপ্রথার সবচেয়ে নিচের স্তরের উপজাতি ও মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যরাও আছে।

অক্সফাম ইন্ডিয়ার সিইও অমিতাভ বেহার বলেন, সমান যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পরিচয় বা সামাজিক অবস্থানের কারণে কারও প্রতি ভিন্ন আচরণ করাটাই শ্রমবাজারের বৈষম্য।

তিনি আরও বলেন, 'শুধু শিক্ষা বা কাজের অভিজ্ঞতার কারণে নয়, সামাজিকতার কারণেও নারী ও সমাজের অন্যান্য শ্রেণির মানুষ বৈষম্যের শিকার হয়।'

অক্সফামের গবেষকরা ২০০৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর চাকরি, বেতন, স্বাস্থ্য ও কৃষি ঋণ পাওয়া সম্পর্কিত সরকারি তথ্য খতিয়ে দেখেছেন। তারপর পরিসংখ্যানগত মডেল ব্যবহার করে বৈষম্যের পরিমাণ নির্ণয় করেছেন।

গবেষকরা দেখেছেন, এই সময়কালে নারীদের তুলনায় পুরুষরা মাসে গড়ে ৪ হাজার রুপি বেশি আয় করে। মুসলমানদের চেয়ে অমুসলিমরা মাসে গড়ে ৭ হাজার রুপি বেশি আয় করে এবং জাতিগত ব্যবস্থার নিচের স্তরে থাকা গোষ্ঠী ও উপজাতির মানুষ অন্যদের তুলনায় মাসে গড়ে ৫ হাজার রুপি কম উপার্জন করে।

নারীদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণের জন্য ভারতকে প্রায়ই ঘরে-বাইরে সমালোচনার শিকার হয়। দেশটিতে বছরে কয়েক লক্ষাধিক কন্যাশিশুর ভ্রূণ গর্ভপাত করা হয়। ফলে ভারতে নারী ও পুরুষের অনুপাতে ভয়ানক ভারসাম্যহীনতা বিরাজ করছে। 

এছাড়া জন্মের পর থেকেই ভারতের বেশিরভাগ নারী বৈষম্য, কুসংস্কার, সহিংসতা ও অবহেলার শিকার হয়। সারাজীবন এরকম বৈরিতার মোকাবিলা করতে হয় দেশটির সিংহভাগ নারীকে। 

এছাড়া ভারতের শ্রমশক্তিতে যে লিঙ্গবৈষম্য রয়েছে, তা-ও সুবিদিত। দেশটির সব পর্যায়ের শ্রমশক্তিতেই নারীর সংখ্যা অনেক কম।

বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীরা কম বেতন পায়। ছবি: সংগৃহীত

ভারত সরকারের তথ্য অনুসারে, ২০২০-২১ সালে মোট শ্রমশক্তির মাত্র ২৫ দশমিক ১ শতাংশ ছিল নারী। এই হার ব্রাজিল, রাশিয়া, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো অন্যান্য দেশের তুলনায় খুব একটা কম নয়।

শুধু তা-ই নয়, ভারতের শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ ব্যাপকভাবে কমে গেছে। ২০০৪-০৫ সালে ভারতের শ্রমশক্তিতে নারীর অংশ ছিল ৪২ দশমিক ৭ শতাংশ, বর্তমানে যা কমতে কমতে ২৫ দশমিক ১ শতাংশে এসে ঠেকেছে।

অক্সফাম বলছে, এটি বড় উদ্বেগের কারণ। কেননা এমন এক সময় শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ কমছে, যখন ভারত দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মহামারির কারণে গত দুই বছরে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা আরও কমতে পারে—কারণ লকডাউনের সময় কর্মসংস্থান কমে যাওয়ায় অনেক নারী শ্রমবাজার থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছেন।

প্রতিবেদনটি বলছে, শ্রমবাজারে লিঙ্গ বৈষম্যের আরেকটি বড় কারণ হতে পারে শিক্ষিত নারীরা ঘর সামলানোর দায়িত্ব ও সামাজিক অবস্থানের কারণে চাকরি করতে করতে চান না।

এতে আরও বলা  হয়, পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার কারণেই এমন এক বিশাল নারীগোষ্ঠী গড়ে উঠেছে যারা পুরুষদের সমান বা বেশি যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকরি করে না। সময়ের পরিক্রমায় এ পরিস্থিতিতে কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি।

অক্সফামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারীরা ছাড়াও 'দলিত (আগে অচ্ছুৎ নামে পরিচিত ছিল), উপজাতি ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুর (যেমন, মুসলমান) মতো ঐতিহাসিকভাবে নিপীড়িত গোষ্ঠীগুলো চাকরি, জীবিকা ও কৃষিঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রেও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।

এতে আরও বলা হয়, 'করোনা মহামারির প্রথম মাসগুলোতে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি—১৭ শতাংশ—বাড়ে  মুসলমানদের মধ্যে।'

অমিতাভ বেহার বলেন, 'ভারতীয় সমাজে বৈষম্যের কারণ কেবল সামাজিক বা নৈতিক নয়, বরং অর্থনৈতিকও। বৈষম্যের এই হার সামাজিক অবনতির দিকে ইঙ্গিত করে।'

ভারতকে বৈষম্যমুক্ত করার জন্য সরকার, রাজনৈতিক দল, নীতিনির্ধারক ও নাগরিক সমাজকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।


  • সূত্র: বিবিসি

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.