ইউয়ান কি ক্ষমতাধর ডলারের বিকল্প হতে পারবে?

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক 
17 September, 2022, 10:25 am
Last modified: 17 September, 2022, 02:31 pm
গবেষকরা বলছেন, ১৯৫০-এর দশকে ডলারের যে অবস্থান ছিল, বর্তমানে ইউয়ান সেই অবস্থানে রয়েছে। সেই হিসেবে, ডলারের জায়গায় উঠে আসা- ইউয়ানের জন্য আর কয়েক দশকের ব্যাপার মাত্র।

চীনের অর্থনীতি অধিকাংশ সূচক অনুসারেই বেশ শক্তিশালী। দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ১৭.৭ ট্রিলিয়ন ডলার যা যুক্তরাষ্ট্রের পরেই বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরে চীনই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক লেনদেনকারী দেশ।

তবে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক লেনদেনের মাত্র ৩ শতাংশ চীনা মুদ্রায় হয়, যেখানে মার্কিন ডলারে মোট লেনদেনের ৮৭ শতাংশ হয়ে থাকে। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও দেশটি বৈশ্বিক মুদ্রা প্রবাহে তেমন একটা অবস্থান গড়ে তুলতে পারেনি। তবে বিশ্লেষকদের মতে, ধীরে ধীরে ইউয়ানের অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে।

বৈশ্বিক রিজার্ভ মুদ্রায় ডলারকে সরিয়ে জায়গা করে নিতে- চীনের মাল্টি-ট্রিলিয়ন ডলারের কয়েক যুগব্যাপী পরিকল্পনা কেমন- তা দেখে নেওয়া যাক।

কোনো মুদ্রা কীভাবে রিজার্ভের মর্যাদা পায়?

রিজার্ভ মুদ্রার স্বীকৃতি আসলে কোনো আনুষ্ঠানিক বিষয় নয়। রিজার্ভ মুদ্রা হয়ে ওঠা জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে কোনো কনটেস্ট জেতার মতোই।

বিশ্ববাজারে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত মুদ্রাই ডি-ফ্যাক্টো রিজার্ভ মুদ্রা হয়ে ওঠে। আর এই 'জনপ্রিয়তা' মূলত মুদ্রার স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে যা কোনো নির্দিষ্ট দেশের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেননা কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাধারণত এই মুদ্রাতেই তাদের রিজার্ভ মজুদ রাখে। আর তাই বিশ্ববাজারে সবচেয়ে আধিপত্যশীল মুদ্রাই রিজার্ভ মুদ্রার মর্যাদা লাভ করে।

১৪৫০ সালের পর থেকে রিজার্ভ মুদ্রার ইতিহাসকে ছয়টি সময়কালে ভাগ করা যায়। স্পেন শক্তিশালী হয়ে ওঠার পর ১৫৩০ সাল পর্যন্ত পর্তুগাল বৈশ্বিক রিজার্ভে আধিপত্যশীল ছিল। ১৭ ও ১৮ শতকের অধিকাংশ সময়জুড়ে বিশ্ব বাণিজ্যে প্রভাব বিস্তার করে নেদারল্যান্ডস ও ফ্রান্সের মুদ্রা। কিন্তু, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের উত্থানের পর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়া অবধি পাউন্ড স্টারলিং ছিল রিজার্ভ মুদ্রা।

তবে আমেরিকা ব্রিটেনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পরই পাউন্ডের জায়গা দখল করে নেয় ডলার। ২০০৮ সালের পর থেকে বৈশ্বিক লেনদেনের ৭৫ শতাংশের বেশি ইউএস ডলারে সম্পন্ন হয়। এছাড়া বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের ৬০ শতাংশেরও বেশি ডলারে নেওয়া হয়ে থাকে। বৈশ্বিক কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর রিজার্ভের ৫৯ শতাংশ জুড়েই রয়েছে ডলার।

সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববাজার ও অন্যান্য খাতে ডলারের অবস্থান টলতে শুরু করলেও- অন্য কোনো মুদ্রাই এর কাছাকাছি পর্যায়ে আসতে পারেনি। চীনা মুদ্রাও নিশ্চিতভাবেই খুব বিশ্বস্ত বিকল্প নয়। তবে ভূ-রাজনীতি ও সামষ্টিক অর্থনীতির হিসাবে ইউয়ানের আধিপত্য ক্রমশ বাড়ছে ।

চীনের পরিকল্পনা

চলতি বছর চীনের নেতারা ইউয়ানকে রিজার্ভ মুদ্রার পর্যায়ে উন্নীত করতে স্পষ্ট উদ্যোগ নিয়েছেন। চীনের অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক প্রবাহ এধরনের পরিকল্পনাকে সমর্থন করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী। তবে এখন চীনকে অন্যান্য বিদেশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে রিজার্ভ হিসেবে ইউয়ান সংরক্ষণের জন্য রাজি করাতে হবে।

জুলাই মাসে পিপল'স ব্যাংক অব চায়না (পিবিওসি) পাঁচটি দেশ ও ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটলম্যান্টস (বিআইএস)-এর সঙ্গে কোলাবরেশন ঘোষণা করে। চীনের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়া, মালেশিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর এবং চিলি প্রত্যেকে ১৫ বিলিয়ন ইউয়ানের (২.২ বিলিয়ন ডলার) তারল্য চুক্তি করে।

এদিকে চীনা ইউয়ান ইতোমধ্যেই রাশিয়ার ডি-ফ্যাক্টো রিজার্ভ মুদ্রায় পরিণত হয়েছে। ইউক্রেন আক্রমণের পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে রাশিয়া চীনের মুখাপেক্ষী হয়। বর্তমানে রাশিয়ার ১৭ শতাংশ ফরেন রিজার্ভই ইউয়ানে। মস্কো এক্সচেঞ্জেও ইউয়ান এখন তৃতীয় চাহিদাসম্পন্ন মুদ্রা।

বৈশ্বিক প্রভাব

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালোফোর্নিয়া বার্কলে-র ব্যারি আইচেনগ্রিন এবং ফ্রান্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্যামিলে ম্যাকায়ারের মতো অর্থনীতিবিদরা রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ইউয়ানের সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করেছেন। গবেষকরা বলেন, ডলারকে খুব সহজে বা দ্রুত প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে না। তবে তারা দেখতে পান যে, চীনের সঙ্গে যেসব দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক দৃঢ় হচ্ছে তাদের রিজার্ভ মুদ্রায় ইউয়ানের ব্যবহার বাড়ছে।

'বহুমেরু'-বিশিষ্ট এক বিশ্বে ইউয়ানের বাড়তে থাকা প্রভাব বিশ্বব্যাপী একে ডলারের বিকল্প করে তুলতে পারে। অন্যভাবে বললে, চীন ধীরে ধীরে ডলারের প্রভাব কমিয়ে আনতে পারে। গবেষকরা আরও বলেন, ১৯৫০-এর দশকে ডলারের যে অবস্থান ছিল, বর্তমানে ইউয়ান সেই অবস্থানে রয়েছে। সেই হিসেবে ডলারের জায়গায় উঠে আসা- ইউয়ানের জন্য আর কয়েক দশকের ব্যাপার মাত্র।

ভবিষ্যদ্বাণী অনু্সরণ করলে, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীরা ভালো মুনাফা আসা চীনা শেয়ার ও অন্যান্য ইউয়াননির্ভর খাতে সীমিত হলেও বিনিয়োগ করতে পারেন।


  • সূত্র: ইয়াহু নিউজ 

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.