মদে আগ্রহ নেই! তরুণদের আকৃষ্ট করতে তাই অ্যালকোহলহীন পানীয়ের বিক্রি বাড়াচ্ছে জাপান
কলেজ শিক্ষার্থী মানাকা ওকামোতোর বয়স মাত্র ২২। জাপানে সচরাচর এ বয়সীদের যেভাবে অ্যালকোহলে আসক্ত হওয়ার কথা, ওকামোতো সেদিক থেকে বেশ ব্যতিক্রম। বিশেষ করে, সকালে কোন প্রগ্রাম থাকলে ওকামোতো আগের রাতে কোনভাবেই মদ পান করেন না।
আসলে শুধু ওকামোতোর মধ্যেই নয়, সমগ্র জাপানেই কমবয়সীদের মাঝে মদ পানের অভ্যাস হ্রাস পেয়েছে।
স্বল্পমাত্রার অথবা পুরোপুরি অ্যালকোহলবিহীন পানীয়ের জনপ্রিয়তা বিশ্বজুড়েই বেড়ে চলেছে। তাছাড়া মহামারিকালীন সময়ে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পায়, ফলে মদ্যপানের হার তারা কমিয়ে আনে।
ইন্টারন্যাশনাল ওয়াইন এন্ড স্পিরিট রিসার্চের তথ্যমতে, ২০২১ সালে অ্যালকোহলবিহীন পানীয়ের বৈশ্বিক বাজার দর দাঁড়ায় ১০ বিলিয়ন ডলারে, যা ২০১৮ সালে ছিল ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে।
তবে শুধু জাপানেই নন-অ্যালকোহলিক ড্রিংক বা অ্যালকোহলবিহীন পানীয় গ্রহণের মাত্রা লক্ষ্যণীয়ভাবে বেড়েছে। দেশটির আগের প্রজন্মগুলোর তুলনায় এখনকার তরুণেরা অনেক কম মদ পান করছে।
জাপানের সরকারি জরিপে উঠে এসেছে, ২০১৯ সালে নিয়মিত মদ্যপান করেছে দেশটির ৭.৮% তরুণ; অথচ ২০ বছর আগে ১৯৯৯ সালে এই হার ছিল ২০.৩%। স্পষ্টত, জাপানের এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা তাদের মা-বাবার প্রজন্মের চেয়েও কম মদ পান করছে।
এতে জাপানের অ্যালকোহলের বাজার ক্রমশ ছোট হচ্ছে, কমছে রাজস্ব আয়। তরুণ প্রজন্মকে মদ পানে উৎসাহিত করতে জুলাইতে জাপানের ন্যাশনাল ট্যাক্স এজেন্সি জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা আর ক্যাম্পেইনও চালু করে।
প্রবৃদ্ধি বাড়াতে জাপানের প্রধান পানীয় নির্মাতাদের নজর এখন তাই দেশের বাইরে। শীর্ষ বিয়ার উৎপাদক কোম্পানি আসাহি গ্রুপ হোল্ডিংসের প্রধান রয়টার্সকে জানান, তিনি উত্তর আমেরিকাকে মূল বাজার হিসাবে দেখেছেন। সানতোরি হোল্ডিংস গ্রুপ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান তাদের ক্যানড ককটেল ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে চাইছে।
অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন কোম্পানি নন-ড্রিংকারদের কাছে বারের অভিজ্ঞতা কীভাবে আরেকটু উন্নত করে তোলা যায়, সে ব্যবস্থা নিতে তৎপর।
কিছুদিন আগেই যেমন টোকিওর সবচেয়ে উঁচু ভবনগুলোর একটির শেডে 'বিয়ার গার্ডেনে' বসে আড্ডা দিচ্ছিল একদল তরুণী।
বিয়ার গার্ডেন জাপানের একটি গ্রীষ্মকালীন ঐতিহ্য। কিন্তু চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, এবার এই গার্ডেনে কোনো বিয়ারই ছিল না! পরিবর্তে মকটেল এবং অ্যালকোহলবিহীন ওয়াইনের ব্যবস্থা ছিল।
আয়োজক প্রতিষ্ঠান সানতোরির জেনারেল ম্যানেজার মাসাকো কুরা বলেন, 'ভোক্তারা শুধু অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় উপভোগ করতে আসেন না। বরং আমাদের মনে হয় যে, পান করার সময় যে যোগাযোগ তৈরি হয় সেটিই মানুষের কাছে বেশি মূল্যবান। তারা যেখানে বসে পান করছেন সেখানকার পরিবেশ উপভোগ করতে চান।"
প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি কিরিন হোল্ডিংসও বর্তমানে অ্যালকোহলবিহীন ওয়াইন, ককটেল এবং বিয়ার অফার করছে। তারা জানিয়েছে, নন-অ্যালকোহলিক বিয়ারের বিক্রি তিন মাসে দ্বিগুণ বেড়েছে।
এদিকে শিবুয়া শহরে সুমাদরি বার নামে নতুন একটি দোকান খোলা হয়েছে যারা চিনিযুক্ত ককটেল বিক্রি করছে যেখানে কোন অ্যালকোহল থাকবেনা, থাকলেও হয়তো ৩% শতাংশ মাত্র। এর প্রধান নির্বাহী মিজুহো কাজিউরার ভাষ্যে, এই বার এমন পরিবেশের নিশ্চয়তা দেয় যেখানে সবাই একসাথে বসে পান করতে পারবে।
কাজিউরা বলেন, "যারা কখনো মদ সেবন করেন না, তারাও যেন এখানে এসে সবার সাথে বসে পান করতে পারেন, সে উদ্দেশ্যেই এই বার খোলা হয়েছে। অন্য রেস্তরাঁ আর বারগুলোও যদি আমাদের উদ্দেশ্য বুঝতে পারে, তাহলে আমি মনে করি তারাও গ্রাহক টানতে সক্ষম হবেন।"
- সূত্র- রয়টার্স